সতর্ক করতে বসেছে বোর্ড। পরমা উড়ালপুলে। —নিজস্ব চিত্র।
উড়ালপুলের এক ধারে মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে মদ্যপান করছেন কয়েক জন যুবক। পাশ দিয়ে হু হু করে ছুটে চলেছে গাড়ি। আধ ঘণ্টা পার করে উল্টোডাঙার দিকে রওনা দিলেন ওই যুবকেরা।
উড়ালপুলের গড়িয়ামুখী রাস্তার উপরে, মিলন মেলার কাছে বাঁকের মুখে বাইক থামিয়ে নিজস্বী তুলছিলেন এক দম্পতি। কোনওরকমে তাঁদের পাশ কাটিয়ে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে গেল একটি গাড়ি। অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন ওই দম্পতি।
উপরের দু’টি চিত্রই পরমা উড়ালপুলের। সাড়ে চার কিমি-র বেশি লম্বা ওই উড়ালপুল চালু হওয়ার পর থেকেই সেখানে পুলিশি নজরদারি না থাকার অভিযোগ উঠেছে একাধিক বার। আরও অভিযোগ, নজরদারিতে খামতির কারণেই উড়ালপুলের মাঝপথে দাঁড়িয়ে কেউ নিজস্বী তুলছেন, কখনও আবার মোটরবাইক রেস হচ্ছে। লালবাজার সূত্রের খবর, এ সব আটকাতে ওই উড়ালপুলকে এ বার মুড়ে ফেলা হচ্ছে সিসিটিভি-র নজরদারিতে। উড়ালপুল তদারকির দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ-র তরফে ওই সিসিটিভি বসানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই পার্ক সার্কাসের দিকে বসানো হয়েছে দু’টি ক্যামেরা। যার কন্ট্রোল রুম রয়েছে ট্রাফিক গার্ডে। বাকি প্রায় ২৮টি ক্যামেরা চলতি মাসের মধ্যেই বসানো হয়ে যাবে বলে কেএমডিএ সূত্রের খবর।
লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘পরমা উড়ালপুলের উপরে গাড়ির গতি তুলনায় বেশি থাকে। উড়ালপুলে দু’টি বিপজ্জনক বাঁক ও গাড়ির গতি বেশি হওয়ায় বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। সব সময়ে পুলিশ অফিসার পাঠিয়ে তাতে নজরদারি চালানো সম্ভব নয়। তাই ক্যামেরা বসানো হলে উড়ালপুলের উপরে কী হচ্ছে, তা জানা যাবে। পাশাপাশি, উড়ালপুলের উপরে যে কোনও অপরাধও আটকানো যাবে।’’
লালবাজার সূত্রের খবর, গত অক্টোবরে ওই উড়ালপুল চালু হওয়ার পর থেকে বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যুও হয়েছে কয়েক জনের। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, বেপরোয়া গতির ফলেই ওই দুর্ঘটনা।
এত দুর্ঘটনা সত্ত্বেও পুলিশ কেন নিজে থেকে নজরদারি চালাচ্ছে না?
পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, পরমা উড়ালপুলের সাড়ে চার কিমি অংশের ট্রাফিক ব্যবস্থা দেখার দায়িত্ব রয়েছে ইস্ট ট্রাফিক গার্ড ও তিলজলা ট্রাফিক গার্ডের উপরে। উড়ালপুলে ওঠা এবং নামার মুখে পুলিশ থাকলেও উড়ালপুলের উপরে ট্রাফিক পুলিশের দেখা মেলে না বলেই অভিযোগ। লালবাজারের কর্তাদের অবশ্য দাবি, গাড়ির গতি অত্যন্ত বেশি থাকায় উড়ালপুলের উপরে যান শাসন করা কার্যত অসম্ভব। বরং সিসিটিভি থাকলে পুলিশি নজরদারি ভাল মতো করা যাবে।
কেএমডিএ এবং পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, ২৮টি ক্যামেরা বসানো হবে উড়ালপুলের উপরে। আসা-যাওয়া, দু’পাশের রাস্তাতেই থাকবে সিসিটিভি। প্রতিটি সিসিটিভি-তে প্রায় ৬০ মিটার পর্যন্ত নজরদারি চালানো যাবে। কলকাতা ট্রাফিক বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘কেএমডিএ ওই সিসিটিভি বসালেও তা নজরদারি করবে পুলিশ। এর জন্য ইস্ট ট্রাফিক গার্ডে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখানে সর্বক্ষণের জন্য পুলিশকর্মীরা থাকবেন। উড়ালপুলে কোনও রকম অস্বাভাবিক কিছু দেখলে তাঁরা লালবাজার এবং আধিকারিকদের জানাবেন।’’
পুলিশ জানায়, এজেসি বসু রোড উড়ালপুল-সহ শহরের অন্য উড়ালপুলগুলিতে সিসিটিভি থাকলেও তা পুরো এলাকায় নজরদারি করে না। তবে তাদের দাবি, পরমা উড়ালপুলে সিসিটিভি বসানো শেষ হলে পুরো উড়ালপুলেই নজরদারি চালানো যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy