Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার প্রতারণা

টাকা সরাতে ব্যবহার কর্মী-অ্যাকাউন্ট

সংস্থার অ্যাকাউন্ট থেকে শুধু মাইনে নয়, লক্ষ লক্ষ টাকাও যাচ্ছে কয়েক জন কর্মীর অ্যাকাউন্টে! সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার প্রতারণার মামলার তদন্তে নেমে এমনটা জানতে পেরেছিলেন সিআইডি অফিসারেরা।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৬ ০৬:৩৬
Share: Save:

সংস্থার অ্যাকাউন্ট থেকে শুধু মাইনে নয়, লক্ষ লক্ষ টাকাও যাচ্ছে কয়েক জন কর্মীর অ্যাকাউন্টে! সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার প্রতারণার মামলার তদন্তে নেমে এমনটা জানতে পেরেছিলেন সিআইডি অফিসারেরা। বিষয়টি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে তাঁরা জানতে পারেন, সেই টাকা আবার নির্দিষ্ট সময় অন্তর তুলেও নেওয়া হয়েছে। সল্টলেকের ওই সংস্থার বিরুদ্ধে বিদেশি নাগরিকদের প্রতারণার অভিযোগের তদন্ত করছে সিআইডি।

তদন্তকারীদের দাবি, প্রতারণা করে বিদেশ থেকে আমদানি করা টাকা সরাতেই কর্মীদের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছিলেন অভিযুক্ত তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার মালিকেরা। সিআইডি কর্তারা বলছেন, প্রতারণার এমন কৌশল বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় দেখা গিয়েছে। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাও যে এমন কায়দায় টাকা পাচার করতে পারে, তা ভাবতে পারেননি তদন্তকারীরা।

প্রসঙ্গত, সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের একটি সংস্থার বিরুদ্ধে জার্মানি, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের নাগরিকদের সফ্‌টওয়্যার পরিষেবা দেওয়ার নাম করে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছিল। হাতিয়ে নেওয়া অর্থের পরিমাণও কয়েকশো কোটি টাকা। তদন্তে নেমে সংস্থার দুই মালিক-সহ আট জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। সম্প্রতি মামলার চার্জশিটও জমা দিয়েছেন সিআইডির সাইবার কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘তদন্তে যা যা উঠে এসেছে, সবই চার্জশিটে জানানো হয়েছে। এর থেকে বেশি বলা যাবে না। তবে এই মামলায় দেশের স্বার্থ ও সম্মান জড়িত।’’

সিআইডির এক কর্তা বলছেন, এই ঘটনায় একে তো বিদেশি নাগরিকেরা প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তার উপরে টাকাও পাচার হয়েছে। তাই জাতীয় স্বার্থ ও সম্মান জড়িয়ে গিয়েছে।

গোয়েন্দারা বলছেন, বিশ্বের প্রথম সারির একটি সংস্থার নাম করে এ রাজ্যের সংস্থাটির কর্মীরা বিদেশি নাগরিকদের ফোন করতেন। কথার ফাঁদে ফেলে প্রযুক্তির মাধ্যমেই এ রাজ্যে বসে বিদেশির কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতেন ও কার্যত কিছুই না করে শ’য়ে শ’য়ে ডলার কামিয়ে নিতেন। এমন প্রতারণার ফাঁদে পড়ে জার্মানির বহু নাগরিক সে দেশের পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। জার্মান পুলিশ ২০১২ থেকে তার তদন্তও করে চলেছিল। সম্প্রতি জার্মান পুলিশের একটি দল কলকাতায় আসে এবং এ রাজ্যের পুলিশকে ঘটনাটি জানায়। তার পরেই ধরপাকড় শুরু হয়।

সিআইডির অফিসারদের অনেকেরই দাবি, জাতীয় স্বার্থ জড়িয়ে যাওয়ায় আঁটঘাট বেঁধে তদন্তে নামা হয়েছে। সংস্থার অফিস থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া কম্পিউটার, হার্ড ডিস্ক ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্ট অবশ্য আসেনি। তার আগেই চার্জশিট জমা দিয়েছেন গোয়েন্দারা। ফরেন্সিক রিপোর্ট এলে তা সঙ্গে সঙ্গে আদালতকে জানানো হবে। চার্জশিট দিতে এত তড়িঘড়ি করা হল কেন? তদন্তকারীদের ব্যাখ্যা, সাইবার ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে সময় লাগে। সে জন্য বসে থাকলে গ্রেফতারের পরে ৯০ দিন কেটে যেত। তাতে অভিযুক্তেরা জামিন পেয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু ফরেন্সিক রিপোর্ট ছাড়া চার্জশিট দুর্বল হয়ে গেল না?

সিআইডি অফিসারেরা অবশ্য বলছেন, ইতিমধ্যেই যে সব তথ্যপ্রমাণ হাতে এসেছে, তাতে চার্জশিট যথেষ্ট জোরালো হয়েছে। ফরেন্সিক রিপোর্ট পেলে তা আরও জোরালো হবে। সিআইডির এক অফিসার জানান, এই মামলায় আদালতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদেশি নাগরিকদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এর আগে কালীঘাটে এক আইরিশ মহিলার ধর্ষণের ক্ষেত্রেও এ ভাবে সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি বিশ্বের যে প্রথম সারির তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার নাম করে প্রতারণা করা হয়েছিল, তারাও লিখিত ভাবে জানিয়েছে যে সল্টলেকের সংস্থাটি কোনও ভাবেই তাদের সঙ্গে যুক্ত নয়। ‘‘অভিযুক্তেরা হয়তো ভেবেছিলেন বিদেশি নাগরিকদের প্রতারণা করে পার পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তা আর হল না’’— মন্তব্য এক সিআইডি-কর্তার।

অন্য বিষয়গুলি:

IT sector CBI freud case Payroll
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE