Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

দুর্ঘটনা ঠেকাতে বাসের ধাক্কা অটোয়

শুক্রবার বিকেলে দমদম পার্কের সেই স্ট্যান্ডের কাছাকাছি আসতে তিনি যাত্রীদের জানান, বাসের ব্রেক কাজ করছে না। যাত্রীদের বাসের পিছন দিকে সরে যেতে অনুরোধ করেন এবং বাসের ভিতরে রড, সিট শক্ত করে ধরে বসতে বলেন।

এ ভাবেই দুমড়ে গিয়েছে বাস ও অটো। শুক্রবার, দমদম পার্কে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

এ ভাবেই দুমড়ে গিয়েছে বাস ও অটো। শুক্রবার, দমদম পার্কে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৩৫
Share: Save:

বাস চালাতে চালাতে চালক খেয়াল করেন এয়ার ব্রেকের পাইপ ফেটে গিয়েছে। ফলে ব্রেক কাজ করছে না। আতঙ্ক যাতে না ছড়ায়, তার জন্য তিনি প্রথমে কাউকে কিছু বলেননি। বাসে তখন রয়েছেন ২০-২৫ জন যাত্রী। চালক যেখানে বিপদ টের পেলেন, সেখান থেকে একটি স্টপের পরেই বাসের স্ট্যান্ড। সেখানেই একটি ত্রিকোণ আইল্যান্ড। চালক ঠিক করে নেন, সেখানে ধাক্কা মেরে থামাবেন বাসটি।

শুক্রবার বিকেলে দমদম পার্কের সেই স্ট্যান্ডের কাছাকাছি আসতে তিনি যাত্রীদের জানান, বাসের ব্রেক কাজ করছে না। যাত্রীদের বাসের পিছন দিকে সরে যেতে অনুরোধ করেন এবং বাসের ভিতরে রড, সিট শক্ত করে ধরে বসতে বলেন। বাসে তত ক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।

তারই মধ্যে ত্রিকোণ আইল্যন্ডের কাছাকাছি যেতে গিয়ে ধেয়ে এল অন্য বিপদ। দেখা গেল, ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি অটো। সেটিকে বাঁচিয়ে তবে থামাতে হবে বাস। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। বাসটি থামাতে গিয়ে সোজা অটোর ডান দিকে ধাক্কা মারেন চালক। যার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অটোটি। তবে বাসের গতি তাতেও কমেনি। শেষে ওই আইল্যান্ডের পাশের জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা আর একটি বাসের পিছনে সজোরে ধাক্কা মারেন প্রথম বাসটির চালক।

বাসের ভিতরের যাত্রীরা ছিটকে পড়েন। তাঁদের অনেকের মাথায়, হাতে, ঘাড়ে, কোমরে আঘাত লাগে। বাস থামানোর পরে স্ট্যান্ড থেকে ছুটে আসেন অন্য বাসের কর্মীরা। উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। তবে যাত্রীরা সকলেই বাস থেকে নেমে একটু ধাতস্থ হওয়ার পরে বলেন, বাসচালকের জন্যই প্রাণে বেঁচে গেলেন তাঁরা।

স্থানীয়েরা জানান, আহতদের লেক টাউনের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে অরুণা মণ্ডল নামে এক যাত্রীর নাকের হাড়ে আঘাত লেগেছে। পরে তাঁকে আরজিকর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

শেফালি সাহা নামে ওই বাসের এক যাত্রী জানান, উল্টোডাঙার পর থেকে বাসটি খুবই এঁকে-বেঁকে যাচ্ছিল। তা দেখে যাত্রীরা সকলেই চিৎকার করতে থাকেন। চালক কী উত্তর দিচ্ছেন, তা প্রায় কারও কানেই পৌঁছচ্ছিল না। এরই মধ্যে বাসটি একটি গাড়ি ও আর একটি বাসের পিছনে ধাক্কা মারে। তিনি বলেন, ‘‘এক ধাক্কায় সকলে আমার পায়ের উপরে এসে পড়েন। দেখি, চালক কোনওমতে বাস থেকে নেমে গিয়েছেন।’’ হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রশান্ত দেবনাথ নামে ওই চালকের পায়ে আঘাত লেগেছে। প্রত্যক্ষদর্শী এক বাস-মালিক সুব্রত মাঝি বলেন, ‘‘কেষ্টপুরের দিক থেকে আসছিলাম। বীভৎস আওয়াজ শুনে বাসস্ট্যান্ডে ঢুকলাম। প্রথমে মনে হল চালক এ কি করলেন। এ ভাবে কেউ বাস চালায়! পরে সবটা শুনে চালকের তারিফ না করে পারলাম না।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, বাসটি হাওড়ার দিক থেকে থাকদাঁড়ি যাচ্ছিল। লেক টাউন পেরোনোর সময়েই চালক বিপদ টের পান। কিন্তু তখন তিনি কাউকে কিছু বলেননি। দমদম পার্কেও ওই রুটের একটি বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। ফলে চালক দেখলেন, বাঙুর পেরোতে পারলেই বাসস্ট্যান্ডে কাছাকাছি ত্রিকোণ আইল্যন্ডে ধাক্কা মেরে বাস থামাতে পারবেন তিনি।

বাস মালিক ও কর্মীরা জানান, এই ধরনের বাসে এয়ার ব্রেক পাইপ ফেটে গেলে ব্রেক কাজ করে না। বাস থামানোও যায় না। ফলে বাসচালক প্রশান্ত সেই অবস্থাতে মাথা ঠান্ডা রেখে যে কাজ করলেন, তাতে বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেলেন এত জন যাত্রী। অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারলেন প্রশান্ত। তবে এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা থেকে নিত্যযাত্রী, সকলেই বাসের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিধাননগর পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Dum Dum Park
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE