Advertisement
E-Paper

বাতিল উড়ান, রিপোর্টের সময়সীমা নিয়ে নাকাল যাত্রীরা

অনেকেই রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার পরে ফটোশপে ফেলে এডিট করে নেগেটিভ লিখে উড়ান ধরছেন। এমন অভিযোগও শোনা যাচ্ছে।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২১ ০৬:২৭
Share
Save

এক দিকে পর পর উড়ান বাতিল। অন্য দিকে, দেশের ভিতর যে প্রান্তেই সফর করুন, কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট বাধ্যতামূলক। এই দুইয়ের জাঁতাকলে পড়ে যাত্রীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত।

কর্ম সূত্রে মুম্বইয়ের বাসিন্দা চন্দন চৌধুরী। বাবা-মা শ্রীরামপুরের বাসিন্দা। ২ মে বাবা, বিমলবাবুর মৃত্যু সংবাদ যখন পৌঁছয়, তখন তিনি কোভিড সংক্রমিত হয়ে ঘরবন্দি। শেষকৃত্য না করতে পারার আক্ষেপ নিয়ে ১২ মে কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট-সহ কলকাতায় আসেন। তাঁর কথায়, “সহজ ছিল না। ওষুধ খেয়ে তবে নেগেটিভ রিপোর্ট পেয়েছিলাম।” বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সেরে ঠিক করেন একা হয়ে যাওয়া ৮০ বছরের মা নমিতাদেবীকে নিয়ে মুম্বই ফিরবেন।

পরিকল্পনা মতো ১৭ মে, সোমবারের টিকিট কাটেন। বর্তমান নিয়ম মেনেই বিমানে ওঠার ৭২ ঘণ্টা আগে, ১৪ মে পরীক্ষা করান মা ও ছেলে। ১৬ মে নেগেটিভ রিপোর্ট পান। যা হাতে নিয়ে তবেই বিমানে উঠতে হবে। কিন্তু সে দিনই মোবাইলে বার্তা পাঠায় এক বেসরকারি উড়ান সংস্থা। জানায়, ১৭ মে-র উড়ান বাতিল। ১৮ মে, মঙ্গলবার সকালে গোয়া হয়ে তাঁদের মুম্বইয়ের উড়ানে যেতে হবে। কিছু পরে ফের বার্তা পাঠিয়ে জানায়, ১৮ মে-র রাতে দিল্লি হয়ে তাঁদের মুম্বই যেতে হবে।

মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে চন্দনবাবুর। তিনি বলেন, “করোনা পরীক্ষা তো ১৪ মে করাতে দিয়েছি। ১৮ মে-র রাতের উড়ান ধরতে গেলে তো বলবে ৭২ ঘণ্টারও আগে নমুনা দিয়েছি। বিমানে উঠতেই দেবে না!” উড়ান সংস্থাকে মেল পাঠিয়েও সমাধান করতে পারেননি তিনি। জানিয়েছেন, ১৬ মে যখন মোবাইলে বার্তা পান, তখন নতুন করে নমুনা দিয়ে পরীক্ষা করালেও কোনও ভাবেই ১৮ মে রাতে উড়ান ধরার আগে রিপোর্ট পেতেন না।

ভোগান্তির এখানেই শেষ নয়। ১৭ মে আবার নতুন বার্তা আসে। বলা হয়, ১৮ মে-র উড়ানও বাতিল। ১৯ মে সকালে চেন্নাই ঘুরে তাঁকে মুম্বই যেতে হবে। ২০ তারিখ সকালে পৌঁছবেন। চন্দন বলেন, “যাওয়াটাই বাতিল করে দিয়েছি। কয়েক দিন অপেক্ষা করব। নয়তো ট্রেনে যাব।“

শ্বশুরের মৃত্যুসংবাদ হায়দরাবাদে বসে যখন অনুমিতা মণ্ডল পান, তখন তিনিও কোভিডে আক্রান্ত। ফলে ৩ মে খবর পেয়ে আসতে পারেননি। এখন সুস্থ হয়ে আসতে চাইলে নেগেটিভ রিপোর্ট প্রয়োজন। তাঁর কথায়, “সবাই জানেন, করোনায় ১৭ দিন কাটানোর পরে সংক্রমণ না থাকলেও, পরীক্ষায় রিপোর্ট বেশির ভাগ সময়েই পজ়িটিভ আসছে। বুঝতে পারছিলাম না কী করা উচিত। আগে যদি উড়ানের টিকিট কেটে, হিসেব করে ৭২ ঘণ্টা আগে নমুনা পরীক্ষা করতে দিই, তা হলে তো পজ়িটিভ আসতেই পারে। তখন টিকিটের টাকা নষ্ট যাবে। আবার আগে নমুনা পরীক্ষা করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি রিপোর্ট নেগেটিভ আসে, তা হলে ২৪ ঘণ্টায় টিকিট কেটে বিমানে উঠতে হবে।”

শেষে অফিসকে ধরে আগে পরীক্ষা করিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নেগেটিভ রিপোর্ট পেয়েছেন অনুমিতা। হাতে ৪৮ ঘণ্টা সময়। তার মধ্যেই উড়ান ধরে কলকাতায় আসতে হবে। কোনও কারণে সেই উড়ানের সময় পিছিয়ে দিলে আতান্তরে পড়ে যাবেন তিনি।

এই জাঁতাকলে পড়ে অনেকেই রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার পরে ফটোশপে ফেলে এডিট করে নেগেটিভ লিখে উড়ান ধরছেন। এমন অভিযোগও শোনা যাচ্ছে।

হাত উল্টে দিয়েছে উড়ান সংস্থাগুলিও। তাদের বক্তব্য, কলকাতা থেকেই এক একটি উড়ানে ৫-৭ জন যাত্রী হচ্ছে। সোমবার দিনভর অন্য শহর থেকে কলকাতায় উড়ে এসেছেন ৩২৫৪ জন যাত্রী। শহর ছেড়ে গিয়েছেন ২৫৪৪ জন। সংখ্যাটা এমন ভাবে কমছে যে একের পর এক উড়ান বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছে উড়ান সংস্থাগুলি।

Corona Kolkata Airport Coronavirus in Kolkata

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}