Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

স্কুল সচল থাক, আর্জি কারমেলের

এ দিন আদালতে আগামী সোমবার পর্যন্ত ধৃতকে  পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সে দিন অভিযুক্তকে আলিপুর জেলা দায়রা আদালতে ‘পকসো’ (প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস) মামলার নির্দিষ্ট কোর্টে তোলা হবে।

জমায়েত: কারমেল স্কুলের সামনে জড়ো হয়েছেন অভিভাবকেরা। শনিবার, দেশপ্রিয় পার্কের কাছে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

জমায়েত: কারমেল স্কুলের সামনে জড়ো হয়েছেন অভিভাবকেরা। শনিবার, দেশপ্রিয় পার্কের কাছে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৪
Share: Save:

অবশেষে শিশু পড়ুয়ার যৌন হেনস্থার অভিযোগের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করলেন কারমেল প্রাইমারি স্কুল কর্তৃপক্ষ। সোমবার থেকে স্কুল যাতে স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারে, তার জন্য অভিভাবকদের সহযোগিতা চেয়েছেন স্কুলের প্রিন্সিপাল, সিস্টার শিল্পা। শনিবার বিক্ষুব্ধ অভিভাবকদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেন কর্তৃপক্ষ। অভিভাবকদের দাবি, কর্তৃপক্ষ তাঁদের অধিকাংশ দাবিই মেনে নিয়েছেন।

অন্য দিকে, এ দিন আদালতে আগামী সোমবার পর্যন্ত ধৃতকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সে দিন অভিযুক্তকে আলিপুর জেলা দায়রা আদালতে ‘পকসো’ (প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস) মামলার নির্দিষ্ট কোর্টে তোলা হবে।

কারমেল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে নাচের শিক্ষক যৌন হেনস্থা করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তার প্রতিবাদে গত শুক্রবার স্কুলের সামনেই তাণ্ডব চালান অভিভাবকদের একটি বড় অংশ। অভিযু্ক্তকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা থেকে শুরু করে তাঁরা পুলিশ পেটানোতেও জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। তবে শনিবার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দু’দফায় বৈঠক হওয়ার পরে তাঁরা খুশি।

স্কুলের সঙ্গে বৈঠকে যাঁরা ছিলেন, সেই প্রতিনিধিদলে থাকা এক অভিভাবক জানান, তাঁদের তরফে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে, স্কুলে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে। থাকতে হবে ভয়েস রেকর্ডারও। কোনও পুরুষ কর্মী ও শিক্ষককে রাখা যাবে না। পাশাপাশি, কোনও ছাত্রী শৌচালয়ে যেতে চাইলে তার সঙ্গে কোনও মহিলা কর্মীকে যেতে হবে। প্রতি তিন মাস অন্তর নিয়মিত ভাবে অভিভাবক-শিক্ষক বৈঠক ছাড়াও তাঁদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করতে হবে। কোনও বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার হলে তা ওয়েবসাইটে দিতে তো হবেই। পাশাপাশি অভিভাবকেরা যাতে তা জানতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে। অভিভাবকদের দাবি, স্কুল আশ্বাস দিয়েছে, তাঁদের দাবিগুলি মানা হবে। তবে এ দিন বেশ কয়েক জন অভিভাবক দাবি করেন, তাঁদের মেয়েরা স্কুলে আসতে চাইছে না। কারণ, এই সমস্ত খবর দেখে তারা ভয় পেয়ে গিয়েছে। নিগৃহীতা ছাত্রীর মা এ দিন জানান, স্কুলে যে নতুন প্রেক্ষাগৃহ তৈরি হয়েছে, সেখানেই মাঝেমধ্যে তাঁর মেয়েকে নিয়ে গিয়ে ‘বাজে ভাবে’ স্পর্শ করতেন ওই নাচের শিক্ষক। যখন-তখন কোলেও নিতেন। শুধু তাঁর মেয়ে নয়, এ রকম অনেক মেয়ের সঙ্গেই হয়েছে বলে তাঁর দাবি।

এ দিকে, কয়েক জন কলেজপড়ুয়া এ দিন স্কুলের সামনে পথনাটিকা করতে এলে তাঁদের সঙ্গে বিবাদ বাধে অভিভাবকদের একাংশের। যৌন হেনস্থার অভিযোগ নিয়ে আর কোনও কথা বলতেই তাঁরা রাজি নন। এক অভিভাবক বলেন, ‘‘আমরা যা বলার স্কুলকে বলেছি। স্কুল সেই দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এর বেশি কিছু বলব না। ওই ঘটনা (যৌন হেনস্থা) নিয়েও কিছু বলব না।’’

পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তের জন্য তারা ওই স্কুলের গত এক মাসের সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে পাঠিয়েছে। পাশাপাশি, বিচারকের সামনে নিগৃহীতা ছাত্রীর গোপন জবানবন্দির আবেদনও জানানো হয়েছে।

এ দিন আদালতে সওয়াল-জবাবের শুরুতে সরকার পক্ষের কৌঁসুলি সৌরীন ঘোষাল অভিযুক্তের পুলিশি হেফাজতের আবেদন করেন। তিনি জানান, এই ঘটনায় এক জনই আক্রান্ত কি না, দেখতে হবে। ওই ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত কি না, তা-ও পুলিশ খতিয়ে দেখছে। তাই হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন বলেই তাঁর মত।

অভিযুক্তের আইনজীবী অঙ্কনা পাল এবং সৌরভ বণিক পাল্টা বলেন, ‘‘এ রকম চলতে থাকলে তো কোনও শিক্ষকই আর পড়ুয়াদের কিছু শেখাতে চাইবেন না। অভিযোগের প্রতিলিপিতে বলা হয়েছে, বডি পার্টসে হাত দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বডি পার্টস কোনগুলি, তা পরিষ্কার নয়। হাত, পা-ও তো দেহের অঙ্গ।’’

যদিও সরকারি কৌঁসুলি দাবি করেন, ধৃত পুলিশের কাছে দোষ কবুল করেছেন। পাশাপাশি, শুক্রবার অভিযুক্তকে স্কুল থেকে বার করার সময়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন রীতেশ রায় নামে এক অভিভাবক। এ দিন তাঁকেও জামিন দিয়েছে আদালত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE