Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

ফুসফুসে ক্যানসার রুখতে চাই সতর্কতা

’বছর আগে ফুসফুসের ক্যানসার ধরা পড়েছিল সল্টলেকের শিপ্রা বসুর। তখন তাঁর বয়স ৭৫ বছর। চিকিৎসকেরা তাঁর বাঁ দিকের ফুসফুসটির তিন চতুর্থাংশই অস্ত্রোপচার করে বাদ দিয়ে দেন। বৃদ্ধাকে অবশ্য তা দমাতে পারেনি একটুও।

ফুসফুসে ক্যানসার

ফুসফুসে ক্যানসার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৬ ০১:০৪
Share: Save:

দু’বছর আগে ফুসফুসের ক্যানসার ধরা পড়েছিল সল্টলেকের শিপ্রা বসুর। তখন তাঁর বয়স ৭৫ বছর। চিকিৎসকেরা তাঁর বাঁ দিকের ফুসফুসটির তিন চতুর্থাংশই অস্ত্রোপচার করে বাদ দিয়ে দেন। বৃদ্ধাকে অবশ্য তা দমাতে পারেনি একটুও। বরং সোমবার, বিশ্ব ফুসফুস ক্যানসার দিবসে
এক বেসরকারি হাসপাতালের অনুষ্ঠানে এসে অন্যদেরও মনের জোর জুগিয়ে দিলেন তিনি। জানালেন, ক্যানসার মানেই জীবন থমকে যাওয়া নয়।

অন্যান্য ক্যানসারকে ঠেকিয়ে ফুসফুসের ক্যানসার ক্রমশ বাড়ছে এ দেশে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর ভারতে যত মানুষের ক্যানসার ধরা পড়ে, তার ৬.৯ শতাংশই ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত। কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাই এবং বেঙ্গালুরুর মতো শহরে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দেশের
অন্য অংশের তুলনায় বেশি বলেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ধরা পড়ে না। যখন ধরা পড়ে, ততক্ষণে তা অনেকটাই ছড়িয়ে গিয়েছে। তাই ফুসফুসের ক্যানসার এড়াতে আগে থেকে সাবধান
হওয়া জরুরি।

যাঁদের বয়স ৪০ বছরের উপরে, যাঁদের টানা বহু বছর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধূমপানের অভ্যাস রয়েছে, যাঁরা ট্রাফিক পুলিশের মতো পেশায় থেকে দীর্ঘদিন সরাসরি বায়ু দূষণের শিকার, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ অর্থাৎ সিওপিডি-র রোগী কিংবা যাঁরা উনুনে রান্না করেন— তাঁরা সকলেই ‘হাই রিস্ক গ্রুপ’-এ রয়েছেন। তাঁদের ক্ষেত্রে সামান্য সংশয় দেখা দিলেই রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা জরুরি বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

কী ভাবে তা করা যাবে? বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য— স্তনে টিউমার হয়েছে কি না, তা যেমন মহিলারা নিজেরাই পরীক্ষা করতে পারেন, জরায়ুমুখ ক্যানসার যেমন খুবই কম খরচে নির্ণয় করা যায়, এ ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। ফুসফুসের ক্যানসার হয়েছে কি না, তা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে দরকার সিটি স্ক্যান। কিন্তু
এই পরীক্ষায় শরীরে রেডিয়েশন প্রবেশ করে, যা একাধিক বার করানো ক্ষতিকর। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে লো ডোজ সিটি স্ক্যানের উপরেই জোর দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

এ দিন ই এম বাইপাসের ফর্টিস হাসপাতালে ফুসফুসের ক্যানসার সচেতনতা এবং প্রতিরোধের ক্লিনিক চালু হয়। অনুষ্ঠানে পালমোনোলজিস্ট রাজা ধর জানান, মহিলাদের
মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসার এখন আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে। তার প্রধান কারণ পরোক্ষ ধূমপান বা ‘প্যাসিভ স্মোকিং’। ধূমপানের অভ্যাস ছাড়ার উপরে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অনেকে ধূমপানের অভ্যাস ছেড়ে ই-সিগারেট খান। তাঁদের জানিয়ে রাখা দরকার, ই-সিগারেটও সিগারেটের মতোই বা কখনও কখনও আরও বেশি ক্ষতিকর। এ ব্যাপারে একাধিক আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে।’’

সাধারণ ভাবে একটানা কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত ওঠা, শ্বাসকষ্ট, বুকে-কাঁধে ব্যথা, হঠাৎ অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস, অতিরিক্ত ক্লান্তি, খাবারে অনীহা হল ফুসফুসের ক্যানসারের চেনা কিছু উপসর্গ। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই উপসর্গগুলি যখন দেখা দেয়, ততক্ষণে রোগ অনেকটাই ছড়িয়ে পড়েছে। ক্যানসার চিকিৎসক গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সুস্থ জীবনযাপন এবং সতর্কতা এই রোগকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে। তা ছাড়া ফুসফুসের ক্যানসার মানেই সব শেষ— এই ছবিটাও এখন বদলে গেছে। অনেক আধুনিক চিকিৎসা এখন আমাদের আয়ত্ত্বে। রোগী-ভিত্তিক নির্দিষ্ট চিকিৎসাও শুরু করা হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

lung cancer Consciousness prevent cancer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE