হেলে পড়েছে দুর্গা পিতুরি লেনের একের পর এক বাড়ি। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
মাটি তরল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ন’বছর আগে বৌবাজারে ‘ট্র্যাভেলেটর’ বা চলমান ফুটপাত করার প্রস্তাব বাতিল করেছিল কলকাতা পুরসভা। বলা হয়েছিল, ওই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মাটির ‘লিক্যুইফ্যাকশন’ (জলের সামান্য সংস্পর্শে এলেই মাটি তরল হওয়ার আশঙ্কা) অত্যন্ত বেশি। তাই প্রকল্পের ‘ভার’ মাটি নিতে পারবে না!
পুরসভার নগর পরিকল্পনা দফতরের তৎকালীন ডিরেক্টর জেনারেল দীপঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘ওখানকার মাটি চরিত্রগত ভাবে খুবই দুর্বল। মাটির নীচে নিকাশি, জলের পাইপলাইন, বিদ্যুতের লাইন রয়েছে! তার পর ট্র্যাভেলেটর! এত কিছু করা যাবে না বলে বেসরকারি সংস্থার প্রকল্প বাতিল করে দিয়েছিলাম।’’
প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতা পুরসভা যা বুঝতে পারল, মেট্রোর বিশেষজ্ঞেরা তার আগাম আঁচ পেলেন না? মাটির যে চরিত্রগত কারণে ২০০৯-১০ সালে পুরসভা প্রকল্প বাতিল করেছিল, দুর্গা পিতুরি লেন ও সেকরাপাড়া লেনে সুড়ঙ্গ-খননের আগে সেই চরিত্রগত বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল কি? বৌবাজারের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় টানেল বোরিং মেশিন যে গতিতে চালানোর কথা ছিল, তা কি করা হয়েছিল? এক ভূতত্ত্ববিদের কথায়, ‘‘কোন এলাকায় কত জোরে মেশিন চালানো যাবে, তা নির্ভর করে মাটির চরিত্রের উপরে। মাটি ভঙ্গুর হলে মেশিনের কম্পন উপরের যাবতীয় কাঠামোর ভয়াবহ ক্ষতিও করতে পারে।’’
কেএমআরসিএল-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মানস সরকার অবশ্য বলেন, ‘‘ওই প্রকল্পের কথা জানা নেই। ট্র্যাভেলেটরের ওজন এক তলা বাড়ির থেকেও কম। মাটি যদি এতই নরম হবে, তা হলে ওখানে তিন তলা বাড়ির অনুমোদন পুরসভা দিত না। নকশা মেনেই কাজ করেছি।’’
তবে এই মুহূর্তে সুড়ঙ্গ-বিপর্যয়ের থেকেও মাটির উপরে যে বাড়িগুলি ‘অক্ষত’ রয়েছে, সেগুলির অবস্থা প্রাধান্য পাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের কাছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের ভিজ়িটিং প্রফেসর বিশ্বজিৎ সোম জানান, মূল বিপর্যয় মাটির উপরে ঘটছে! কারণ, মাটি ও কোনও বাড়ির ভিতের ‘অন্তর্বর্তী সম্পর্ক’ বা ‘নন-লিনিয়ার সয়েল ফাউন্ডেশন স্ট্রাকচার ইন্টারঅ্যাকশন’ পুরোপুরি বিপর্যস্ত। ফলে বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনা অব্যাহত। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘মাটি যে শুধু বসে যাচ্ছে তাই নয়, যে কোনও দিকে মাটির সরণ-ও শুরু হয়েছে। যা বিপজ্জনক করে তুলেছে বিপর্যয় সংলগ্ন গোটা এলাকাকে। এক দিন ভারী বৃষ্টি হলে পুরো এলাকায় বড়সড় বিপদ ঘটতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy