রবিবার হাওড়া ডুমুরজলায় বিজেপি-র সমাবেশে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুই প্রকল্প ‘দুয়ারে সরকার’ এবং ‘পাড়ায় সমাধান’ যে ভোটারদের মধ্যে দাগ কাটছে তা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিল বিজেপি। আর সেটা বুঝিয়ে দিলেন বিজেপি-তে নবাগত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার হাওড়ার ডুমুরজলায় রাজীব দাবি করেন, বিজেপি নীলবাড়ি দখল করতে পারলে সরকার প্রথম দিন থেকেই ‘দুয়ারে সরকার’ ও ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচি নেবে।
শনিবার দিল্লি গিয়ে অমিত শাহর বাড়িতে বিজেপিতে যোগ দিলেও রবিবারই প্রথমবার গেরুয়া শিবিরের সমবেশে এলেন রাজীব। আর সেখান থেকেই রাজ্য সরকারের নিন্দা করে তিনি বলেন, ‘‘ভোটের মুখে দুয়ারে সরকার করতে হচ্ছে। তার মানে এতদিন মানুষের দুয়ারে যায়নি সরকার। পাড়ায় পাড়ায় সমাধান করতে হচ্ছে। তার মানে এতদিন পাড়ায় পাড়ায় সমস্যা ছিল।’’ এর পরেই তিনি বলেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে শুরু থেকেই দুয়ারে দুয়ারে যাবে সরকার। পাড়ায় পাড়ায় যাবে। রাজীব যেমন এই দুই প্রকল্পের কথা বলেছেন তেমন ক্ষমতায় এলে রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্যপ্রকল্প চালুর আশ্বাস দেন অমিত শাহ। ভার্চুয়াল বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প বাংলায় কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
শনিবার রাজীবের সঙ্গে দিল্লি গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন উত্তরপাড়া ও বালির বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল, বৈশালী ডালমিয়া। তাঁরা ছাড়াও ছিলেন হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তী, রাণাঘাট পুরসভার প্রাক্তন প্রশাসক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় ও অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। এঁদের মধ্যে রবিবার বক্তৃতা করেন শুধু রাজীব ও রুদ্রনীল। দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায়দের চেয়ে রবিবার বেশি সময় পান রাজীবই। তাঁর কথায় বারবারই রাজ্য সরকারের সমালোচনা ঘুরে ফিরে এসেছে। প্রশ্ন তোলেন ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প নিয়েও। বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী ভাঁওতা। বলা হচ্ছে প্রতি পরিবার ৫ লাখ টাকা কভারেজ পাবে। এক কোটি পরিবার যদি ৫ লাখ টাকা করে পায় তবে কত টাকা হয়? ৫ লাখ কোটি টাকা। সরকারের বাজেট কত?’’ রাজীবের এই আক্রমণ প্রসঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে সেচ দফতর ও পরে বন দফতরের মন্ত্রী থেকেছেন। এতদিন এই সব কথা বলেননি কেন?’’
ছেড়ে আসা দল ও সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে রাজীব দাবি করেন, বাম আমলের মতো এখনও কথায় কথায় কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তোলা হয়। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কেন্দ্রের থেকে টাকা আদায় করতে না পারাটা কার ব্যর্থতা?’’ এখানেই না থেমে রাজীব দাবি করেন, শনিবার তিনি অমিত শাহকে বলেছেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক দেনা যেন মকুব করা হয়। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে অমিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলেও দাবি করেন রাজীব। তবে রবিবার ডুমুরজলার সমাবেশে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বক্তৃতা করার সময় এই ব্যাপারে কোনও উল্লেখ করেননি অমিত।
রবিবারের সমাবেশে আরও অনেক জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিজেপিতে যোগ দেন। তবে তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বাণী সিংহ রায়। তৃণমূলের সূচনার সময়ে রাজ্য সহ-সভাপতি ছিলেন বাণী। রবিবার নিজের বক্তব্যে সেই কথা উল্লেখ করেন শুভেন্দু। বলেন, ‘‘দল তৈরির প্রথম ফর্মে সই করেছিলেন মুকুল রায় ও বাণী সিংহ রায়। তাঁরা দু’জনেই আজ বিজেপি-র মঞ্চে।’’
তৃণমূলে থাকার সময়েও বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করে সম্মান না পাওয়ার কথা বলেছেন রাজীব। একই সঙ্গে বলেছেন, তিনি কখনও কাউকে অসম্মান করেননি। সেই পুরনো কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি রাজীব রবিবার বলেন, ‘‘যতদিন বেঁচে থাকব, যতদিন বিজেপিতে থাকব ততদিন কর্মীদের সম্মান করব। আমি মনে করি কর্মীরাই সম্পদ। তাঁদের জন্যই আজকে আমরা নেতা।’’ রাজ্য সরকার ও তৃণমূলকে বিভিন্ন ইস্যুতে আক্রমণ করলেও রবিবার রাজীব তাঁর বক্তব্যে একটি বারের জন্যও মমতা বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উচ্চারণ করেননি। তবে শুভেন্দু তাঁর বক্তব্যের সাম্প্রতিক ধারাই বজায় রেখেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy