Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সংক্রমণে নষ্ট কর্ড ব্লাড, তিন বছর পরে ক্ষতিপূরণ

অভিযোগে প্রকাশ জানিয়েছেন, তিনি টাকা ফেরতের ব্যাপারে ‘লাইফ সেল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে ওই সংস্থার সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগ করলেও তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৯ ০৩:২৪
Share: Save:

সদ্যোজাতের কাটা নাড়ি বা আম্বিলিক্যাল কর্ড ব্লাড সংরক্ষণের গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সন্তান প্রসবের আট দিন আগে শরৎ বসু রোডের একটি বেসরকারি কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্কের সংস্থায় অগ্রিম ২৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন ট্যাংরার বাসিন্দা এক ব্যক্তি। সপ্তাহ তিনেক পরে ওই সংস্থা থেকে তাঁকে জানানো হয়, সংক্রমণের জন্য আম্বিলিক্যাল কর্ড ব্লাডের স্টেম সেল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এর পরে টাকা ফেরতের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থায় যোগাযোগ করেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু অভিযোগ, তারা তাঁর বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি প্রথমে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা ও পরে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন। সম্প্রতি ওই মামলায় রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ক্ষতিপূরণ বাবদ অভিযোগকারীকে ৮৫ হাজার টাকা দিতে হবে।

ট্যাংরার ডি সি দে রোডের বাসিন্দা, অভিযোগকারী প্রকাশকুমার চোরারিয়া জানান, ২০১৬ সালের ৭ মে সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে কন্যাসন্তান প্রসব করেন তাঁর স্ত্রী। বাচ্চা জন্মানোর পরে যথাসময়ে শরৎ বসু রোডের সংশ্লিষ্ট কর্ড ব্লাড সংস্থার এক প্রতিনিধি আম্বিলিক্যাল কর্ড নিয়ে যান। প্রকাশ বলেন, ‘‘২৮ মে সংস্থার তরফে ই-মেল মারফত জানানো হয়, সংক্রমণের কারণে আম্বিলিক্যাল কর্ড ব্লাডের স্টেম সেল নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ দু’দিন পরে, ৩০ তারিখ কর্ড ব্লাড সংরক্ষণের একটি রিপোর্ট হাতে পান প্রকাশ। তাঁর কথায়, ‘‘রিপোর্ট থেকে জানতে পারি, ৭ তারিখ সকালে আম্বিলিক্যাল কর্ড নিয়ে যাওয়ার পরে সেটি চেন্নাইয়ের পরীক্ষাগারে জমা পড়েছিল ১০ তারিখ দুপুর ১টা ৫০ নাগাদ। হাসপাতাল থেকে ঠিক সময়ে নিয়ে যাওয়া হলেও পরীক্ষাগারে পৌঁছতে অত্যধিক দেরি হওয়ায় তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’

প্রকাশের স্ত্রী সুমতির অভিযোগ, ‘‘যে উদ্দেশ্যে কর্ড ব্লাড সংরক্ষণের কথা ভেবেছিলাম, সেটাই ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। দোষী সংস্থার শাস্তি হোক।’’

অভিযোগে প্রকাশ জানিয়েছেন, তিনি টাকা ফেরতের ব্যাপারে ‘লাইফ সেল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে ওই সংস্থার সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগ করলেও তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। বাধ্য হয়ে মোটা টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন ওই দম্পতি। ২০১৭ সালের ১১ মে আদালত ওই কর্ড ব্লাড সংস্থার দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে চরম সমালোচনা করে অভিযোগকারীকে ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয়। জেলা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যায় লাইফ সেল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড। সম্প্রতি ওই আদালত জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায় বহাল রাখার পাশাপাশি অভিযোগকারীকে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়িয়ে পঁচাশি হাজার টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছে।

এই রায় প্রসঙ্গে স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিয়ম মতো শিশুর জন্মের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কর্ড ব্লাড সংরক্ষণ জরুরি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তিন দিন পেরিয়ে যাওয়ায় অর্থ, কর্ডের স্টেম সেল নষ্ট হতে বাধ্য।’’ তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘বিদেশে কর্ড ব্লাড নিয়মমাফিক সংরক্ষণ হয়। কিন্তু বাচ্চা জন্মানোর পরে কোন সময়ে কর্ড ব্লাড সংগ্রহ করতে হয়, কত উষ্ণতায় সংরক্ষণ করতে হয়, এ নিয়ে এখানকার কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের অধিকাংশেরই ধারণা নেই। কোথায় সেই রক্তের প্রক্রিয়াকরণ হচ্ছে, তা নিয়েও কেউ মাথা ঘামান না। কিছু না জেনেই কর্ড ব্লাড নিয়ে ব্যবসা করছেন অনেকে।’’ চিকিৎসকেরা জানান, আম্বিলিক্যাল কর্ড থেকে রক্ত নিয়ে তা প্রক্রিয়াকরণের পরে ৮০-১৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। গোটা প্রক্রিয়া শেষ করতে হয় শিশুর জন্মের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে। মল্লিনাথবাবু বলেন, ‘‘এই নিয়মের হেরফের হলে কর্ড ব্লাডের গুণমান নষ্ট হতে বাধ্য। ওই মহিলার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।’’

রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত সংস্থার আইনজীবী সমর রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘পরিবহণ সংস্থার ভুলে কর্ড ব্লাড চেন্নাইয়ের পরীক্ষাগারে দেরিতে পৌঁছেছে। আমার মক্কেলের দোষ নেই। আমরা এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যাব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Blood Bank Tangra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy