Advertisement
১১ অক্টোবর ২০২৪
RG Kar Protest

‘ক্ষমতা থাকলেই গ্রেফতার করতে হবে?’ ত্রিধারাকাণ্ডে জামিন দিয়ে কী কী নির্দেশ দিল হাই কোর্ট

আদালত প্রশ্ন করে অভিযুক্তদের নাম কী ভাবে জানতে পারেন অভিযোগকারী, যার ভিত্তিতে তিনি রবীন্দ্র সরোবর থানায় অভিযোগ করলেন? রাজ্য জানায় অভিযুক্তেরা একে অপরকে নাম ধরে ডেকেছিলেন।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৪৩
Share: Save:

দক্ষিণ কলকাতার একটি পুজো মণ্ডপের সামনে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ জানানোয় নয় ছাত্রের গ্রেফতারি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ল কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য। আদালতের মন্তব্য, ‘‘ক্ষমতা রয়েছে বলেই পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারে না।’’ সপ্তমীর সন্ধ্যায় ওই প্রতিবাদের মধ্যে হুড়োহুড়িতে তিন জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছিলেন দাবি করা হয়েছিল। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছে, ‘আহতদের’ কেবল ব্যথানাশক এবং হজমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ত্রিধারা-কাণ্ডে বিচারপতি শম্পা সরকার বেশ কিছু নির্দেশ দেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, শীঘ্র অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্তি দিতে হবে ধৃতদের। তবে জামিন পেলেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংক্রান্ত জটিলতার কারণে শুক্রবার তাঁরা ছাড়া পাননি। শনিবার তাঁরা ছাড়া পাবেন বলে আশা করা যায়।

সপ্তমীতে ত্রিধারা সম্মিলনীর মণ্ডপে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন করে স্লোগান দেওয়ায় ন’জনকে প্রথমে আটক করেছিল পুলিশ। পরে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালত ওই ন’জনের এক সপ্তাহের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়। গ্রেফতার হন আসানসোলের কুলটির বাসিন্দা সুজয় মণ্ডল, কলকাতার দমদমের বাসিন্দা উত্তরণ সাহা রায়, ট্যাংরার বাসিন্দা কুশল কর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুরের বাসিন্দা জহর সরকার এবং সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়, পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা নাদিম হাজারি, হাসনাবাদের বাসিন্দা ঋতব্রত মল্লিক, উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহের বাসিন্দা চন্দ্রচূড় চৌধুরী এবং রহড়ার বাসিন্দা দৃপ্তমান ঘোষ। ধৃতদের পরিবার হাই কোর্টে দ্রুত শুনানির আর্জি জানিয়েছিল। তাতে সাড়া দেয় উচ্চ আদালত। শুক্রবার দুপুরে শুরু হয় শুনানি। মামলাকারীদের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় এবং আইনজীবী শামিম আহমেদ। রাজ্যের তরফে এজলাসে ছিলেন আইনজীবী অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আইনজীবী সুমন সেনগুপ্ত।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

শুনানির শুরুর দিকে আদালত প্রশ্ন তোলে কী ভাবে অভিযুক্তদের নাম জানতে পেরেছিলেন অভিযোগকারী বিট্টুকুমার ঝা, যার ভিত্তিতে তিনি রবীন্দ্র সরোবর থানায় অভিযোগ করলেন? রাজ্য জবাব দেয় অভিযুক্তেরা একে অপরের নাম ধরে ডাকছিলেন! রাজ্য এ-ও বলে, ধৃতদের মাধ্যমে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যেতে দেওয়া হোক। সেখানে যেন হাই কোর্ট হস্তক্ষেপ না করে। অন্য দিকে, ধৃতদের আইনজীবী সওয়াল করেন পুলিশি হেফাজতে নিয়ে ‘কেস সাজানো হচ্ছে’। আইনজীবী বিকাশরঞ্জন প্রশ্ন করেন, ‘‘ন’জনের অপরাধ কী? প্রতিবাদ জানানো কি অপরাধ? পুলিশ কী ভাবে প্রতিবাদে হস্তক্ষেপ করে?’’ আইনের অপব্যবহার হচ্ছে বলে সওয়াল করেন আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ। দুই পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে ধৃতদের ১ হাজার টাকা বন্ডে অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করে আদালত। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘ত্রিধারার পুজোমণ্ডপের ঘটনায় শুধুমাত্র হোয়াট্‌সঅ্যাপ চ্যাট এবং প্ল্যাকার্ড উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধৃতদের স্লোগানে ঘৃণাভাষণ ছিল না। ধর্মীয় ভাবে কাউকে তাঁরা কাউকে আঘাত করেননি। অনেক সাধারণ মানুষই ওই স্লোগান দিচ্ছিলেন।’’ বিচারপতির আরও পর্যবেক্ষণ, ‘‘ধৃতদের প্রত্যেকের কম বয়স। বেশির ভাগেরই বয়স ২০-২৫ বছর। অত্যুৎসাহী হয়ে তাঁরা ওই কাজ করে থাকতে পারেন।’’

আদালত নির্দেশে জানিয়েছে, এ বার থেকে পুজো মণ্ডপের ২০০ মিটারের মধ্যে কোনও প্রতিবাদ জানানো যাবে না। এ-ও বলা হয়, পুলিশ যা বাজেয়াপ্ত করেছে, তাতে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে প্রাথমিক ভাবে আদালত মনে করছে না। ধৃত ন’জনকে হেফাজতে রাখার প্রয়োজন নেই। তাঁরা অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্ত হবেন। তা ছাড়া আগামী ১৫ অক্টোবর রাজ্য সরকারের উদ্যোগে পুজোর কার্নিভাল রয়েছে। সেখানে প্রতিবাদ জানানো যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

(এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময় লেখা হয়েছিল, হাই কোর্টের নির্দেশ মতো এই ন'জন ‘আর কোথাও প্রতিবাদ জানাতে পারবেন না’। এটি ঠিক নয়। গুরুতর এই ত্রুটি গোচরে আসার পরই আমরা তা সংশোধন করেছি। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এবং সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE