প্রতীকী চিত্র।
কোনও ডিগ্রি নেই, কিন্তু রাতবিরেতে বাড়ির পোষ্যটি অসুস্থ হলে ভরসা তিনিই। দিন পনেরো ধরে ব্যারাকপুরের প্রদীপ মল্লিক স্যালাইনের সিরিঞ্জ আর বোতল ব্যাগে ভরে পাড়ায় পাড়ায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। রাস্তার কুকুর হোক বা বাড়ির যত্নে পালিত সারমেয়। পেটের গোলমাল, বমি, মলের সঙ্গে মাঝেমধ্যে লাল ছিটের মতো রক্তের দাগ— এমন খবর পেলেই ছুটছেন প্রদীপবাবু। শীত আর বসন্তের সন্ধিক্ষণে পার্ভোর প্রকোপ বেড়েছে দেশ জুড়ে। কলকাতা ও শহরতলির সরকারি এবং বেসরকারি পশু চিকিৎসালয়ে বমি, মলের সঙ্গে রক্ত এবং ঝিমিয়ে পড়া কুকুরদের দেখাতে লাইন পড়ছে। বেলগাছিয়া পশু হাসপাতালের চিকিৎসক শৈবাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাসপাতালে পার্ভো আক্রান্ত অনেক কুকুরই নিয়মিত আসছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতার অভাব আছে।’’ তিনি জানান, এই সময়ে অনেক অসুস্থ কুকুরের মধ্যে পার্ভো সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। রাস্তার কুকুর, ভ্যাকসিন দেওয়া বাড়ির পোষ্য— যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭০ সালের শেষের দিকে পার্ভোর সংক্রমণ নজরে আসে। ১৯৭৮ সালের পর থেকে বছর দুয়েক বিশ্বের নানা দেশে পার্ভোর সংক্রমণ কার্যত মহামারির আকার নেয়। প্রায় ছ’মাস বয়স পর্যন্ত কুকুরের মধ্যেই পার্ভো-র সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। পার্ভোর চিকিৎসা নিয়ে গত দশ বছর ধরে কাজ করছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বক্সিবাজারের বাসবী মিশ্র। তিনি জানান, মানুষের ক্ষেত্রে যেটা ডায়রিয়ার লক্ষণ সেটাই কুকুরের ক্ষেত্রে পার্ভো। পার্ভো দু’রকমের হয়। এর পুরো নাম ক্যানাইন পার্ভো ভাইরাস। প্রথম অবস্থায় চিকিৎসা না করালে পরে আর ওষুধে তেমন কাজ হয় না। কয়েক দিনের মধ্যেই মৃত্যু হয় অধিকাংশ কুকুরের। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি বছর আমাদের রাজ্যে গড়ে সাত-আট হাজার কুকুর এই রোগে মারা যায়। আমরা খবর পেলেই স্যালাইন ও ওষুধ কিনে নিয়ে গিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করি।’’
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ক্যানাইন পার্ভো ভাইরাস বা সিপিভি সংক্রমিত কুকুরের মল কিংবা বমি অন্য কুকুর শুঁকে নিলে সে-ও সংক্রমিত হয়। রাস্তার কুকুর ছাড়াও রটওয়েলার, পিটবুল, ল্যাব্রাডর, গোল্ডেন রিট্রিভার, ডোবারম্যান, জার্মান শেফার্ড, স্প্যানিয়েল ককার এবং আলাস্কান ম্যালামুট এই রোগে খুব তাড়াতাড়ি আক্রান্ত হয় এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারা যায়। সিপিভি সংক্রমণ দু’ভাবে নজরে আসে। প্রথমত অন্ত্রের গঠন এবং বমি, ডায়রিয়া, ওজন হ্রাস আর ক্ষুধামান্দ্যের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। দ্বিতীয়ত, মায়ের থেকে গর্ভস্থ শিশুর দেহে সংক্রমণ ছড়ায়। জন্মানোর পরে খুব অল্প বয়সে এই কুকুরগুলি মারা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছ’সপ্তাহ থেকে ছ’মাস বয়সের মধ্যে কুকুরের মৃত্যু হয়। এখন অবশ্য কুকুরের পার্ভো ভাইরাসের টিকা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সেই টিকা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় আছে।
পার্ভোর চিকিৎসা নিয়ে উদ্যোগী শৈবালবাবুর মতো পশু চিকিৎসকেরা এবং প্রদীপবাবু বা বাসবীদেবীর মতো কুকুরপ্রেমীরা। প্রদীপবাবুর কথায়, ‘‘এই বছর সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পার্ভোতে আক্রান্ত অধিকাংশ কুকুরকে সুস্থ করা। উত্তর শহরতলিতে এখনও পর্যন্ত খোঁজ পাওয়া ৫০ শতাংশ কুকুরকেই দিনে দু’বেলা এক ঘণ্টা করে স্যালাইন ও অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সুস্থ করতে পেরেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy