প্রতীকী ছবি।
যেখানে নির্ধারিত ক্ষমতা থাকার কথা তিন ওয়াট, সেখানে ৪০০ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহার করার জন্য দরপত্র ডাকা হয়েছে। অর্থাৎ, নির্ধারিত মাত্রার ১৩ গুণেরও বেশি! তা-ও কোনও রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে নয়। এ বার রাজ্য সরকার আয়োজিত মেলাতেই শব্দবিধি লঙ্ঘনের এমন অভিযোগ উঠল।
পরিবেশবিদদের মতে, এতেই পরিষ্কার যে সরকারের কাছে পরিবেশের গুরুত্ব কতটা। না হলে, জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মতো যেখানে খোলা জায়গায় যে কোনও শব্দযন্ত্রেই সাউন্ড লিমিটর লাগানো বাধ্যতামূলক, সেখানে সরকারি মেলায় সেই নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শব্দযন্ত্র বসাতে কেন দরপত্র ডাকা হবে?
প্রশাসন সূত্রের খবর, আগামী ১৪-২৩ ফেব্রুয়ারি করুণাময়ীতে বিধাননগর মেলা প্রাঙ্গণে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের উদ্যোগে ‘স্বয়ংসিদ্ধা মেলা’ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেখানেই নির্বাচিত সংস্থার মাধ্যমে শব্দযন্ত্র লাগাতে দরপত্র ডেকেছে রাজ্য নগরোন্নয়ন সংস্থা (স্টেট আর্বান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি বা সুডা)। কিন্তু সংশ্লিষ্ট শব্দযন্ত্রের কোনওটিতেই সাউন্ড লিমিটর লাগানোর ব্যবস্থা নেই বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।
যা দেখে বিস্মিত সরকারি সংস্থা ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড’-এর (ওয়েবেল) কর্তারাও। কারণ, ২০০৪ সালেই ওই সংস্থার তরফে সাউন্ড লিমিটর তৈরি করা হয়েছিল। এটি কী ভাবে কাজ করে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন সংস্থার কর্তারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, সাউন্ড লিমিটর এমন একটি যন্ত্র যেটি অ্যামপ্লিফায়ারের সঙ্গে যুক্ত থাকে। অ্যামপ্লিফায়ার থেকে যে শব্দ মাইক, লাউডস্পিকারের মতো ঘোষণা যন্ত্রের মাধ্যমে বেরোয়, তা যাতে নির্ধারিত মাত্রা ছাড়াতে না পারে, তার নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে সাউন্ড লিমিটর। অর্থাৎ, এটি এমন ভাবে তৈরি যে সংশ্লিষ্ট শব্দযন্ত্রের মাত্রা বাড়ালেও তাকে বাড়তে দেয় না।
ওয়েবেল সূত্রের খবর, অ্যামপ্লিফায়ার, হর্ন-সহ মেলায় যে সমস্ত শব্দযন্ত্র লাগানোর কথা বলা হচ্ছে, সেগুলির সব ক’টিতেই সাউন্ড লিমিটর লাগানো যেতে পারে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট শব্দযন্ত্রের কোনওটিতেই তা লাগানোর ব্যবস্থা রাখা হয়নি। সাউন্ড লিমিটর লাগিয়ে যেখানে সংশ্লিষ্ট শব্দযন্ত্রের ক্ষমতা তিন ওয়াট হওয়ার কথা ছিল, সেখানে সেই ক্ষমতা ৪০০ ওয়াট! যা নির্দিষ্ট মাত্রার ধারেকাছেও নেই। সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘সব থেকে অবাক লাগছে এটা দেখে যে সরকারি কোনও সংস্থা যখন দরপত্র ডাকছে, সেখানে কেন শব্দবিধি মেনে সাউন্ড লিমিটর লাগানোর বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে না!’’
আরও একটি বিষয়ের উল্লেখ করছেন পরিবেশবিদেরা। তা হল, দরপত্রের কোথাও জাতীয় পরিবেশ আদালত এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের উল্লেখিত শব্দবিধি মানার কোনও শর্তই রাখা হয়নি। রাজ্য পরিবেশ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘অথচ ২০০৪ সালের ২৭ অগস্ট নির্দেশিকা জারি করে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদই জানিয়েছিল, ‘রাজ্যের সব মাইক্রোফোন ব্যবহারকারীকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, খোলা জায়গায় মাইক্রোফোনের ব্যবহারে বাধ্যতামূলক ভাবে সাউন্ড লিমিটর লাগাতে হবে। না হলে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে’।’’
শব্দযন্ত্রে বাধ্যতামূলক ভাবে সাউন্ড লিমিটর লাগানোর বিষয়ে পরিবেশ আদালতে মামলা করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তিনি সংশ্লিষ্ট দরপত্র সম্পর্কে বলছেন, ‘‘শব্দযন্ত্রে সাউন্ড লিমিটর লাগাতে হবে, সেটা আদালতের নির্দেশে বার বার উঠে এসেছে। অন্যত্র তো সে নিয়ম মানা হয়ই না। কিন্তু এ বার দেখছি,
শব্দবিধি লঙ্ঘনের ডাক সরকারি মেলাতেই!’’
লাউডস্পিকার, সাউন্ড বক্স-সহ সব ধরনের শব্দযন্ত্র তৈরির সময়ই (ইনবিল্ট) সাউন্ড লিমিটর লাগানোর বিষয়টি বাস্তবায়িত করার জন্য গত মাসেই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে আবেদন জানিয়েছিল ‘নাগরিক মঞ্চ’। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত বলছেন, ‘‘অনেক সময়েই কোনও অনুষ্ঠানে প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত মাইক লাগানো হয়। শব্দ যাতে ঠিক মতো শোনা যায়, সে জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয়, শব্দবিধি নিয়ন্ত্রণে ন্যূনতম নিয়মও মানা হয় না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy