Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

রাজ্যের জন্য বিতর্কে অন্য তর্কে দুই তরুণ

সংসদের অধিবেশন নয়। মাঠে-ময়দানের সম্মুখ সমরও নয়। শহরের অভিজাত ক্লাবের আঙিনায় বিশিষ্ট পরিবেশে নিখাদ তার্কিক লড়াইয়ের বিতর্ক-সভা। তবু তার মধ্যেই রাজনীতির তপ্ত কড়াই থেকে এক পশলা গরম তরজা উথলে উঠল শনিবার! এতটাই উত্তেজনার রসদ জোগাতে সফল হল ‘দ্য টেলিগ্রাফ ন্যাশনাল ডিবেট’!

ফ্রেমবন্দি টেলিগ্রাফ বিতর্কে অংশগ্রহণকারীরা। বাঁ দিক থেকে সঞ্জয় নিরুপম, জিতনরাম মাঁঝি, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, বাবুল সুপ্রিয়, অজয় মাকেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, ওমর আবদুল্লা ও সিদ্ধার্থনাথ সিংহ।

ফ্রেমবন্দি টেলিগ্রাফ বিতর্কে অংশগ্রহণকারীরা। বাঁ দিক থেকে সঞ্জয় নিরুপম, জিতনরাম মাঁঝি, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, বাবুল সুপ্রিয়, অজয় মাকেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, ওমর আবদুল্লা ও সিদ্ধার্থনাথ সিংহ।

সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৬
Share: Save:

সংসদের অধিবেশন নয়। মাঠে-ময়দানের সম্মুখ সমরও নয়। শহরের অভিজাত ক্লাবের আঙিনায় বিশিষ্ট পরিবেশে নিখাদ তার্কিক লড়াইয়ের বিতর্ক-সভা। তবু তার মধ্যেই রাজনীতির তপ্ত কড়াই থেকে এক পশলা গরম তরজা উথলে উঠল শনিবার! এতটাই উত্তেজনার রসদ জোগাতে সফল হল ‘দ্য টেলিগ্রাফ ন্যাশনাল ডিবেট’!

রাজনীতি শুধু রাজ্য নিয়েই এবং রাষ্ট্রের জন্য নয় এই ছিল এ বারের বিতর্ক-সভার বিষয়। প্রস্তাবই এমন, যেখানে পক্ষে বলতে গেলে বিপক্ষের যুক্তি এসে যায়। বিপক্ষে বলতে গেলে পক্ষের যুক্তি ছোঁয়া

হয়ে যায়! এমন পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত তর্কের মধ্যেও এ দিনের সভায় তরজা বাধল এ রাজ্যের দুই সাংসদের মধ্যে! ঘটনাচক্রে, তাঁরা এক জন ‘রাষ্ট্র’ এবং অন্য জন ‘রাজ্যে’রই প্রতিনিধি! বিজেপি-র সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের কটাক্ষ শুনে ক্ষুব্ধ তৃণমূলের ‘যুবরাজ’ সাংসদ-পদ থেকে ইস্তফার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন ক্লাব লনেই! বেশ কালঘাম ছুটিয়েই শেষ পর্যন্ত প্রশমন করতে হল উত্তেজনা!

প্রস্তাবের পক্ষে বলার জন্য বক্তা ছিলেন দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অজয় মাকেন (হাইকম্যান্ড সংস্কৃতি তুলে দেওয়ার পক্ষে জোরালো সওয়াল করে যিনি আবার ‘অন্য খবর’ করে দিয়েছেন), বাবুল, সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। বিপক্ষের প্যানেলে তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেসের অন্যতম সর্বভারতীয় মুখপাত্র সঞ্জয় নিরুপম, বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝি এবং বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। প্রতিপক্ষের যুক্তিকে পরাস্ত করতে গিয়ে পরস্পরের দিকে খোঁচা থাকবে, আক্রমণ থাকবে, বিতর্কের নিয়মই তা-ই। কিন্তু এ বারের ‘দ্য টেলিগ্রাফ ন্যাশনাল ডিবেট’ তার চেয়ে বেশি কিছুই দেখল এ দিন!

প্রস্তাবের বিপক্ষে বলার ইনিংস শুরু করার ভার পড়েছিল তরুণ সাংসদ অভিষেকের উপরেই। আগাগোড়া ঝোড়ো কায়দায় ব্যাট করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো। সব রাজ্যের সমান উন্নতিই রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করে, এই যুক্তি সাজাতে গিয়ে তাঁর পিসির ঋণ-তত্ত্বকেও কৌশলে ব্যবহার করে নিয়েছিলেন অভিষেক। বলেছিলেন, “এ রাজ্য থেকে কেন্দ্র যে ঋণের সুদ বাবদ টাকা কেটে নিয়ে যায়, তা থেকে গুজরাতের এক জন সাধারণ কৃষকের উপকার হলে আমরা গর্বিতই হব!” কিন্তু গোল বাধল শেষ লগ্নে। বক্তৃতার উত্তেজনাতেই হয়তো, নিজের নির্ধারিত সময় ছাড়িয়ে খানিকটা লম্বা টেনে দিলেন অভিষেক। বিতর্ক-সভার সঞ্চালক ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরস তির “তুমি আমাদের মানে ব্যানার্জিদের নাম ডোবাচ্ছো” এটাও হজম করে নিলেন স্মিত হাস্যে। কিন্তু বাবুলের খোঁচা, রাজনীতির রঙের জন্যই সম্ভবত, অত সহজপাচ্য ছিল না!

পাশাপাশি দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাবুল সুপ্রিয়।

বক্তৃতা শেষ করতে গিয়ে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ বোঝাতে চেয়েছিলেন, ‘ইন্ডিয়া’ কথাটার মধ্যে ‘আই’ আছে দু’বার। একটা ‘আই’ সরিয়ে রাখলে বাকি চারটে বর্ণ এমনই যে, দেশের সবক’টি রাজ্যের নামের মধ্যে কোনও না কোনও ভাবে তার কোনও একটা উপস্থিত! এটাই বোঝাতে চেয়ে বলেছিলেন ‘ইন্ডিয়া’র আই, এন, ডি, এ-র কথা।

মাঝে ‘আই’ বলেননি। অভিষেকের পরের বক্তা হিসাবে উঠে তরুণ মন্ত্রী বাবুল প্রথম কটাক্ষটা ছাড়লেন তাঁর পূর্ববর্তীর বাচন-ভঙ্গি নিয়ে। বললেন, “ব্রিগেডের ভাষণ আমি এখানে আমদানি করতে চাই না!

এটা ময়দানের রাজনীতি করার জায়গা নয়।” মিশরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট হোসনে মুবারক নিজের নামাঙ্কিত স্যুট বানিয়েছিলেন বলে একটা প্রসঙ্গে ঢুকেছিলেন অভিষেক। বাবুল কায়দা করে তুলে দিলেন, ওটা যে আসলে নরেন্দ্র মোদীর প্রতি খোঁচা, তাঁরা ধরে ফেলেছেন! এর পরেই বললেন, ‘ইন্ডিয়া’ শব্দের বর্ণেও গোলমাল করে ফেলেছেন অভিষেক!

তক্ষুনি কিছু অবশ্য ঘটেনি। এর পরে সঞ্জয় অভিষেকদের পক্ষেই বলতে গিয়ে ‘দিদি’র কিছু ‘অনাবশ্যক অবস্থানে’র বিরোধিতা করে ফেলেছেন। তার জন্য ওমর সহাস্যে দাবি করেছেন যে, সঞ্জয় আসলে তাঁদের পক্ষেই বলেছেন! সিপিএমের ঋতব্রত সুযোগ কাজে লাগিয়ে আটের দশকে জ্যোতি বসু শ্রীনগরে গিয়ে রাজ্যের অধিকারের পক্ষে কনক্লেভ করে আসার পরেই কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্স সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকার কী ভাবে ফেলে দিয়েছিল, সেই ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওমরের সমর্থন জিতে নিয়েছেন। আবার সিদ্ধার্থনাথ ওমরের সঙ্গে টক্কর দিতে গত ৮ মাসে মোদী সরকারের ‘সাফল্যে’র খতিয়ানও বিতর্ক-সভায় তুলে দিয়েছেন! এ সব মিটে যাওয়ার পরেই আচমকা উত্তাপ বেড়ে গেল বসন্ত-সন্ধ্যার!

প্রস্তাবের পক্ষে না বিপক্ষে, কোন দিকে বেশি হাত উঠল এই নিয়ে যখন গুঞ্জন, ভিক্টর নিজে বিভ্রান্ত, তার মধ্যেই মাইক্রোফোন টেনে অভিষেক দাবি করলেন, তিনি ‘ইন্ডিয়া’ নিয়ে ভুল কিছু বলেননি। ভিডিও ফুটেজ দেখলেই সেটা বোঝা যাবে। তিনি ভুল করেছেন দেখাতে পারলে সাংসদ পদ থেকেই ইস্তফা দেবেন! বাবুলও আবার পাল্টা ভিডিও দেখে ভুল শুধরে নেওয়ার ‘পরামর্শ’ দিতে গেলেন হাসিমুখে। তাতে বরং পরিবেশ আরও গম্ভীর হল! শেষমেশ ভিক্টরই তাঁর সম-পদবির তরুণকে বোঝাতে লাগলেন, এত ‘সিরিয়াসলি’ নেওয়ার বিষয় এটা নয়!

বিতর্কের মীমাংসা তা হলে কী হল? পরে জানা গেল, জয়ী হয়েছেন অভিষেকেরাই!

শনিবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

অন্য বিষয়গুলি:

telegraph debate sandipan chakraborty calcutta club
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE