Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in Kolkata

জীবাণুমুক্তি শিকেয়, বিপদ নিয়েই দর্শন কালীঘাটে

মন্দির কমিটির সদস্যেরা জানিয়েছেন, মন্দিরের ছ’টি গেটে জীবাণুমুক্তকরণ সুড়ঙ্গ বসানো হয়েছে।

কালীঘাট মন্দিরে বসেছে যন্ত্র, কিন্তু তাতে নেই স্যানিটাইজ়ার। নিজস্ব চিত্র

কালীঘাট মন্দিরে বসেছে যন্ত্র, কিন্তু তাতে নেই স্যানিটাইজ়ার। নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২০ ০৩:২৫
Share: Save:

ঢাকঢোল পিটিয়ে, জীবাণুমুক্তকরণ সুড়ঙ্গ বসিয়ে পয়লা জুলাই থেকে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল কালীঘাট মন্দির। গর্ভগৃহ স্পর্শ না-করে বিগ্রহ দর্শনের অনুমোদন দিয়েছিল মন্দির কমিটি। ঠিক হয়েছিল, দু’নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে দর্শন করার পরে চার নম্বর গেট দিয়ে বেরিয়ে যাবেন দর্শনার্থীরা। দূরত্ব-বিধি মেনে ছোঁয়াচ এড়ানোর সব রকম ব্যবস্থা করেই ‘আনলক’ পর্বে খোলা হয়েছিল মন্দির। কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক পেরোনোর পরেই জীবাণুমুক্ত করার সেই ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মন্দিরের সেবায়েত কাউন্সিল ও মন্দির কমিটির সদস্যদের একাংশের অভিযোগ, জীবাণুমুক্তকরণ সুড়ঙ্গ তৈরি হলেও তা ঠিকমতো কাজ করছে না। অধিকাংশ সময়েই উপর থেকে শুধু জল ঝরে পড়ছে।

কোনও রাসায়নিকের গন্ধ নাকে আসছে না। আরও অভিযোগ, গর্ভগৃহের দু’পাশে দর্শনার্থীদের জন্য স্যানিটাইজ়ারের যন্ত্র বসানো থাকলেও তাতে স্যানিটাইজ়ার ঢালা হয়নি এখনও।

মন্দির কমিটির সদস্যেরা জানিয়েছেন, মন্দিরের ছ’টি গেটে জীবাণুমুক্তকরণ সুড়ঙ্গ বসানো হয়েছে। একটি বেসরকারি সংস্থা ওই ছ’টি সুড়ঙ্গ মন্দির কর্তৃপক্ষকে দান করেছে। সেই সঙ্গে জীবাণুমুক্ত করার প্রায় ৫০ লিটার রাসায়নিকও দিয়েছে ওই বেসরকারি সংস্থা। মন্দির খোলার সময়ে ওই সংস্থার উদ্যোগেই জলের সঙ্গে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট মিশিয়ে জীবাণুমুক্তকরণ মিশ্রণ তৈরি করা হয়েছিল। গত দু’সপ্তাহ ধরে সেই মিশ্রণই জীবাণুমুক্ত করার সুড়ঙ্গে ঢালা হচ্ছিল। এখন তা ফুরিয়ে গিয়েছে। তাই আর ঢালা হচ্ছে না সুড়ঙ্গের যন্ত্রে।

আরও পড়ুন: পাড়ায় আক্রান্ত ১৬, তবু বাজারে বেরোনো চলছেই

আরও পড়ুন: ভেন্টিলেশন পদ্ধতিতে বদল, করোনা জয় করলেন নার্স

মন্দির কমিটির সদস্যদের একাংশের মতে, জীবাণুমুক্ত করার ওই মিশ্রণ তৈরি করতে পেশাদারি দক্ষতার প্রয়োজন। কিন্তু সেবায়েত কাউন্সিল বা মন্দির কমিটির তরফে এখনও পর্যন্ত পেশাদার কোনও সংস্থাকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সেই কারণেই ওই সমস্ত সুড়ঙ্গে এখন বন্ধ রয়েছে জীবাণুমুক্তকরণ প্রক্রিয়া।

মন্দির কমিটি সূত্রের খবর, প্রায় ৫০ লিটার সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট মজুত রয়েছে তাদের কাছে। কিন্তু পেশাদার কোনও লোক না থাকায় তা থেকে মিশ্রণ তৈরি করা যাচ্ছে না।

সেবায়েত কাউন্সিলের সদস্যেরা জানান, প্রতিদিনই সকাল ছ’টা থেকে বেলা ১২টা ও বিকেল ৪টে থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকছে। দূর-দূরান্ত থেকেও দর্শনার্থীরা আসছেন। এ দিকে, করোনা সংক্রমণ প্রতিদিনই ঝড়ের গতিতে বেড়ে চলেছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। কালীঘাট মন্দির চত্বর খুবই ঘিঞ্জি ও জনবহুল এলাকা। সেখানে বহিরাগতদের ঠিক মতো জীবাণুমুক্ত করা না হলে গোটা এলাকাই সংক্রমিত হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে মন্দির কমিটির দায়িত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।

সমস্যার কথা স্বীকার করে মন্দির কমিটির কোষাধ্যক্ষ কল্যাণ হালদার বললেন, ‘‘এক জন পেশাদারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি নিয়মিত মন্দিরে এসে ওই মিশ্রণ তৈরি করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’’

সেবায়েতদের একাংশের আরও অভিযোগ, দর্শনার্থীদের দেহের তাপমাত্রা মাপার জন্য একটি বেসরকারি সংস্থা তিনটি যন্ত্র দিয়েছিল মন্দির কমিটিকে। কিন্তু দিনে প্রায় ন’ঘণ্টা ব্যবহার করতে গিয়ে ওই যন্ত্রগুলির ব্যাটারি ফুরিয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে অকেজোও হয়ে পড়ছে সেগুলি। সেবায়েত কাউন্সিলের সম্পাদক দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কাউন্সিলের মাধ্যমে জীবাণুমুক্তকরণ সুড়ঙ্গ, তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র ও রাসায়নিক মন্দির কমিটিকে দান করেছেন। জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়া চালু রাখার দায়িত্ব মন্দির কমিটির।’’

শনিবার সকালে কালীঘাট মন্দিরে গিয়ে দেখা গেল, জীবাণুমুক্তকরণ সুড়ঙ্গ থেকে ঝরে পড়ছে শুধুই জল। সিঁড়ি দিয়ে উঠে গর্ভগৃহের বারান্দায় দেখা গেল, ‘কে পি টি’ (কালী টেম্পল কমিটি) লেখা প্লাস্টিকের ছোট স্যানিটাইজ়ারের কন্টেনারও ফাঁকা। গর্ভগৃহের বারান্দায় প্রবেশ করার আগে দর্শনার্থীরা স্যানিটাইজ়ার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নেবেন, এমনটাই নিয়ম। কিন্তু আপাতত সে সবের কিছুই হচ্ছে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in Kolkata Coronavirus Kalighat Temple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy