জীবে প্রেম: হাওড়ায় খেতে দেওয়া হয়েছে কুকুরদের। নিজস্ব চিত্র
বড় ডেকচিতে একসঙ্গে ফুটছে চাল-ডাল। তিন জন রাঁধুনি মিলে তাতে সামান্য হলুদ আর কয়েক কেজি মাংস কিংবা সয়াবিন মিশিয়ে তৈরি করছেন খিচুড়ি। তার পরে বালতিতে ভরে কয়েকটি গাড়িতে করে সেই খিচুড়ি পৌঁছে যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে।
লকডাউনে পথকুকুর ও বেড়ালদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য এমনই কেন্দ্রীয় রান্নাঘর (সেন্ট্রাল কিচেন) তৈরি করেছে হাওড়া সিটি পুলিশ। পশুপ্রেমী একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে প্রতিদিন প্রায় ১৩০০ কুকুর ও বেড়ালকে খাওয়ানো হচ্ছে। হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার কুণাল আগরওয়াল বলেন, ‘‘লকডাউনে ঘরবন্দি মানুষের কাছে প্রয়োজনে যেমন খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, তেমনই রাস্তার কুকুর ও বেড়ালদের কথা চিন্তা করে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ১০ এপ্রিল থেকে চালু হয়েছে ‘ফিল আ বোল, ফিড আ সোল’ নামে প্রকল্পটি। লকডাউনের আগে বাজার, রেস্তরাঁ, মুদির দোকান থেকে খাবার পেত রাস্তার কুকুর ও বেড়ালেরা। এমনকি, অনেক মানুষও প্রতিদিন দু’বেলা বাড়ির সামনের কুকুর, বেড়ালদের খেতে দিতেন। কিন্তু লকডাউনের জেরে এ সবই বন্ধ এখন। রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো কুকুর ও বেড়ালদের খাবার কোথা থেকে জুটবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন হাওড়া সিটি পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। এর পরেই চালু হয় এই প্রকল্প।
গোলাবাড়ি থানা ও ট্র্যাফিক গার্ড অফিসের পিছনে একটি খালি জায়গায় গড়ে উঠেছে ওই কেন্দ্রীয় রান্নাঘর। সেখানেই বড় উনুন জ্বালিয়ে খিচুড়ি রান্না করেন পুলিশের তিন রাঁধুনি। খাবার তৈরির জন্য প্রতিদিন প্রায় ৫০-৭০ কেজি চাল, ১০-২০ কেজি ডাল, ২০-২৫ কেজি মুরগির মাংস আনা হয়। মাংস না থাকলে ৫-৭ কেজি সয়াবিন মেশানো হয় খিচুড়িতে। এই সব উপকরণের সঙ্গে মেশানো হয় সামান্য হলুদ। কিন্তু দেওয়া হয় না নুন। যে পশুপ্রেমী সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে এই প্রকল্প চলছে, সেটির তরফে অয়ন জয়সওয়াল বলেন, ‘‘ব্যাকটিরিয়া প্রতিরোধের গুণ রয়েছে, তাই খিচুড়িতে হলুদ মেশানো হয়। কিন্তু নুন কুকুরের চামড়ার ক্ষতি করে। তাই সেটা বাদ।’’ এই প্রকল্পে সহযোগিতা করছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও। প্রতিদিন দুপুর দুটোর মধ্যে রান্না হয়ে যায়। আড়াইটে থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে চলে খাবার বিতরণ।
পুলিশ সূত্রের খবর, কুকুর ও বেড়ালদের খাবার দেওয়ার কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে নজরদারি ও সমন্বয় রাখার জন্য ‘ফিড আ সোল’ নামের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও তৈরি করা হয়েছে। সেখানে পুলিশকর্তা, আধিকারিকদের পাশাপাশি রয়েছেন পশুপ্রেমীরাও। গোলাবাড়ি, মালিপাঁচঘরা, হাওড়া স্টেশন, ফোরশোর রোড-সহ আশপাশের কয়েকটি জায়গায় ঘুরে ঘুরে খাওয়ানো হয়। সাঁকরাইল, সাঁতরাগাছির মতো দূরের এলাকায় প্রয়োজন মতো খাবার পুলিশের গাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসা হচ্ছে। পুলিশকর্মী ও পশুপ্রেমী সংগঠনের প্রতিনিধিরা থালায় সেই খিচুড়ি এগিয়ে দিচ্ছেন লালু-ভুলু-কালুদের সামনে।
আরও পড়ুন: দরজা-জানলায় পেট্রল, বাইকে আগুন, রহস্য
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy