Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

সরছেন জাদুঘরের অধিকর্তা

একের পর এক ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ ওঠার পরে অবশেষে কলকাতার ভারতীয় জাদু‌ঘরের অধিকর্তা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিল সংগ্রহালয়ের অছি পরিষদ। এখনকার অধিকর্তা বি বেণুগোপাল দিল্লির ‘ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি’ থেকে দু’বছরের জন্য লিয়েনে এসে কলকাতা জাদুঘরের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়াদ শেষের আগেই তাঁকে ফিরে যেতে হচ্ছে।

অলখ মুখোপাধ্যায় ও দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০০:১৭
Share: Save:

একের পর এক ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ ওঠার পরে অবশেষে কলকাতার ভারতীয় জাদু‌ঘরের অধিকর্তা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিল সংগ্রহালয়ের অছি পরিষদ। এখনকার অধিকর্তা বি বেণুগোপাল দিল্লির ‘ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি’ থেকে দু’বছরের জন্য লিয়েনে এসে কলকাতা জাদুঘরের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়াদ শেষের আগেই তাঁকে ফিরে যেতে হচ্ছে।

অছি পরিষদ সূত্রে খবর, জাদুঘরে পরপর বেশ কয়েকটি পুরাবস্তু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অধিকর্তা পরিবর্তনের কথা ভাবতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন। অছি পরিষদই এই সংগ্রহশালার সর্বোচ্চ নিয়ামক। পরিষদের চেয়ারম্যান স্বয়ং রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। বৃহস্পতিবার জাদুঘরের অছি পরিষদের বৈঠক ছিল। সম্প্রতি জাদুঘরের দুই গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ, ভারহুতের যক্ষ ও গান্ধারের স্তূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দু’টি ক্ষেত্রেই জাদুঘর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ। এ দিন অছি পরিষদের বৈঠকে ওই দু’টি পুরাবস্তুর ক্ষতি সম্পর্কে অধিকর্তার কৈফিয়ৎ তলব করেছেন রাজ্যপাল। ১৫ দিনের মধ্যে তার উত্তর চাওয়া হয়েছে।

জাদুঘর সূত্রের খবর, বেণুগোপাল ২০১৩-র অক্টোবরের শেষ দিকে কলকাতা জাদুঘরের দায়িত্ব নেন। মেয়াদ ছিল দু’বছরের। কিন্তু তার ছ’মাস আগেই তাঁকে ফিরে যেতে হচ্ছে। বেণুগোপাল অবশ্য গত বছর ডিসেম্বরেই জাদুঘরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। এ দিন তিনি ফোন ধরেননি।

অছি পরিষদ সূত্রে খবর, জাদুঘরের নতুন অধিকর্তা হতে পারেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের অধিকর্তা জয়ন্ত সেনগুপ্ত। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছ থেকে ইতিমধ্যেই জয়ন্তবাবুর নাম করে একটি প্রস্তাব রাজ্যপালের কাছে গিয়েছে। সেখানে যে সব নথি চাওয়া হয়েছিল, তা সংস্কৃতি মন্ত্রককে দেওয়াও হয়েছে। এ বার ‘অ্যাপয়েন্টমেন্টস কমিটি অব দ্য ক্যাবিনেট’ (এসিসি) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘এই রকম প্রস্তাব রয়েছে বলে কানে এসেছে। কিন্তু চূড়ান্ত কিছু জানি না।’’

অছি পরিষদের সদস্য শচীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বেণুগোপালের সময়ে বেশ কয়েকটি মূল্যবান প্রত্নবস্তুর ক্ষতি হয়েছে। কলকাতা জাদুঘরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহালয়ের দায়িত্বে তাই বাধ্য হয়েই অন্য কাউকে আনার কথা ভাবতে হয়েছে।’’

বেণুগোপালের আমলেই ভারতীয় জাদুঘরের ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সংস্কারের কাজ হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে একের পর এক সংগ্রহ। রামপূর্বার অশোক স্তম্ভের শীর্ষদেশের সিংহ মূর্তিটি ভেঙে যাওয়ার খবর মেলে ২০১৩-র ডিসেম্বর নাগাদ। ১৯০৭ সালে বিহারের চম্পারণে খনন চালিয়ে এই সিংহ মূর্তিটি উদ্ধার করেন দয়ারাম সহানি। সম্রাট অশোকের সময়ে তৈরি ওই মূর্তিটি খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকের। দ্বাদশ শতকের পাথরের দশভুজা দুর্গামূর্তি ১৮৭০ সালে মানভূমের দুলমির ধ্বংসস্তূপ থেকে মেলে। দুর্গাটি পুরাতত্ত্ব বিভাগের গ্যালারিতে রাখা ছিল। ২০১৩-র নভেম্বরে জাদুঘর সংস্কারের সময়ে মূর্তিটির একটি হাত ভেঙে যায়। জাদুঘর কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, মূর্তিটি নাকও ভেঙেছিল। সেই ভাঙা অংশ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো করে আঠা দিয়ে জোড়া লাগান।

অন্ধ্রপ্রদেশের অমরাবতী থেকে প্রাপ্ত খ্রিস্টীয় দ্বিতীয়-তৃতীয় শতকের একটি বৌদ্ধস্তূপের দেওয়ালের ভাঙা অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই প্রাচীরে মহামায়ার স্বপ্ন থেকে গৌতম বুদ্ধের জন্ম-কথা খোদাই করা ছিল। সংস্কারের সময়ে ভারহুত গ্যালারি যখন বন্ধ ছিল, তখন এই প্রাচীরের অংশে ফাটল ধরে বলে অভিযোগ।

সংরক্ষণ শাখার প্রধান সুনীল উপাধ্যায়ের নিখোঁজ হওয়ার দু’দিন আগে ২০১৪-র ১ জুলাই জাদুঘরের চারতলার ছাদের ভাঙা অংশ দিয়ে বৃষ্টির জল ঢুকে যায় মুখোশ গ্যালারিতে। জাদুঘর সূত্রের খবর, ৮৯টি মুখোশের ৩টি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। বেশ কয়েকটি আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

ভারহুত থেকে আনা যক্ষিণী মূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর মেলে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। তার পরেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় খ্রিস্টীয় প্রথম-দ্বিতীয় শতকের গান্ধার স্তূপ। জাদুঘর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কোনও পুরাবস্তু ভেঙে গেলে তা সংস্কারের ক্ষেত্রেও গা ছাড়া ভাব দেখিয়েছেন তাঁরা। শচীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিক কালে কোনও রকম দায়িত্ববোধেরই পরিচয় দেননি। একাধিক পুরাবস্তু ভেঙেছে এবং তা মেরামতির সময়েও অযোগ্য লোককে দিয়ে কোনওমতে কাজ সারা হয়েছে।’’ অছি পরিষদের একাধিক বৈঠকে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। যথাযথ উত্তর মেলেনি। অছি পরিষদ সূত্রে খবর, নভেম্বরে পরিষদের বৈঠকে রামপূর্বার সিংহ মূর্তি ভাঙা নিয়েও অধিকর্তার কাছে কৈফিয়ৎ তলব করা হয়েছিল।

জাদুঘরের মিডিয়া মুখপাত্র অশোক ত্রিপাঠী অবশ্য এগুলিকে ক্ষতি বলতে নারাজ। তিনি জানান, পুরনো এই সংগ্রহগুলি নষ্টের পিছনে জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কোনও গাফিলতি নেই। আর কিছু জিনিস সামান্য নষ্ট হলেও, তাদের বিশেষজ্ঞেরা নিয়ম মেনে সেগুলি নতুন করে সারানোর ব্যবস্থা করেছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE