ট্রাফিক সার্জেন্টদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়া বা দুর্ব্যবহারের অভিযোগ যে ভিত্তিহীন নয়, তা কার্যত কবুল করল পুলিশ। কারণ, এ বার শহরের ট্রাফিক গার্ডে কর্তব্যরত সার্জেন্টদের উপরে নজরদারি চালাতে ক্যামেরার ব্যবস্থা করছে খোদ লালবাজারই।
পুলিশ সূত্রে খবর, ক্যামেরা লাগানো থাকবে ওই পুলিশকর্মীদের শরীরেই। লালবাজারের পুলিশকর্তাদের দাবি, এর ফলে ‘দুর্ব্যবহার’ বা ‘দাদাগিরি’র প্রবণতা কমানো যাবে।
কেন এই সিদ্ধান্ত? পুলিশ জানায়, কিছু দিন আগে হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোর অভিযোগে এক যুবককে আটকান কর্তব্যরত সার্জেন্ট। আইন ভাঙার জন্য বাইক আটকে জরিমানা করতে গেলে উভয় পক্ষের বচসা শুরু হয়। ওই যুবকের অভিযোগ, ওই ট্রাফিক সার্জেন্ট দুর্ব্যবহার করেন এবং তাঁর কাছে টাকাও চান। যা অস্বীকার করেন ওই সার্জেন্ট। পরে থানার মধ্যস্থতায় অবস্থা আয়ত্তে আসে। আবার, রাসেল স্ট্রিটে বেআইনি পার্কিংয়ের জন্য একটি প্রাইভেট গাড়িতে কাঁটা লাগিয়ে দিয়েছিলেন এক সার্জেন্ট। পরে গাড়ির মালিক ঘটনাস্থলে এসে চাকা পাল্টে পালাতে চেষ্টা করলে পুলিশ অফিসারেরা তাতে বাধা দেন। অভিযোগ, সেই সময়ে ওই সার্জেন্ট গালিগালাজ করেন গাড়ির মালিককে। পরে লালবাজারে এ নিয়ে অভিযোগও দায়ের করেন ওই ব্যক্তি।
দুর্ব্যবহারের দু’টি ঘটনাই ট্রাফিক আইন ভাঙার দায়ে জরিমানা করার সময়ে ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছিলেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। জরিমানাকে কেন্দ্র করে এই ধরনের আপত্তিকর আচরণ ঠেকাতেই এ বার কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্টদের ক্যামেরা দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত বলে লালবাজারের দাবি। যাতে ট্রাফিক আইন ভাঙার কেস দেওয়ার পুরো ঘটনার ছবি ক্যামেরাবন্দি হয়ে থাকে, এবং প্রয়োজনে পরবর্তী সময়ে সেই ফুটেজ ব্যবহার করা যায়।
পুলিশ জানায়, পাঁচ মেগাপিক্সেল-এর প্রতিটি ক্যামেরায় রয়েছে ৩২ জিবি মেমরি কার্ড। হার্ড ডিস্ক নেই। এগুলিতে প্রায় ৮ ঘণ্টা পঞ্চাশ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত অডিও-ভিডিও রেকর্ডিং করা যাবে। ফলে পথচারী ও যানচালকদের সঙ্গে সার্জেন্টদের কথা বা কার্যকলাপ রেকর্ড হয়ে থাকবে। পরে মেমরি কার্ড থেকে ভিডিও লালবাজারে পাঠানো হবে।
লালবাজার সূত্রে খবর, পরীক্ষামূলক ভাবে গত সপ্তাহে আটটি ক্যামেরা চারটি ট্রাফিক গার্ডের হাতে দেওয়া হয়েছে। সেগুলি ব্যবহারও করছেন ওই চারটি গার্ডের সার্জেন্টরা। ট্রাফিক আইন ভাঙার কেস করার সময়ে পুরো ঘটনা রেকর্ড করে রাখছেন। যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা বলেন,‘‘পরীক্ষমূলক ভাবে আটটি ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। সাফল্য মিললে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সব ট্রাফিক গার্ডকেই ওই ক্যামেরা দেওয়া হবে। যাতে অফিসারদের বিরুদ্ধে ট্রাফিক কেস সংক্রান্ত অভিযোগে সহজেই নিষ্পত্তি করা যায়।’’
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, গত বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে লন্ডনে গিয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ। লন্ডন পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্টরা ওই ক্যামেরা ব্যবহার করে সুফল পেয়েছেন দেখে কলকাতা পুলিশে তা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। পরে তা বাস্তবায়নে বর্তমান পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার প্রথম দফায় কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে বেশ কয়েকটি বিদেশি ক্যামেরা কেনার সিদ্ধান্ত নেন। তার পরে চারটি ট্রাফিক গার্ডকে বেছে তাদের ওই ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে।
ক্যামেরা ব্যবহারে কেমন সুফল মিলছে? উত্তর কলকাতার এক সার্জেন্টের কথায়, ‘‘জরিমানা করার জন্য কোনও গাড়ি থামালেই বুক পকেটে থাকা ক্যামেরা অন করে দিচ্ছি। এতে ভিডিও তোলা যাচ্ছে। যেহেতু ক্যামেরা বাইরে থেকে চিহ্নিত করা যাচ্ছে, তাই অভিযুক্ত গাড়ির চালকও সর্তক হয়ে কথা বলছেন।’’
তবে ঘুষ নেওয়ার অভিসন্ধি থাকলে সার্জেন্ট নিজে ক্যামেরা চালু করবেন কি? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy