Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
KMC Election 2021

KMC election 2021: রঙিন মিছিলে বেলা শেষের প্রচার দেখল শীতের শহর

ঢাকের বোল, ধামসা-মাদলের ছন্দ আর সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ির শোভাযাত্রা শুক্রবারের শীতের শহরে রবিবাসরীয় মেজাজ এনে দিয়েছিল।

পুরসভার সামনে তৃণমূলের মদন মিত্রের মিছিল।

পুরসভার সামনে তৃণমূলের মদন মিত্রের মিছিল। নিজস্ব চিত্র।

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৫২
Share: Save:

ঠান্ডায় সবে কাঁপুনি ধরতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে শহরের পথ জুড়ে চলছে ঢাকের বাদ্যি, আদিবাসী নৃত্য, বেলুন, হুডখোলা গাড়ি। যা দেখে মনে হচ্ছিল, বুঝি বর্ষশেষের শোভাযাত্রা। ঘোর ভাঙাল রাজনৈতিক দলের পতাকা। এমনই রঙিন মিছিলে দেখা গেল শেষ লগ্নের নির্বাচনী প্রচার। দিনভর একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার সেই সব প্রতিযোগিতার বেশির ভাগেরই আয়োজক শাসকদলের প্রার্থীরা। তবে প্রচারের বেলা শেষেও সব রাজনৈতিক দলের থেকেই উঠে এল করোনা-বিধি ভঙ্গের একই রকম ছবি। দূরত্ব-বিধি ভুলে বিনা মাস্কেই চলল প্রচার-সমাবেশ।

ঢাকের বোল, ধামসা-মাদলের ছন্দ আর সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ির শোভাযাত্রা শুক্রবারের শীতের শহরে রবিবাসরীয় মেজাজ এনে দিয়েছিল। সকাল থেকেই শাসক-বিরোধী, সব দলের মিছিল, পাল্টা মিছিলে ব্যস্ত থাকল শহর। এ দিন সকালে প্রচারে নজর কাড়েন ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী দেবাশিস কুমার। সকাল ন’টা থেকে শুরু হয় তাঁর প্রচার। গড়িয়াহাট, ডোভার লেন এলাকায় হুডখোলা গাড়িতে চেপে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করেন প্রার্থী। ধামসা-মাদলের তালে সুসজ্জিত আদিবাসী নাচ ছিল দেখার মতো। আত্মবিশ্বাসী প্রার্থী বলেন, ‘‘আজ শেষ দিনের প্রচারে মানুষের চোখ-মুখই সব বলে দিচ্ছে। বিরোধী দল নয়, এখানে আমার সঙ্গে আমার লড়াই। গত নির্বাচনে যে ব্যবধানে জিতেছি, সেটা এ বার বাড়ানোর লড়াই।’’

পূর্ব কলকাতার কাঁকুড়গাছি এলাকায় আবার প্রার্থী ঘুরলেন রাজার মেজাজে। এ দিন প্রচারে ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে চমক দেন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী পরেশ পাল। অন্য দিন বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তবে এ দিন ৮২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ফিরহাদ হাকিম শেষ প্রস্তুতির সবটুকু দিলেন নিজের ওয়ার্ডকেই। চেতলা এলাকায় হুডখোলা গাড়িতে তাঁর মেয়েদের নিয়ে প্রচার করতে দেখা গেল প্রার্থীকে। ৮১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী জুঁই বিশ্বাসের সমর্থনে নিউ আলিপুরে প্রচার করেন তাঁর ভাশুর তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। বেলেঘাটা এলাকায় দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার সারেন বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী। চেনা এলাকা বলে শেষ দিনেও হাল ছাড়তে চাননি প্রার্থী মালা রায়। এ দিন সকালে ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডের টালিগঞ্জ
এলাকার প্রতাপাদিত্য রোডে তাঁকে প্রচারে দেখা যায়।

শেষ বেলায় গতি আনলেও শাসকদলের মতো ততটা রঙিন হল না বিরোধী দল বিজেপি, বাম ও কংগ্রেসের প্রচার। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে এ দিন মিছিলে অংশ নেন। সকালে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী বিজয় ওঝার হয়ে বড়বাজারের অলিগলিতে দেখা যায় বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে। এর পরে সোজা তাঁর দক্ষিণী যাত্রা। বেহালা অঞ্চলে প্রার্থীর সমর্থনে মিছিলে হাঁটেন তিনি। ১২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী শঙ্কর শিকদারের সমর্থনেও হাঁটতে দেখা যায় তাঁকে। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সজল ঘোষের হয়ে প্রচারে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী।

রাজবল্লভ পাড়ায় সিপিএম প্রার্থী মাধব বসুর সমর্থনে মিছিল।

রাজবল্লভ পাড়ায় সিপিএম প্রার্থী মাধব বসুর সমর্থনে মিছিল।

সকাল থেকেই প্রচার বেরিয়ে পড়েন বাম প্রার্থীরা। সকালে গড়িয়া এলাকায় দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে মিছিলে হাঁটেন সিপিএমের
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। ১০১, ১০২ ও ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাম প্রার্থীর হয়ে মিছিলে পা মেলান তিনি। গড়িয়া থেকে বাঘা যতীন
পর্যন্ত সেই মিছিলে শামিল হয়েছিলেন অনেকেই। হাঁটার ফাঁকেই সুজন বললেন, ‘‘তৃণমূল বলছে সব কাজ করেছে, তা হলে এত ভয় কেন? ত্রিপুরায় যে ভাবে বিজেপি চলছে, কলকাতাতেও ঠিক একই ভাবে তৃণমূল চলছে।’’

বাবুঘাট এলাকায় প্রচারের ব্যস্ততায় পাওয়া গেল ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠককে। তাঁর হয়ে প্রচার-মিছিলে অংশ নেন দলের একাধিক নেতা-কর্মী। দলীয় কর্মীদের নিয়ে সকাল থেকেই এলাকায় ঘোরেন ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী প্রকাশ উপাধ্যায়। কসাই বস্তি এলাকায় বাড়ি বাড়ি প্রচার সারেন প্রার্থী। আত্মবিশ্বাসের সুর তাঁর কথায়, ‘‘এত দিন ধরে প্রচার করছি। মানুষের মন যেটুকু বুঝেছি, তাতেই আভাস পাচ্ছি আমার ওয়ার্ডের ফলাফল। ১৪৪টা ওয়ার্ডের মধ্যে আমার ওয়ার্ডে রেকর্ড ভোটে জিতব।’’ এত জোর দিয়ে কী ভাবে বলছেন?
প্রশ্নটাই মিলিয়ে গেল লাগামহীন জনস্রোতে।

যে স্রোত দেখে আশঙ্কা হচ্ছে আরও এক ঢেউয়ের। শাসক থেকে বিরোধী— সব দলের প্রচারেই বিধিভঙ্গের এই প্রবণতা শঙ্কিত করে তুলছে শহরের সচেতন নাগরিকদের। এক অশীতিপরের ক্ষোভ, ‘‘করোনাভাইরাসের শুরুর পর্বে ভোট নিয়ে ইটালির উন্মাদনা কী ভাবে সে দেশের বাসিন্দাদের কাঁদিয়েছিল, সারা বিশ্ব দেখেছে। কেরল, মহারাষ্ট্র, দিল্লি বাদ দিন। বিধানসভা ভোটের পরে কী হয়েছিল এ রাজ্যে? সবার স্মৃতি এত ক্ষীণ!’’

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy