প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের তথ্য যা-ই বলুক, চলতি মাসের মঙ্গলবার পর্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলে জল সংযোগের নিরিখে দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তরফে এমনটাই জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী পুলক রায় জানান, রাজ্যের গ্রামীণ অঞ্চলে জল সংযোগের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে। রাজ্যের নিজস্ব ‘জলস্বপ্ন প্রকল্প’, যা গত বছরের জুলাইয়ে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তার কাজ দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, পাইপবাহিত পরিস্রুত জল (ফাংশনাল হাউসহোল্ড ট্যাপ কানেকশন বা এফএইচটিসি) পৌঁছে দেওয়ার নিরিখে অগস্টের প্রথম ১৬ দিনের মধ্যে দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ এক দিন শীর্ষে, পাঁচ দিন দ্বিতীয় স্থানে, ছ’দিন তৃতীয় স্থানে, তিন দিন পঞ্চম স্থানে এবং এক দিন সপ্তম স্থানে ছিল। কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের তথ্য বিশ্লেষণ করেই এটি জানা গিয়েছে। পুলকবাবুর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে রাজ্যের প্রতিটি পরিবারে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। তাই অগস্টের এই ক’দিনে মোট ১ লক্ষ ১০ হাজার জল-সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। যা দেশের মধ্যে সর্বাধিক।’’
যদিও কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রক সূত্রের খবর, গত মার্চের মধ্যে রাজ্যের জাপানি এনসেফ্যালাইটিস-অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিন্ড্রোম (জেই-এইএস) এবং আর্সেনিক-ফ্লুয়োরাইড উপদ্রুত অঞ্চলের প্রত্যেক গ্রামীণ পরিবারে কল বসিয়ে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। সেই সঙ্গে জল সরবরাহের পরিকাঠামো উন্নত করার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। তাই সেই সময়সীমা আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
গত সপ্তাহেই পশ্চিমবঙ্গ-সহ ওই সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে চিঠি দিয়ে সে কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রক। তারা জানিয়েছে, করোনার কারণে প্রকল্প রূপায়ণে দেরি হচ্ছে বলে একাধিক রাজ্যের তরফে আবেদন এসেছিল। তারই ভিত্তিতে অতিমারি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নির্ধারিত সময়সীমা শিথিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘নতুন সময়সীমার মধ্যে রাজ্যগুলিকে প্রকল্পের কাজ শেষ করতেই হবে।’’
অবশ্য এটাই প্রথম বার নয়। গত বছরেও মন্ত্রকের ‘জল জীবন প্রকল্প’-এর শ্লথ গতি নিয়ে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছিল মন্ত্রক। এ ক্ষেত্রে দুই ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যের একাধিক জেলায় প্রকল্পের কী অবস্থা, সেই প্রসঙ্গের উল্লেখ করছেন মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশ। সব মিলিয়ে রাজ্যের দেড় কোটিরও বেশি গ্রামীণ পরিবারের মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত জল সংযোগ দেওয়া হয়েছে সাড়ে ১৯ লক্ষের মতো পরিবারে। মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘মঙ্গলবারের তথ্য বলছে, গ্রামীণ পরিবারে পাইপবাহিত জল-সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় স্তরে যেখানে গড় ৪১.৫৪ শতাংশ, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে এই গড় মাত্র ১১.১৩ শতাংশ!’’ যার পরিপ্রেক্ষিতে পুলকবাবু বলছেন, ‘‘কেন্দ্র কী বলছে জানি না। তবে পশ্চিমবঙ্গে যে দ্রুত গতিতে জল-সংযোগের কাজ চলছে, তা পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট।’’
এমনিতে গত জুনেই ‘জল জীবন’ মিশনের আওতায় ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৬ হাজার ৯৯৮ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছিল। জলশক্তি মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, কর্মসূচি রূপায়ণে রাজ্যের শ্লথ গতি তো ছিলই। তার উপরে বরাদ্দকৃত অর্থের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারেনি তারা। ফলে এই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে রাজ্যকে কর্মসূচি রূপায়ণের গতি চার গুণ বাড়াতে হবে। মন্ত্রক আরও জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের ১২৫১টি গ্রামে পানীয় জলের উৎসে আর্সেনিক ও অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থের সংমিশ্রণ রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যকে সংশ্লিষ্ট গ্রামগুলিতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পাইপবাহিত পানীয় জলের সংযোগ সুনিশ্চিত করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy