—ফাইল চিত্র
স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশিকা না মেনেই আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলার অভিযোগ উঠল শহরের একাধিক সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য ভবন ওই নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলির পাশাপাশি জেলা হাসপাতালগুলিতেও শুধু আইসোলেশন ওয়ার্ড খুললে হবে না। সেই ওয়ার্ড কেমন হবে, রোগীদের কী ভাবে রাখতে হবে, নোভেল করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, সেই সংক্রান্ত সবিস্তার নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর বলছে, আইসোলেশন ওয়ার্ড হবে হাসপাতালের এমন জায়গায়, যেখানে অন্য রোগীরা সংক্রমণের শিকার হবেন না।
ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী আইসোলেশন ওয়ার্ড যেমনটা হওয়ার কথা, ঠিক তার উল্টো ছবি দেখা গেল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে সার্জারি ব্লকের একতলায় মেল অবজারভেশন ওয়ার্ড লাগোয়া একটি ঘরে খোলা হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড। জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের অনেক সময়ে পর্যবেক্ষণে রাখেন চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যা পরিকল্পনা, তাতে আইসোলেশন ওয়ার্ডের পাশ দিয়েই রোগীদের অবজারভেশন ওয়ার্ডে যেতে হবে। পর্যবেক্ষণের ঘর ছাড়া রেসিডেন্ট সার্জারি রুম, রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ানদের ঘরও ওই চত্বরে অবস্থিত। তা ছাড়া ওই ঘরে হাওয়া চলাচলের ব্যবস্থাও অপ্রতুল।
স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, বায়ুবাহিত রোগ যাতে না ছড়ায়, তার জন্য রাজ্যে এ পর্যন্ত করোনা-জর্জরিত বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ১৬০৬ জন যাত্রীকে চিহ্নিত করে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। জনবহুল এলাকায় সংক্রমণের মোকাবিলায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে বিষয়ে শুক্রবারের সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেছেন। বিষয়টি এতটা গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ রোগীদের যাতায়াতের পথে আইসোলেশন ওয়ার্ড কেন খোলা হল, তা নিয়ে হাসপাতালের স্বাস্থ্য আধিকারিকদের মধ্যেই প্রশ্ন রয়েছে।
প্রশ্নের মুখে পড়েছেন এম আর বাঙুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। কিন্তু সেই ওয়ার্ডে পৌঁছতে হলে আক্রান্তকে পুরুষ এবং মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের ভিতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। হাসপাতালের সুপার শিশির নস্কর বলেন, ‘‘আর কোথাও জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না বলেই ওখানে আইসোলেশন ওয়ার্ড করতে হয়েছে। পরিস্থিতি তেমন হলে নির্দেশিকা মেনেই কাজ হবে। অসুবিধার কিছু নেই।’’
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আবার ভগ্নস্তূপের মধ্যে তৈরি হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড। হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয়ের উল্টো দিকে পুরনো ফরেন্সিক বিভাগের বাড়ি ভেঙে নতুন ভবন তৈরির কাজ চলছে। এনআরএস সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ পাওয়ার পরে সেই বাড়ি ভাঙার কাজ স্থগিত রেখে আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। গত সোমবার স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশিকা পেয়ে দ্বিতীয় দফায় সাফাই করে সাতটি নতুন শয্যা এবং আসবাবপত্র আইসোলেশন ওয়ার্ডে ঢোকানো হয়েছে। কিন্তু তাতে পরিচ্ছন্নতায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নম্বর কাটা গিয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, আইসোলেশন ওয়ার্ড হবে সম্পূর্ণ ভাবে জীবাণুমুক্ত। একটি আধভাঙা বাড়ির একাংশে আইসোলেশন ওয়ার্ড কোনও ভাবেই হতে পারে না!
পরিকাঠামোর মাপকাঠিতে কিছুটা এগিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সেখানে এমসিএইচ ভবনের দোতলায় পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য তৈরি হওয়া আইসোলেশন ওয়ার্ড আয়তনে বেশ বড়। ভেন্টিলেটর, মনিটর-সহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বসানোর জায়গাও রয়েছে। কিন্তু এটাও ঠিক, পুরুষদের ওয়ার্ড থেকে শৌচালয়ের দূরত্ব অনেকটাই বেশি। নির্দেশিকায় যা এড়িয়ে চলার কথা বলা হয়েছে। উপাধ্যক্ষ তথা সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে পরিকাঠামোগত কোনও সমস্যা নেই। রোগী এলে নির্দেশিকা মেনে পরিষেবা দিতে আমরা প্রস্তুত।’’
এসএসকেএমের সুপার রঘুনাথ মিশ্র জানিয়েছেন, সেখানে মেন বিল্ডিংয়ের দোতলায় মেডিসিনের জরুরি বিভাগের জায়গায় খোলা হয়েছে ১২ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড। জরুরি বিভাগ সংলগ্ন রোগী সহায়তা কেন্দ্রের পাশে সিওভিআইডি-র বহির্বিভাগ তৈরির জায়গা চিহ্নিত হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy