Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

পুলিশের হাত শক্ত করবে ভলান্টিয়ার

ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলা সূত্রের খবর, দক্ষিণ শহরতলির নোদাখালি থানার অধীনে ১২টি পঞ্চায়েত এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির পাশাপাশি ইভটিজিংয়ের ঘটনাও ঘটে নিয়মিত।

—প্রতীকী ছবি

—প্রতীকী ছবি

শুভাশিস ঘটক
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৫৩
Share: Save:

সিভিক ভলান্টিয়ারদের হাতিয়ার করেই এ বার এলাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করছে পুলিশ।

ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলা সূত্রের খবর, দক্ষিণ শহরতলির নোদাখালি থানার অধীনে ১২টি পঞ্চায়েত এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির পাশাপাশি ইভটিজিংয়ের ঘটনাও ঘটে নিয়মিত। কলকাতা ও বন্দর এলাকা লাগোয়া থানাগুলিতে অপরাধীদের উপদ্রব খুব। নিরাপত্তা বাড়াতে তাই সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে এই জাল বোনার ভাবনা।

কী ভাবে এই নজরদারির পরিকল্পনা করছে পুলিশ?

জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ১২টি পঞ্চায়েত এলাকা থেকে পাঁচ জন করে বাসিন্দাকে সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক সিভিক ভলান্টিয়ারকে নিজের এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। কারণ, সেখানের সবটা তাঁর নখদর্পণে থাকার কথা। প্রতিদিনের নজরদারির নিয়মাবলি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

কী রকম নিয়ম? প্রথমে এলাকার স্কুলগুলির উপর নজরদারি চালানো হয়। বেলা বাড়লে ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের সামনে নজরদারির ব্যবস্থাও ওঁরাই করেন। কারণ, ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের লাইনে দাঁড়ান মানুষ প্রায়ই সাইকেল চুরির অভিযোগ করেন। বিকেলে বিভিন্ন বালিকা বিদ্যালয় ও কোচিং সেন্টারের উপর নজরদারি চালানো হয়। এর কারণ, অভিভাবকদের কাছ থেকে প্রায়ই ইভটিজ়িংয়ের অভিযোগ জমা পড়ছে থানায়। যার বেশির ভাগের উৎসস্থল ওই সব এলাকা।

ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার এক কর্তার কথায়, সাধারণত থানার সাদা পোশাকের পুলিশ এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে নজরদারি করেন। কিন্তু সিভিক ভলান্টিয়ারেরা স্থানীয় বাসিন্দা। স্থানীয় প্রত্যেক মানুষ তাঁদের পরিচিত। অন্য দিকে, থানার অফিসারেরা আসেন বাইরে থেকে বদলি হয়ে। ফলে এলাকার মানচিত্র আয়ত্তে আনতে সময় লাগে তাঁদের। সিভিক ভলান্টিয়ারদের পরিচিতির ‘নেটওয়ার্ক’ প্রায় নিখুঁত, নির্ভুল বলেই মত পুলিশকর্তাদের। তাঁদের এলাকাভিত্তিক বদলির কোনও ব্যাপারও নেই। সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে নজরদারির দল তৈরি করলে তাই সুবিধাই বেশি।

নোদাখালি থানা এলাকায় প্রায় ২৫০ সিভিক ভলান্টিয়ার রয়েছেন। অধিকাংশই ওই থানার বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ-সহ থানা এলাকার নানা অপরাধমূলক কাজের ক্ষেত্রে নজরদারির জন্য তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে ৬০ জনের বিশেষ দল।

পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই সিভিক ভলান্টিয়ারদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। গ্রুপের সঙ্গে সরাসরি থানার আইসি-র সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। যেমন নোদাখালি থানার আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও সিভিক কোনও ঘটনার রিপোর্ট ওই গ্রুপে পোস্ট করলেই মৈনাকবাবু সঙ্গে সঙ্গে তা জানতে পারবেন। প্রয়োজনে পুলিশ পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।’’ এক জেলা কর্তার কথায়, কোনও বহিরাগত মোটরবাইক আরোহী এলাকায় এলেই তা ছবি তুলে ওই গ্রুপে পোস্ট করে দেবেন এলাকার সিভিক ভলান্টিয়ারেরা। ওই ছবি কয়েক মিনিটের মধ্যেই ৬০ জন সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ থানার আইসি-র কাছে পৌঁছে যাবে। সে ক্ষেত্রে ওই বহিরাগত মোটরবাইক আরোহীকে ট্র্যাক করে ধরতে মিনিট দশেক সময় লাগবে। শুধু এই কাজই নয়। এলাকায় কোনও অপরিচিত মুখ দেখলেই সিভিক ভলান্টিয়ারেরা তাঁর খোঁজ নিয়ে থানায় তা লিপিবদ্ধ করে রাখবেন। এবং ওই অপরিচিত ব্যক্তির গতিবিধির উপরে নিয়মিত নজরদারি রাখবেন। সে ক্ষেত্রে এলাকায় কোনও দাগি অপরাধী আস্তানা বাঁধলে তা সহজেই শনাক্ত করা যাবে।

কিন্তু সিভিক ভলান্টিয়ারেরা কি সব সময় তাঁদের কর্তব্য পালন করছেন? সেই বিষয়টি কী ভাবে জানতে পারবেন থানার আইসি?

এক কর্তার কথায়, ফাঁকি দেওয়ার উপায় নেই। প্রতি দু’ঘণ্টা অন্তর এক সিভিক ভলান্টিয়ারের সহকর্মী আর এক জনের ছবি মোবাইলে তুলে সে কোথায় রয়েছে তা গ্রুপে পোস্ট করবে। থানায় বসেই সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাজের উপর নজর রাখবেন আইসি।

অন্য বিষয়গুলি:

Crim Police Civic Volunteer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE