Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

ছটপুজোর দিনে রবীন্দ্র সরোবরের প্রবেশপথে পুলিশ ছিল না কেন, ক্ষুব্ধ প্রাতর্ভ্রমণকারীরা

মই বেয়ে জলে নেমে শুরু হল পুজোপাঠ। ফুল, মালা ভাসানোর সঙ্গেই দেদার ফাটল শব্দবাজি, চলল যজ্ঞ। সব দেখেশুনে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের প্রশ্ন, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য প্রশাসন কেন পাহারা তুলে নিল, তা বোঝা গেল না।

সরোবরের গেটের সামনে ডিজে বাজিয়ে নাচ।

সরোবরের গেটের সামনে ডিজে বাজিয়ে নাচ।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ০২:২০
Share: Save:

রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে প্রাতর্ভ্রমণ করে যাঁদের দিন শুরু হয়, জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন তাঁরা। ভেবেছিলেন, এ বার হয়তো দূষণের হাত থেকে বাঁচবে সরোবর। কিন্তু শনিবার ভোর হতেই তাঁরা টের পেলেন, সেই ভাবনাটাই ভুল!

কারণ, রবীন্দ্র সরোবরের প্রবেশপথে কোনও নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় রীতিমতো দরজা ভেঙে সেখানে ঢুকে পড়লেন ছটপুজোর পুণ্যার্থীর দল। মই বেয়ে জলে নেমে শুরু হল পুজোপাঠ। ফুল, মালা ভাসানোর সঙ্গেই দেদার ফাটল শব্দবাজি, চলল যজ্ঞ। সব দেখেশুনে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের প্রশ্ন, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য প্রশাসন কেন পাহারা তুলে নিল, তা বোঝা গেল না। তা হলে কি আদালতের নির্দেশও মানা হবে না? সামান্য একটা সরোবরও কি রক্ষা করতে পারে না প্রশাসন?

ছটপুজোর পরে রবীন্দ্র সরোবরের দূষণের কথা ভেবেই এখন আতঙ্কিত ওই প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ ছিল, রবীন্দ্র সরোবরে ছটের পুজো-অর্চনা করা যাবে না। আর এ সবের হাত থেকে সরোবরকে রক্ষা করার দায়িত্ব ছিল রাজ্য প্রশাসনের। কিন্তু আদতে প্রশাসন তা করতে ব্যর্থ হওয়ায় এ দিন ক্ষোভ উগরে দিলেন তাঁরা। এ দিন মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় নামে এক প্রাতর্ভ্রমণকারী বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশের পরেও মনে আশঙ্কা ছিল। আসলে এখন তো ‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই’-এর মতো অবস্থা। আর সেই আশঙ্কাই কিন্তু শেষমেশ সত্যি হল।’’

আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞাই সার! গেট ভেঙে, প্রশাসনের সামনেই ছটপুজো রবীন্দ্র সরোবরে

জাতীয় পরিবেশ আদালত রবীন্দ্র সরোবর রক্ষার দায়িত্ব দিয়েছিল রাজ্যের মুখ্যসচিব, কলকাতার পুলিশ কমিশনার এবং ‘কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (কেএমডিএ)-র কার্যনির্বাহী আধিকারিকের উপরে। প্রাতর্ভ্রমণকারীদের প্রশ্ন, যাঁদের উপরে দায়িত্ব ছিল, তাঁরা কি আদৌ সেই দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছেন? যদি করে থাকেন, তা হলে সরোবরের একের পর এক গেট ভাঙা হল কী ভাবে? পুলিশি পাহারাই বা ছিল না কেন? ‘‘সরোবর রক্ষা তো হলই না। উল্টে সরোবরকে নৃশংস ভাবে ‘খুন’ করা হল’’ বলেই মন্তব্য করেন মৃত্যুঞ্জয়বাবু।

আদালতের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখানোর ঘটনায় প্রশাসনের মদত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন পরিবেশকর্মী তথা প্রাতর্ভ্রমণকারী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘সরোবরকে রক্ষা করার ইচ্ছে কি আদৌ ছিল প্রশাসনের? তা হলে শুক্রবার রাত থেকে প্রতিটি গেটের পুলিশি নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হল কেন, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। কোনও নিরাপত্তা না থাকার ফলেই ফের দূষণ গ্রাস করল গোটা সরোবরকে।’’

সুমিতাদেবী জানান, রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজো বন্ধ নিয়ে ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর জাতীয় পরিবেশ আদালত প্রথম নির্দেশ দেয়। কিন্তু তাতেও কোনও কাজ না হওয়ায় একাধিক বার মামলা হয়। আদালত পরেও পুজো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। গত ডিসেম্বরেও জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দেয়, রবীন্দ্র সরোবরে কোনও অবস্থাতেই ছটপুজো করা যাবে না।

আরও পড়ুন: দিলীপের গড় খড়্গপুরে প্রেমচাঁদ, করিমপুরে জয়প্রকাশ, উপনির্বাচনে তিন কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা বিজেপির

‘‘আদালতের নির্দেশও তো কেউ মানছেন না। এর পরে আর কী করা যায়, সেটাই বুঝতে পারছি না। সরোবরের পরিচ্ছন্নতা রক্ষার স্বার্থে আমরাও দু’দিন প্রাতর্ভ্রমণে যাইনি। কিন্তু যে ভাবে গেট ভাঙল, তাতে আর কিছু বলার নেই,’’ বললেন আর এক প্রাতর্ভ্রমণকারী রিনি চৌধুরী। একই অভিমত অন্য তাঁর মতো প্রাতর্ভ্রমণকারীদেরও। এর শেষ কোথায়, তারই উত্তর খোঁজার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। আর ভাবছেন, আদালতের নির্দেশের পরে কী ভাবে তাঁদের বিশ্বাস, ভরসা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy