Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Hatiyara

পাঁচিল ভেঙে চাপা পড়ে মৃত্যু

গলির মুখে মার্বেলের গুদামের পাঁচিল ভেঙে পড়েই মৃত্যু দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।

পাঁচিল ভেঙে এখানেই মৃত্যু হয় সায়ন রায়ের (ইনসেটে)। ছবি তুলতে ভিড় জমিয়েছেন স্থানীয়েরা। বুধবার, হাতিয়াড়ায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

পাঁচিল ভেঙে এখানেই মৃত্যু হয় সায়ন রায়ের (ইনসেটে)। ছবি তুলতে ভিড় জমিয়েছেন স্থানীয়েরা। বুধবার, হাতিয়াড়ায়। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৮ ০২:৪২
Share: Save:

ঘণ্টা বাজতেই সকাল আটটা নাগাদ আট-দশ জন ছাত্র গলির রাস্তা থেকে দৌড়ে স্কুলে ঢুকে যায়। আর একটু হলে সাইকেলে করে ভাইকে নিরাপদে স্কুলের গেটে নামিয়ে বাড়ি ফিরতে পারত দাদাও। কিন্তু হল না। তার আগেই গলির মুখে মার্বেলের গুদামের পাঁচিল ভেঙে চাপা পড়ল দুই ভাই। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হল দাদা সায়ন রায়ের (১২)। কোনওমতে বেঁচে গিয়েছে ভাই অয়ন। বুধবার সকালে এই ঘটনা ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নিউ টাউন থানার হাতিয়াড়ার অরুণাচল। দেহ আটকে চলে বিক্ষোভ। ভাঙচুর হয় গুদামে। শেষে পুলিশের বিশাল বাহিনী গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে। দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গুদাম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানোর মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে খবর, অরুণাচলে সুভাষপল্লির বাড়ি থেকে প্রতিদিন সাইকেলে করে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র অয়নকে সরস্বতী শিশু মন্দিরে পৌঁছে দিত দাদা। বাড়ি ফিরে নিজে স্কুলের জন্য তৈরি হত বাগুইআটির দেশবন্ধুনগরে চিত্তরঞ্জন কলোনি হিন্দু বিদ্যাপীঠের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সায়ন।

এ দিন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সুজয় বসু জানান, গুদামের সামনে একটি গাড়ি থেকে জিনিসপত্র নামাচ্ছিলেন ঠিকা শ্রমিকেরা। স্ল্যাব, টাইলস নামিয়ে সেগুলি পাঁচিলের গায়ে ঠেস দিয়ে রাখা হচ্ছিল। সুজয়ের কথায়, ‘‘পাঁচ ইঞ্চির গাঁথনির পাঁচিলে হেলান দিয়ে থরে থরে রাখা হচ্ছিল স্ল্যাবগুলি। পাশের রাস্তা দিয়ে শিশুরা তখন স্কুলে যাচ্ছে। হঠাৎ ছেলে দু’টির উপরে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল পাঁচিল।’’ বিকট শব্দ শুনে স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুলের শিক্ষকেরা ছুটে আসেন। অয়নকে সঙ্গেসঙ্গে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সায়নের দেহ ওঠাতে গিয়ে বাসিন্দারা দেখেন, মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে রাস্তার উপরে ছড়িয়ে রয়েছে। ওই দৃশ্য দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ দাসের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে নিয়মের তোয়াক্কা না করে ভাড়া নেওয়া গুদাম চত্বর ব্যবহার করছেন এক ব্যক্তি। পুলিশ গেলে সায়নের দেহ তুলতে বাধা দেন বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, গুদামের মালিককে ঘটনাস্থলে আসতে হবে। এরই মধ্যে একদল যুবক গুদাম চত্বরের শেডের নীচে রাখা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। গাড়ি জ্বলতে থাকলে আতঙ্ক ছড়ায়। শেষে বিশাল পুলিশ বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

পুলিশ জানায়, অয়নের অবস্থা স্থিতিশীল। জ্ঞান ফেরার পর থেকে মায়ের খোঁজ করেছে সে। এ দিকে, বড় ছেলের মৃত্যুর বাকরুদ্ধ মাছ ব্যবসায়ী বাবা সমরজিৎ রায়। মা অনিমার মুখে একটাই কথা, ‘‘সায়ন কখন ফিরবে? ওকে তো স্কুলে যেতে হবে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Hatiyara Bidhan Nagar Saltlake Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE