Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
West bengal Assembly

‘পছন্দের লোক’কে জায়গা, বাংলায় বিধান পরিষদে আপত্তি জানাবে বিজেপি, তৈরি তৃণমূলও

বিহার, কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশের মতো কয়েকটি বিজেপি বা এনডিএ-শাসিত রাজ্যে এখন বিধানসভার উচ্চ কক্ষ বিধান পরিষদ রয়েছে।

বিধানসভা

বিধানসভা ফাইল চিত্র

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২১ ০৭:০১
Share: Save:

বাংলায় বিধান পরিষদের পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগের বিরোধিতাই করতে চলেছে বিজেপি। বিধানসভা থাকা সত্ত্বেও অন্য দরজা দিয়ে আরও কিছু ‘পছন্দের লোককে’ জায়গা করে দেওয়ার লক্ষ্যে নতুন খরচের বোঝা কোষাগারের উপরে চাপানো অর্থহীন— মূলত এই যুক্তিতেই রাজ্য সরকারের ওই চেষ্টার বিরোধিতা করা হবে বলে বিজেপির পরিষদীয় দল সূত্রের খবর। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে শাসক পক্ষ তাদের প্রস্তাব নিয়ে এগোতে পারলেও বিজেপি বিরোধিতা করলে লোকসভায় বিষয়টির পরিণতি কী হবে, সেই সংশয় থাকছেই। বিহার, কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশের মতো কয়েকটি বিজেপি বা এনডিএ-শাসিত রাজ্যে এখন বিধানসভার উচ্চ কক্ষ বিধান পরিষদ রয়েছে। তাই বাংলার ক্ষেত্রে একই ধরনের উদ্যোগে বিজেপির অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে সংশয় ছিল বিজেপির অন্দরে। শেষ পর্যন্ত বিধান পরিষদ গড়ার বিরুদ্ধে যুক্তি পেশ করার সিদ্ধান্তই নিয়েছে তারা। বিজেপি-শাসিত রাজ্যের ক্ষেত্রে তাদের যুক্তি, ওই সব রাজ্যে বিধান পরিষদ দীর্ঘ দিন ধরেই চালু আছে। লুপ্ত হয়ে যাওয়া উচ্চ কক্ষকে ফিরিয়ে বিজেপি সেখানে ফিরিয়ে আনেনি, যা এ রাজ্যে চেষ্টা হচ্ছে। বিধানসভায় আগামী ৬ জুলাই, মঙ্গলবার বিধান পরিষদ পুনরুজ্জীবনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। সব ঠিক থাকলে সে দিন ওই আলোচনায় বিজেপির তরফে স্বয়ং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও বক্তা থাকতে পারেন।

তৃণমূল রাজ্যে প্রথম বার ক্ষমতায় আসার পরেই বিধান পরিষদ ফের গড়ার চেষ্টা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভায় তখন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সরকার ও বিরোধী পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অ্যাড হক কমিটি গড়া হয়েছিল। এ বার তৃতীয় বারের জন্য তৃণমূল ক্ষমতায় ফেরার পরে বিধান পরিষদ গড়ার লক্ষ্যে রাজ্যে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাশ হয়েছে। তার পরেই বিষয়টি ফের আনা হচ্ছে বিধানসভায়। বামেরা ১০ বছর আগের মতোই এ বারও বিধান পরিষদ গড়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। তবে বিধানসভায় এখন তাদের প্রতিনিধিত্ব নেই। বর্তমান বিরোধী দল বিজেপিরও যুক্তি, সাংবিধানিক সংস্থান অনুযায়ীই বিধান পরিষদের খুব বেশি ক্ষমতা থাকে না। রাজ্য সরকার যেখানে নিজেরাই বলছে আর্থিক হাল সঙ্গীন, সেখানে এমন একটি ব্যবস্থার কী প্রয়োজন যার জেরে পরিষদীয় ক্ষেত্রে অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে? শাসক দলের ‘পছন্দের লোকজনকে’ নিয়ে আসার জন্য বিধান পরিষদ গড়ার আদৌ কী দরকার?

শাসক পক্ষ অবশ্য ১০ বছর আগের মতোই তাদের যুক্তিতে অনড়। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবুর মতে, বিধানসভায় যাঁরা জিতে আসেন, তার বাইরেও অনেক ‘যোগ্য ব্যক্তিত্ব’ থেকে যান। সমাজের সর্ব স্তরকে গণতান্ত্রিক ও সংসদীয় ব্যবস্থার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা উদ্যোগী হয়েছেন। তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ের যুক্তি, ‘‘গণতন্ত্রে ভারসাম্যের গুরুত্ব অপরিসীম। সেই ভারসাম্যের জন্যই বিধান পরিষদ দরকার।’’ অ্যাড হক কমিটির রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ১০ বছর আগে বামেদের বিরোধিতার মুখে তৃণমূল প্রতিনিধিরা বলেছিলেন, সরকার যখন বিধান পরিষদ গড়ার কথা বলছে, তার মানে ওই কক্ষ চালানোর জন্য অর্থের সংস্থান মাথায় রেখেই তারা প্রস্তাব আনছে। তৃণমূল নেতৃত্ব এখনও একই যুক্তি দিচ্ছেন। তবে বিধানসভায় আলোচনার আগে শাসক বা বিরোধী পক্ষ, কোনও শিবিরই আনুষ্ঠানিক ভাবে বিশেষ মুখ খুলছে না।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP West bengal Assembly Legislative Council
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE