Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জৌলুস ফিকে, বড়দিনে বো-বিষাদ

লালরঙা দোতলা বাড়িগুলোর মাঝে এক টুকরো আকাশে ঝুলছে রঙিন আলোর চাদর। তবে তার ঔজ্জ্বল্য কমেছে। লাল-নীল তারায় সাজানো ক্রিসমাস ট্রির পাশে দাঁড়ানো সান্তা ক্লজের হাসিও যেন খানিকটা ম্লান। নোটের চোটে টান পড়েছে ঝুলিতে। তাই ভারী মন খারাপ তাঁর।

একলা বেলুনওয়ালা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

একলা বেলুনওয়ালা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:১৮
Share: Save:

লালরঙা দোতলা বাড়িগুলোর মাঝে এক টুকরো আকাশে ঝুলছে রঙিন আলোর চাদর। তবে তার ঔজ্জ্বল্য কমেছে। লাল-নীল তারায় সাজানো ক্রিসমাস ট্রির পাশে দাঁড়ানো সান্তা ক্লজের হাসিও যেন খানিকটা ম্লান। নোটের চোটে টান পড়েছে ঝুলিতে। তাই ভারী মন খারাপ তাঁর।

ফি-বছরের মতো এ বারও বড়দিন উপলক্ষে সেজেছে কলকাতার বো ব্যারাক। কিন্তু খুশির মেজাজ জাঁকিয়ে বসতে পারেনি তেমন। প্রতি বারই বৌবাজারের শতাব্দী-প্রাচীন এই অ্যাংলো পাড়ায় বড়দিন-নতুন বছরের উৎসব শুরু হয়ে য়ায় ২৩ ডিসেম্বর থেকেই। চলে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। দিন কমেনি বটে, তবে জৌলুস কমেছে এ বার।

বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ফি বছর চাঁদা তুলে উৎসবের আয়োজন করেন তাঁরা। কেউ ৫০০ টাকা দেন, কেউ বা দেড় হাজার— যার যেমন ক্ষমতা। উৎসবে যাঁরা রেস্তোরাঁ বা দোকান খোলেন, চাঁদা দেন তাঁরাও। ১৩ দিনের উৎসবে সব মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু এ বার সবেতেই নোটের কাঁটা। চাঁদা কম উঠেছে। খাবারের স্টলও কম। খরচও তাই কমাতে হয়েছে। মোটা অঙ্কের লেনদেনে নানা সমস্যা হচ্ছে। উৎসবের বাজেট কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন লাখে। স্থানীয় বাসিন্দা ভগবত জানা বলেন, উৎসবে যাঁরা বো ব্যারাক সাজান, মঞ্চ বাঁধেন, এই ১৩ দিন তাঁদের সপরিবার নেমন্তন্ন থাকে। এ বার টাকার অভাবে খাওয়া-দাওয়ার পাট তুলে দেওয়া হয়েছে। আর এক বাসিন্দা জন বেল জানালেন, খরচ কমছে উপহারেরও। অন্যান্য বার ২৪ ডিসেম্বর প্রায় শ’পাঁচেক শিশুকে খেলনা ও পোশাক দেওয়া হয়। এ বার সেখানে শুধু আঁকার বই আর রং পেন্সিল। কম্বল আর চাদরের বদলে প্রবীণেরা পাবেন তোয়ালে।

বো ব্যারাকে বড়দিন মানেই বাড়িতে তৈরি রেড ওয়াইন। ফি বছর তার স্বাদে মাতোয়ারা হন বাঙালি-অবাঙালি সকলেই। নগদের অভাবে সেই সুরার টানেও ভাটা। অ্যানা চ্যাং, ভ্যালেরি আলির মতো প্রৌঢ়াদের রেড ওয়াইন বিক্রিতেও টান পড়েছে। ভ্যালেরির কথায়, ‘‘নগদ টাকার সমস্যায় বিক্রি কম। আমাদের কাছে কার্ডে কেনার ব্যবস্থা নেই। অনেকে এসে ফিরে যাচ্ছেন।’’

আলোর রোশনাই, পিয়ানো-গিটারের সুরে মোড়া বো ব্যারাকে বড়দিন মানে ঘরে ফেরাও। কর্মসূত্রে বছরভর বাইরে থাকা মানুষগুলো এ বারও বাড়ি ফিরেছেন। আর এসেই ছুটেছেন ব্যাঙ্কে। হাতে নগদ নেই। প্রিয়জনের জন্য উপহার কিনে আনতে না পেরে মনমরা ভাবটা কাটছে না কিছুতেই।

ব্যারাকের উঠোনে চেয়ার পেতে বসে ছিলেন বছর আশির অ্যান্টনি গুস্তাভা। তাঁর কথায়, ‘‘দু’দিন আগে ছেলে আর নাতি এসেছে মুম্বই থেকে। তার পরেই ব্যাঙ্কে ছুটেছে টাকা তুলতে। আমার পক্ষে তো ব্যাঙ্কের লাইন দাঁড়ানো সম্ভব নয়। সব ঝামেলা সইতে হয় স্ত্রীকে। ছেলে তাই যতটা পারছে, টাকা তুলে রেখে যাচ্ছে। এ বছর ক্রিসমাস বোধহয় ব্যাঙ্কেই কাটবে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bow Barracks demonetisation Christmas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE