Advertisement
E-Paper

ছুটির ঘণ্টা

সম্প্রতি বঙ্গে গ্রীষ্মের রুদ্ররূপ পর্ব শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, এপ্রিল-জুনে পশ্চিমবঙ্গে তাপপ্রবাহ স্বাভাবিকের তুলনায় দীর্ঘতর হবে।

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৫৭
Share
Save

পশ্চিমবঙ্গে গরমের সঙ্গে সরকারি শিক্ষার সম্পর্কটি বৈরী। পারদ চড়লেই সরকারি এবং সরকারপোষিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির ঘণ্টা বেজে ওঠে, এবং দেড়-দুই মাসের আগে স্কুলের দরজা খোলে না। সম্প্রতি বঙ্গে গ্রীষ্মের রুদ্ররূপ পর্ব শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, এপ্রিল-জুনে পশ্চিমবঙ্গে তাপপ্রবাহ স্বাভাবিকের তুলনায় দীর্ঘতর হবে। অতএব ফের এক দীর্ঘায়ত ছুটির আশঙ্কায় শিক্ষকসমাজ। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে বিদ্যালয়ে গরমের ছুটি সাধারণত প্রলম্বিত হয়। উষ্ণায়িত বিশ্বে গ্রীষ্ম সাম্প্রতিক কালে তার স্বাভাবিক ছন্দে আসে না, এমন কথাও অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, আগামী বছরগুলিতে সমগ্র বিশ্বেই গ্রীষ্ম প্রবলতর এবং দীর্ঘতর হয়ে উঠবে। এই আশঙ্কা মাথায় রেখে এবং গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে প্রতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ছুটির তালিকা প্রস্তুত করবেন সুবিবেচক প্রশাসক এবং দায়িত্বপ্রাপ্তরা— এমন আশাই করেন নাগরিক। কিন্তু এই রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে ছুটির বিষয়টি বহু-র আলোচনার বিষয় নয়, তা প্রধানত এক-এর আবেগ এবং তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। ফলত, পাঠ অসম্পূর্ণ থাক, পরীক্ষা অসমাপ্ত থাক, শিক্ষার্থীরা দ্বিপ্রাহরিক আহার-বঞ্চিত হোক— পাঠশালা বন্ধই থাকে।

পশ্চিমবঙ্গে গরমের ছুটি নিয়ে বিতর্কের কারণ, খাতায়-কলমে এই ছুটি খুবই স্বল্পস্থায়ী। এই বছর যেমন গ্রীষ্মাবকাশের সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে মাত্র এগারো দিন— ছুটি পড়বে ১২ মে, স্কুল খুলবে ২৩ মে। কিন্তু শিক্ষকরাও জানেন, এই হিসাবের সঙ্গে বাস্তবের মিল সামান্যই। পরিবর্তনের সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ রাজ্য অন্তত সরকারি শিক্ষাক্ষেত্রে ছুটির বিষয়ে লক্ষণীয় উন্নতি করেছে। গরমের ছুটি ক্রমশ এগিয়ে এপ্রিলের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই শুরু হয়ে যায়। শেষ হয় জুনের গোড়ায়। তাতেও বিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের ছন্দ বিঘ্নিত হত না, যদি শিক্ষাবর্ষের গোড়া থেকেই অন্য ছুটিগুলিকে কমিয়ে, সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার মানসিকতা থাকত। দুর্ভাগ্য, কোনও বছরেই সেই দূরদৃষ্টির পরিচয় মেলে না। ফলে, অন্য ছুটি স্ব-মহিমায় বজায় থাকে, সঙ্গে যুক্ত হয় দীর্ঘ গ্রীষ্মাবকাশের বোঝা। পড়ার ক্ষতি পূরণ হবে কী উপায়ে? অন্য সময়েও এ রাজ্যে সরকারি ও সরকারপোষিত স্কুলে নিয়মিত পঠনপাঠন হয় না। কারণ, বহু জায়গায় জরাজীর্ণ পরিকাঠামো এবং শিক্ষক-ছাত্র অনুপাতে তীব্র অসামঞ্জস্য। স্কুল বন্ধ থাকলে সরকারি শিক্ষার এই কঙ্কালসার দশাটি ঢাকা দেওয়া সহজ হয়। তাই কি ছুটির এ-হেন ঘনঘটা?

কথায় কথায় ছুটি— পলায়নি মনোবৃত্তিকেই স্পষ্টতর করে। স্বীয় দায়িত্ব থেকে পলায়ন। এ রাজ্যে সরকারি এবং সরকারপোষিত স্কুলগুলির সমস্যা বহুবিধ। সর্বপ্রধান সমস্যা উপযুক্ত অর্থবরাদ্দের। শুধুমাত্র কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রীর মতো প্রকল্প দিয়ে এ রাজ্যে সরকারি শিক্ষাকে বিচার করা ভুল। যে রাজ্যে টাকার অভাবে পুষ্টিবঞ্চিত থেকে যায় শিক্ষার্থীরা, বিদ্যালয়গুলিতে চক-ডাস্টার কেনা, প্রশ্নপত্র ছাপানো দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে, সেখানে রাতারাতি শিক্ষার স্বাস্থ্য ফেরানো কঠিন কাজ। কেন্দ্রীয় সরকারকে দোষারোপের পূর্বে রাজ্যের বরাদ্দ ঠিক সময়ে বিদ্যালয় খাতে ঢুকেছে কি না— সেই আত্মবীক্ষণ আরও কঠিন। এত সব কঠিন কাজের পরিবর্তে লম্বা ছুটি দিয়ে সাময়িক মুখ বন্ধ করার প্রচেষ্টাটি সহজ। অভিজ্ঞতা বলে, রাজ্য সরকার আপাতত সেই সহজ কাজে মনোযোগী।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Education system Kanyashree Educational Institutes

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}