Advertisement
০২ জানুয়ারি ২০২৫
Beggar Mother

ভিক্ষা নয় আর! আনন্দবাজার অনলাইনে লড়াইয়ের খবরে মিলেছে ব্যবসার পুঁজি, সঙ্গে সন্তান পালনের সহায়তা

নতুন বছরে নতুন দিন আসতে চলেছে রাজভবনের ফুটপাতে থাকা সেই ভিখারিনি মায়ের জীবনে। বছর শেষ হওয়ার আগেই সুখের আশ্বাস পেয়েছেন মিনতি এবং তাঁর সন্তান কিষাণ ওরফে গোপি।

Beggar woman of Kolkata got assurance for help from a Ngo

ফুটপাথের সংসারে আলো। —নিজস্ব চিত্র।

পিনাকপাণি ঘোষ
শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:৪২
Share: Save:

সন্তানকে শুধু বড় করাই নয়, বড় মনের চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন নিয়ে কলকাতার ফুটপাতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এক ভিখারিনি মা। আনন্দবাজার অনলাইন সেই মায়ের লড়াই আর স্বপ্নের খবর লিখেছিল ১৯ ডিসেম্বর। মাস শেষ হওয়ার আগেই ভাগ্যবদলের সম্ভাবনা তৈরি হয়ে গেল সেই মায়ের।

নতুন বছর ২০২৫ সালে তিনি ব্যবসা করতে পারবেন। খবর প্রকাশের পরেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ভিখারিনি মা মিনতি দাস ব্যবসা শুরু করার প্রাথমিক মূলধন পেয়ে গিয়েছেন। ছেলেকে বড় করার সহায়তাও নিশ্চিত হয়েছে। তাই নতুন বছরে নতুন দিন শুরু করার স্বপ্ন এখন ছোট্ট কিষাণেরও। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সৌজন্যে ক্রিসমাসে নতুন পোশাক হয়েছে। সে পোশাক কিষাণ নিজে পছন্দ করে কিনেছে নিউ মার্কেট থেকে। সেই পোশাকে আর কিষাণের হাসিতে উজ্জ্বল আভা। সেই আভা তার মায়ের চোখেমুখেও।

Beggar woman of Kolkata got assurance for help from a Ngo

মা মিনতি দাসের সঙ্গে কিষাণ। —নিজস্ব চিত্র।

তিন বছর বয়স কিষাণের। রাজভবনের ফুটপাতেই দিন কাটে মায়ের সঙ্গে। তবে সকালে যায় রাজভবনের স্কুলে। তবে মা মিনতি সেখানে লেখাপড়াটুকুতেই ছেড়ে দেন না। আদরের গোরিকে (ছেলেকে ওই নামেই ডাকেন মিনতি) ফুটপাতে বসেও পড়া তৈরি করতে হয়। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে মা-ছেলের পড়া পড়া খেলা। সেই ফাঁকে মায়ের ভিক্ষাপাত্রও ভরে। ছেলেকে মানুষ করতে আরও অনেক টুকটাক কাজ করতে হয় মিনতিকে। আনন্দবাজার অনলাইন সেই যাপনের কথা প্রকাশ করার পর মিনতির সঙ্গে যোগাযোগ করেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা জুলফিকার আলি পিয়াদা। ‘মানবতা’ নামে তাঁর একটি সংগঠন রয়েছে। দুঃস্থ শিশুদের লেখাপড়ার দায়িত্ব সামলানোই মূল কাজ সেই সংগঠনের। সেইমতোই কিষাণকে লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে দিয়েছে ওই সংস্থা। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এই সাহায্য চলবে ‘গরিবের ডাক্তার’ হতে চাওয়া কিষাণের লেখাপড়া শেষ না-হওয়া পর্যন্ত।

সংগঠনটির ঠিকানা ঢোলা থানার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রাম। তারই কর্ণধার জুলফিকার এসেছিলেন রাজভবনের ফুটপাতে। সেখানে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের সাক্ষী রেখে কিষাণের লেখাপড়া ও অন্যান্য প্রয়োজনের দায়িত্ব নেওয়ার সময়েই জুলফিকার মিনতিকে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ছোটখাট ব্যবসা করার প্রস্তাব দেন। এক কথায় রাজি হয়ে যান ভিখারিনি মা। কিন্তু প্রশ্ন করেন, মূলধন কোথায় মিলবে। ‘মানবিক’ সংগঠন জানিয়ে দেয়, তারা মিনতিকে ব্যবসা করতে টাকা দেবে। ছেলেকে বড় করতে সাহায্য করবে। কিন্তু মিনতির আর ভিক্ষা করা চলবে না। মিনতি বললেন, ‘‘আমি তো কাজ করতেই চাই। রোজ রাতে একটা চায়ের দোকানের বাসন মেজে দিই। এখন ব্যবসার টাকা পেলে রাজভবনের কাছেই কোথাও ঝালমুড়ির দোকান দেব ভাবছি।’’

সুদিন আসতে পারে, আশা করছেন মিনতি। আর জুলফিকার বলেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে ব্যবসার সুযোগ পেলে ভিক্ষা করবেন না। আর ছেলেকে ভাল করে মানুষ করতেও চান। আমরা তাই যে কোনও প্রয়োজনে পাশে থাকব বলে কথা দিয়ে এসেছি।’’

সে সব কথার সময়ে কী-ই বা বুঝতে পেরেছে ছোট্ট কিষাণ? তবে গাড়ি করে নিউ মার্কেটে যাওয়া, পছন্দ করে শীতের পোশাক কেনায় আনন্দ পেয়েছে বিস্তর। বাজারেই পরে নিয়েছে নতুন পোশাক। তার পরে মায়ের হাত ধরে হাঁটতে শুরু করে দিয়েছে। আর মা বলে চলেন, ‘‘ভাল করে পড়তে হবে বাবা। অনেক বড় হতে হবে। গরিবের কথা ভাবতে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Beggar NGO Raj Bhavan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy