বারাসত স্টেশনে ট্রেনে ওঠার হুড়োহুড়ি। সোমবার। ছবি:সুদীপ ঘোষ
দীর্ঘ বিরতির পরে রবিবার লোকাল ট্রেন চালু হওয়ার প্রথম দিনেই বেশি নম্বর তুলতে ব্যর্থ হয়েছিল রেল। ছুটির দিনে বিধি মানার সেই হাল দেখে অনেকেই সোমবার কী হবে, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। আর সেই আশঙ্কা সত্যি করে সোমবার সকাল থেকেই শহর এবং শহরতলির বিভিন্ন লোকালের ভিড়ে কার্যত চাপা পড়ল ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালানোর সরকারি নির্দেশিকা। যদিও বিভিন্ন স্টেশনে মোতায়েন পুলিশকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘এটা তো হওয়ারই ছিল!’’
প্রায় ছ’মাস পরে রবিবার থেকে শহর ও শহরতলিতে চালু হয়েছে লোকাল ট্রেন। এত দিন ‘স্টাফ স্পেশ্যাল’-এ উঠে যাত্রীদের একাংশকে যাতায়াত করতে দেখা গেলেও সরকারি ভাবে রবিবার থেকেই ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে লোকাল ট্রেন চালু হয়েছে। যদিও ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে লোকাল ট্রেন চালানোর নির্দেশ মানা আদৌ কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে। তখন রেলের তরফে জানানো হয়, বেশি সংখ্যক আরপিএফ মোতায়েন করে যাত্রীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কিন্তু বাস্তবে অবস্থাটা কী হতে চলেছে, তার আভাস মিলেছিল রবিবারই। বেশ কয়েকটি ট্রেনে ঠাসাঠাসি করে, ঝুলতে ঝুলতে যাতায়াত করতে দেখা যায় যাত্রীদের।
সোমবার সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে সকাল থেকে প্রায় প্রতিটি লোকালেই যাত্রীদের ভিড়ের চাপে শিকেয় ওঠে সরকারি বিধিনিষেধ। ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালানোর বিধি তো ভাঙলই, তার উপরে বহু যাত্রীকেই মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। শিয়ালদহ, হাওড়া-সহ বড় কয়েকটি স্টেশনে রেলকর্মীদের মাস্কহীন যাত্রীদের ধরে জরিমানা করতে দেখা গেলেও সেই সংখ্যা বিধিভঙ্গকারী যাত্রীদের তুলনায় অনেক কম। শিয়ালদহ, দমদম, বালিগঞ্জ-সহ বেশ কয়েকটি স্টেশনে জরিমানা করার পাশাপাশি যাত্রীদের ধমকে মাস্ক পরতেও বলেন রেলকর্মীরা। যদিও রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিনা মাস্কের যাত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। শুধু শিয়ালদহ ডিভিশনেই প্রায় তিনশো যাত্রীকে এর জন্য ২০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
এ দিন সকালের ব্যস্ত সময়ে শিয়ালদহ শাখার একাধিক লোকাল ট্রেনে ভিড়ের চাপে কার্যত তিলধারণের জায়গা ছিল না। অনেকেই ভিড়ের চাপে পর পর ট্রেন ছেড়ে দিতেও বাধ্য হন। বালিগঞ্জ স্টেশনে ট্রেনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা জ্যোতিমোহন দত্ত বললেন, ‘‘ট্রেনে তো বাদুড়ঝোলা ভিড়! শিয়ালদহ যে যাব, উঠব কী করে! ট্রেনের সংখ্যা আরও না বাড়ালে এই ভিড় কমবে না।’’ শিয়ালদহ মেন লাইনের ট্রেনে জল বিক্রেতা চন্দন সিংহ আবার বললেন, ‘‘সিটে না বসার মার্কিং তো নামেই, কেউই তো কিছুই মানছেন না। যে যাঁর নিজের নিয়মে যাচ্ছেন।’’ এ দিন বেলার দিকে শিয়ালদহ-হাসনাবাদ লোকালে উঠে দেখা গেল, যাত্রীদের একাংশ মুখ থেকে মাস্ক নামিয়ে সহযাত্রীদের সঙ্গে খোশগল্প করতে ব্যস্ত। প্রশ্ন করতেই এক যাত্রী সহিদুল মণ্ডলের উত্তর, ‘‘করোনা আর কত বার হবে! প্রতিষেধকের দুটো ডোজ় তো নিয়ে নিয়েছি, আর মাস্কে মুখ ঢাকতে পারছি না।’’ আর যাত্রীদের একাংশের এই অসচেতনতা ভাবাচ্ছে রেলকর্তাদের। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বললেন, ‘‘প্রতিটি স্টেশনেই আরপিএফের নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। বিনা মাস্কের যাত্রীদের আটকাতে জরিমানার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ কিন্তু যাত্রীরা নিজে থেকে সচেতন না হলে এত সংখ্যক যাত্রীকে কি শুধুমাত্র নজরদারির মাধ্যমে বিধি মানানো সম্ভব? প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy