যানজটে বেহাল ধর্মতলা। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র
দুপুর দু’টো। ভাদ্রের প্যাচপ্যাচে গরমে তীব্র আর্দ্রতায় মৌলালি মোড়ে বাসের ভিতরে দরদর করে ঘামছিলেন বছর পঞ্চাশের সদানন্দ গুহ। পঁচিশ মিনিটেরও বেশি এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে বাসটি। একই অবস্থা ওই মোড়েই দাঁড়িয়ে থাকা অন্য এক মিনিবাসের যাত্রীদের। সৌজন্যে বামপন্থীদের মিছিল।
বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলে, তার প্রতিবাদে সোমবার বামপন্থী গণসংগঠনগুলির একাধিক মিছিল বেরোয়। যার জেরে এ দিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কার্যত অচল হয়ে পড়ে শহরের একটি বড় অংশ। ভোগান্তি হয় অসংখ্য নিত্যযাত্রীর।
পুলিশ জানায়, রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে বেরিয়ে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত এ দিন দুপুরে বিভিন্ন বামপন্থী গণসংগঠন একটি মিছিল করে। সেটি রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে রওনা হয়ে নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট, ওয়েলিংটন, এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পৌঁছয়। এই মিছিলের জেরেই মধ্য কলকাতায় যানজট হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বিকেল গড়িয়ে যায় বলেই পুলিশ সূত্রের খবর।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, মিছিলে যোগ দিতে রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে জড়ো হয়েছিলেন হাজার দু’য়েক মানুষ। এই জমায়েতের ফলে কলেজ স্ট্রিট, ক্রিক রো, নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট ও মহাত্মা গাঁধী রোডে গাড়ি চলাচল থমকে যায়। তার ফলেই যানজট শুরু হয়। দুপুর দু’টো নাগাদ মিছিল ধর্মতলার উদ্দেশে রওনা হয়। মিছিলটি ওয়েলিংটনের দিকে এগনোর সময়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় গণেশ অ্যাভিনিউ, লেনিন সরণিতে। মিছিল যে রাস্তা ধরে এগিয়েছে, সেই রাস্তায় গাড়ি চলাচল থমকে গিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, মিছিল এস এন ব্যানার্জি রোড দিয়ে ধর্মতলায় যাওয়ার সময়ে শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলামুখী যান চলাচল সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ হয়ে যায় জওহরলাল নেহেরু রোড এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের একাংশ। এর ফলেই নাকাল হন যাত্রীরা। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, এ দিন কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার সঙ্গে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯৪ শতাংশ। তাই ভরদুপুর থেকে প্রায় বিকেল পর্যন্ত বাসে-ট্রামে আটকে পড়ে অস্বস্তিতে ভুগতে হয়েছে মানুষকে।
এ দিনের মিছিলের জেরে মধ্য কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় যানজট যে হয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক কর্তারাও। লালবাজারের বক্তব্য, মানুষের ভোগান্তি কমাতে এ দিন দুপুরে বেশ কিছু ক্ষণের জন্য বিভিন্ন রাস্তায় যানবাহনের মুখ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। তাতেও যে পরিস্থিতি পুরো স্বাভাবিক হয়নি, তা স্বীকার করে নিয়েছে পুলিশের একাংশ। লালবাজার সূত্রের খবর, বিকেল তিনটে নাগাদ মিছিলটি রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পৌঁছয়।
বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের অন্য একটি মিছিলে এ দিন বেলা এগারোটা থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল মৌলালি, শিয়ালদহ, লালমোহন ভট্টাচার্য রোড-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। তাদের একটি মিছিল শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বেরিয়ে মৌলালি যুবকেন্দ্রে যায়। এর জেরেও দুপুর একটা নাগাদ যান চলাচল ব্যহত হয় ওই এলাকায়।
এ দিন সকালেও যানজট দেখা দেয় ওই এলাকার একাংশে। পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে শিয়ালদহ থেকে একটি ধর্মীয় মিছিল বেরিয়েছিল। শিয়ালদহ-আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড-মৌলালি-এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে ধর্মতলা ওয়াই রোডে পৌঁছয় ওই মিছিল। ফলে ওই রাস্তায় কিছু ক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয় যান চলাচল।
পুলিশের এক কর্তা জানান, সকালে কয়েকশো মানুষের মিছিলে যানযট শুরু হয়। ভোগান্তি আরও বাড়ে বিকেলে বামপন্থীদের বিরাট মিছিল বেরোলে। তার জেরেই কাজের দিনে ভুগতে হল বহু নাগরিককে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy