সাংবাদিক বৈঠকে অভিভাবকদের সঙ্গে সৌমেন রানার মা-বাবা (ডান দিকে)। শনিবার, প্রেস ক্লাবে। নিজস্ব চিত্র
কারমেল প্রাইমারি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ঘিরে অভিভাবকেরা আগেই দু’ভাগ হয়ে গিয়েছিলেন। এ বার কয়েক ধাপ এগিয়ে সেই অভিযোগকেই সাজানো বলে দাবি করলেন অভিভাবকদের একাংশ। অভিযুক্ত শিক্ষক সৌমেন রানার পরিবারকে নিয়ে শনিবার তাঁরা সাংবাদিক বৈঠক করে এমনই পাল্টা অভিযোগ করেছেন। এমনকী, পূর্বপরিকল্পিত ভাবেই স্কুলে গোলমাল বাধানো হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তাঁরা। এ বিষয়ে টালিগঞ্জ থানায় পিটিশন দিয়েছেন ওই অভিভাবকেরা। তার প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকেও।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি দেশপ্রিয় পার্কের কাছে কারমেল প্রাইমারি স্কুলে এক ছাত্রীর যৌন নিগ্রহের অভিযোগকে ঘিরে ব্যাপক গোলমাল হয়। পুলিশকে মারধর থেকে শুরু করে অভিযুক্ত নাচের শিক্ষককে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ও পিটিয়ে মারার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে উত্তেজিত অভিভাবকদের একাংশের বিরুদ্ধে। তার পরেই ওই ঘটনার নিন্দায় সরব হন অনেকে। এমনকী, নিগৃহীত ছাত্রীর মা-ও সেই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। কিন্তু এ দিন যে ভাবে যৌন নিগ্রহের ঘটনাটিকে ‘সাজানো’ বলে দাবি করা হল, তা নিয়ে ফের শুরু হয়েছে বিতর্ক।
এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে অভিভাবকদের তরফে নবমিতা চক্রবর্তী দাবি করেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগে যা বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে প্রকৃত তথ্যের কোনও মিল পাওয়া যাচ্ছে না। ওই শিক্ষক যেখানে মেরেকেটে চার মাস সতেরো দিন ক্লাস করেছেন, সেখানে গত এক বছর বা ছ’মাস ধরে নিগ্রহ হয় কী করে? তিনি বলেন, ‘‘এটা নিছকই সাজানো ঘটনা।’’ কিন্তু পরমুহূর্তেই বিচারাধীন বিষয়কে সাজানো বলা ঠিক হচ্ছে না জেনে তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই, তদন্ত ঠিক করে হোক। প্রশাসনের উপরে আস্থা রয়েছে। আমরা অভিযুক্তকে নির্দোষ বলতে পারি না। কিন্তু অভিযোগের সঙ্গে আসল তথ্য কিছুতেই মিলছে না।’’
অন্য অভিভাবকদের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, কয়েক মাস ধরেই কিছু অভিভাবক একটি ফোরাম গঠন করতে চাইছিলেন। নিগ্রহের অভিযোগকে অস্ত্র করে স্কুলকে চাপে ফেলার জন্যই সে দিন তাণ্ডব চালানো হয়েছে বলে দাবি করেন নবমিতা। যে হেতু ওই শিক্ষক আর্থিক ভাবে সচ্ছল নন এবং অস্থায়ী কর্মী, তাই তাঁকে ‘টার্গেট’ করা হয়েছিল বলে দাবি তাঁর। এ ছাড়া, স্কুলে পুরুষ শিক্ষক না রাখার যে দাবি উঠেছে, সেটাকেও নস্যাৎ করে দেন তিনি। এই বিষয়েই টালিগঞ্জ থানায় পিটিশন দিয়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: গীতার ভাষান্তরে জীবনের পাঠ দিতে চান সালাউদ্দিন
এ দিন সৌমেনের মা বন্দনা রানা বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এটা ষড়যন্ত্র। আমি ওর মানসিক অবস্থা নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর থেকে সৌমেনের নাচের শিক্ষিকা স্বাতী হাজরা এবং বেশ কয়েক জন ছাত্রীও এসেছিলেন। তাঁরাও দাবি করেছেন, সৌমেনের সম্পর্কে যে অভিযোগ উঠেছে, তা মিথ্যে।
নিগৃহীতা ছাত্রীর মা অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘স্কুলের বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ নেই। আমার মেয়ে ওই স্কুলেই পড়বে। কিন্তু অভিযোগ মোটেই সাজানো নয়। নিজের মেয়েকে নিয়ে এমন নোংরামি কি কেউ করতে পারে? আমি শুধু অভিযুক্তের শাস্তি চাই।’’ সে দিন আন্দোলনের প্রথম সারিতে থাকা এক অভিভাবক সোমনাথ ঝা বলেন, ‘‘পূর্বপরিকল্পিত গোলমালের যে অভিযোগ উঠছে, সেটা একেবারেই ভিত্তিহীন। কিছু অভিভাবক এ বিষয়ে প্রচার করছেন বলে শুনেছি। জানি না, কেন তাঁরা এমনটা বলছেন।’’
রাজ্যের খ্রিস্টান স্কুলগুলির সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মলয় ডি’কোস্টা বলেন, ‘‘আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে স্কুল চালাচ্ছি, তা থেকে কখনওই সরে আসব না। ঘটনাটি সত্যি না মিথ্যে, তা নিয়ে আইনের কাছে যাওয়া হয়েছে। যা হওয়ার হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy