সুনসান: এখনও বন্ধ কুমোরটুলির অধিকাংশ শিল্পীর স্টুডিয়ো। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
করোনা পরিস্থিতিতে প্রতিমার দামের অর্ধেকটাই আগেভাগে দিতে হবে— বায়না করতে আসা এক পুজো উদ্যোক্তাকে এ কথা সাফ জানিয়েছিলেন কুমোরটুলির চায়না পাল। তা শুনে হাতে হাজার পাঁচেক টাকা দিয়ে ওই উদ্যোক্তা বলে যান, ‘‘কাজটা শুরু তো করুন! বাকি টাকা পরে দিয়ে যাচ্ছি।’’ কিন্তু এই আশ্বাসে আর মন সায় দিচ্ছে না মৃৎশিল্পী চায়নার। বলছেন, ‘‘গত কয়েক মাসে বাসন্তী-অন্নপূর্ণা প্রতিমা তৈরি করে একটাও বিক্রি করতে পারিনি। অথচ তখন সাত জন শ্রমিক আমার কাছে কাজ করেছেন। অগ্রিমের পরিমাণ শুনে পুরনো ক্রেতাদের অনেকে রাগারাগিও করছেন। তবু স্থির করেছি, পুরো অগ্রিম না পেলে দুর্গা তৈরিতে হাতই দেব না।’’
অন্যান্য বছরে এ সময় থেকেই দম ফেলার সময় থাকে না কুমোরটুলির শিল্পীদের। রথের দিন থেকে পরপর বায়না আসতেই থাকে। চলে আসেন শ্রমিকেরাও। এ বছর অল্পস্বল্প বায়না শুরু হলেও প্রতিমা তৈরির কাজে হাত লাগাতে গড়িমসি করছেন মৃৎশিল্পীরা। অনেকের স্টুডিয়ো তো এখনও তালাবন্দি।
কেন এই অবস্থা? কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সংস্কৃতি সমিতির সম্পাদক রণজিৎ সরকার জানাচ্ছেন, নোটবন্দি এবং জিএসটি পর্বের থেকে এ বারের পরিস্থিতি আরও কঠিন। লকডাউন, আনলক পর্ব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন মাসে মুখ থুবড়ে পড়েছে ব্যবসা। শিল্পীদের হাতে টাকা প্রায় নেই। অথচ বায়না করতে এসে অনেকেই মাত্র দু’-পাঁচ হাজার টাকা অগ্রিম দিচ্ছেন। এ অবস্থায় ফের ট্যাঁকের পয়সা খরচ করে দুর্গাপ্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করতে থমকাচ্ছেন শিল্পীরা। রণজিতের
কথায়, ‘‘শেষমেশ যদি পুজোটাই না হয়, তা হলে প্রতিমা তৈরি করেও
শিল্পীরা দাম পাবেন না। অন্নপূর্ণা-বাসন্তীর মতো দুর্গাপ্রতিমাও পড়ে থাকবে। সেটা কেউ চাইছেন না। তাই বায়না হলেও প্রতিমা তৈরি শুরু করেননি অনেকে।’’ পুজো আদৌ হবে কি না, সেই আশঙ্কায় এখনই বেশি টাকা ঢালতে নারাজ উদ্যোক্তারাও। টালা এলাকার একটি পুজো কমিটির তরফে দীপক বসাক জানাচ্ছেন, লক্ষাধিক টাকা দামের প্রতিমার জন্য আপাতত ১০ হাজার অগ্রিম দিয়ে এসেছেন কুমোরটুলিতে। শিল্পীকে বলেছেন, মাঝেমধ্যে গিয়ে আরও কিছু টাকা দেওয়া হবে।
কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সংস্কৃতি সমিতির আর এক সম্পাদক বাবু পাল জানাচ্ছেন, অন্য বছরের মতো কোমর বেঁধে নামার বদলে এ বার ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছেন তাঁরা। বলছেন, ‘‘সমিতির তরফে সব শিল্পীকেই বলা হয়েছে, দামের ৩০ শতাংশ অগ্রিম চাইতে। কারণ কাঁচামালের দাম বেড়েছে, হাতে টাকাও কম। ফের লোকসানের মুখ দেখতে কেউই রাজি নই।’’
এর সঙ্গে রয়েছে শ্রমিক সমস্যাও। সাধারণত পুজোর কয়েক মাস আগে থেকে কাজ উতরে দিতে আশপাশের জেলা থেকে শ্রমিকেরা আসেন কুমোরটুলিতে। এ বার লকডাউনে কাজ না-থাকায় অধিকাংশ শ্রমিককেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন শিল্পীরা। রথের পরে শ্রমিকেরা আস্তে
আস্তে ফিরতে শুরু করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু ফের রাজ্যের কন্টেনমেন্ট জ়োনে কড়া লকডাউন শুরু হওয়ায় তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। মৃৎশিল্পী বাবু বলছেন, ‘‘যে শ্রমিকেরা অন্যান্য বছর বাইরে চলে যেতেন, তাঁরা এ বার কুমোরটুলিতে আসতে চাইছেন। তাই শ্রমিকের অভাব হবে না। কিন্তু বেশি প্রতিমা তৈরি না-হলে তো শ্রমিকও বেশি লাগবে না। আবার কড়াকড়ির জেরে ওঁরা আসতে না-পারলেও প্রতিমা তৈরিতে দেরি হবে।’’
যদিও রণজিৎ আশাবাদী, প্রয়োজনে স্লগ ওভারে চালিয়ে খেলে ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারবেন। তাঁর কথায়, ‘‘অগস্টেও যদি জোরকদমে শুরু করা যায়, তবে পুজোর আগে কাজ ঠিকই শেষ করে ফেলবে কুমোরটুলি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy