সুনসান: সব দোকানে ঝুলছে তালা। বৌবাজারের গয়নাপাড়ার চিত্র এখন এমনই। ছবি: সুমন বল্লভ
বাংলা নববর্ষ থেকে অক্ষয় তৃতীয়া। সেই সঙ্গে বিয়ের মরসুম। সব মিলিয়ে এই এপ্রিল মাসটার দিকেই সারা বছর তাকিয়ে থাকেন ওঁরা। দোকানে দোকানে উপচে পড়ে ভিড়। আর ওঁদের অতিরিক্ত কিছু উপার্জন হয়। কিন্তু এ বছর হঠাৎ করেই বদলে গিয়েছে পরিচিত সেই ছবিটা। করোনার জন্য ঝাঁপ বন্ধ সব গয়নার দোকানের। ফলে ওই দোকানগুলির সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার কারিগর এখন কাজ হারিয়ে অকূল পাথারে পড়েছেন। কবে আবার সব স্বাভাবিক হবে, ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা।
কারিগরেরা জানাচ্ছেন, নববর্ষ থেকে শুরু করে অক্ষয় তৃতীয়া পর্যন্ত তাঁদের দম ফেলার সময় থাকে না। বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন থেকে শুরু করে সেকরাপাড়া লেন, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে গয়না তৈরির ছোট ছোট কারখানা। সব এখন বন্ধ। ওই অঞ্চলের একটি সোনার দোকানের কর্ণধার সোনাক্ষী সরকার বললেন, ‘‘আগে থেকে অর্ডার দেওয়া গয়না অনেকে নববর্ষের দিন নিতে আসেন। আমরা তাঁদের মিষ্টি ও ক্যালেন্ডার দিই। অনেকে আবার অক্ষয় তৃতীয়ার জন্য গয়না গড়াতে দেন। সেই সঙ্গে বৈশাখ মাসে প্রচুর বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য অর্ডার দেওয়া গয়নাও ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়ার চাপ থাকে। ফলে এই সময়ে প্রায় দিন-রাত এক করে কাজ করেন কারিগরেরা।’’ তিনি জানান, এ বছরে ছবিটা একদম উল্টো। লকডাউনের জন্য গয়নার দোকানের পাশাপাশি বন্ধ গয়না তৈরির ছোট কারখানাগুলিও। পিন পড়লেও যেন শব্দ হবে, এমনই নিস্তব্ধতা গয়নাপাড়ায়। দোকানমালিকদের পাশাপাশি চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন গয়না তৈরির কারিগরেরা।
এমনই একটি দোকানের মালিক সুরজ সেন জানালেন, তিনি প্রথমে কারিগর হিসেবে কাজ করতেন। এখনও মাঝেমধ্যে কাজে হাত লাগান। সুরজবাবু বলেন, ‘‘কারিগরদের যে কত ক্ষতি হয়ে গেল, বলে বোঝানো যাবে না। অধিকাংশ কারিগর মাসিক বেতনে কাজ করেন না। কতটা কাজ করছেন, তার উপরে তাঁদের মজুরি নির্ভর করে। সেই টাকায় চলে সংসার। বৈশাখ মাসে যেহেতু কাজ অনেক বেশি থাকে, তাই কারিগরেরা অতিরিক্ত উপার্জনের সুযোগ পান। এ বার করোনার ধাক্কায় তা পুরো বন্ধ।’’ সুরজবাবু বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী কমিটির সদস্যও। তিনি জানান, শুধু বৌবাজারেই গয়না তৈরির কয়েক হাজার কারিগর রয়েছেন। সারা মাস কাজ করে তাঁদের জোটে সাত-আট হাজার টাকা। কিন্তু এই ভরা মরসুমে সেটুকুও আসছে না।
কারিগরদের একাংশ জানাচ্ছেন, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের সময়ে সেকরাপাড়া লেন এবং দুর্গা পিতুরি লেনে নেমে এসেছিল বিপর্যয়। বেশ কিছু বাড়ি ভেঙে পড়ায় গয়না তৈরির কিছু কারখানাও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু গত দু’মাস ধরে কেউ কেউ তাঁদের পরিচিত কারও কারখানায় বসে কাজ শুরু করেছিলেন। ভেবেছিলেন, নববর্ষ এবং অক্ষয় তৃতীয়ায় কিছুটা হলেও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে। এক কারিগর বলেন, ‘‘কিন্তু লকডাউন আমাদের কাছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো নেমে এল। অনেকের কাছে সংসার চালানোর মতো ন্যূনতম টাকাও নেই।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy