Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ঠিকানা পেল পরিত্যক্ত শিশুকন্যা

তখন শিশুটির বাবা-মায়ের খোঁজ করা হয়েছিল। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও তাঁদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বুঝতে পেরেছিলেন, হয়তো দায় এড়াতেই শিশুটিকে তার পরিবারের সদস্যেরা ফেলে গিয়েছিলেন।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ০০:২৫
Share: Save:

পরিবার ফেলে গিয়েছিল। বুকে টেনে নিয়েছিলেন হাসপাতালের কর্মীরাই। সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগেই এ বার ঠিকানা পেল দু’বছরের খুদে।

কয়েক মাস আগের ঘটনা। অন্য পাঁচটা দিনের মতোই ব্যস্ত ছিল এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বর। চারদিকে থিকথিকে ভিড়। বহির্বিভাগের সামনে দীর্ঘ লাইন। একের পর এক অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকছে-বেরোচ্ছে হাসপাতালে। এরই মধ্যে কর্মীদের নজরে প়ড়েছিল হাসপাতালের এক পাশে বছরের দেড়েকের একটি শিশু পড়ে। খবর পৌঁছেছিল হাসপাতালের সুপার এবং সহকারী সুপারের কাছে।

তখন শিশুটির বাবা-মায়ের খোঁজ করা হয়েছিল। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও তাঁদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বুঝতে পেরেছিলেন, হয়তো দায় এড়াতেই শিশুটিকে তার পরিবারের সদস্যেরা ফেলে গিয়েছিলেন।

তার পর থেকে হাসপাতালই হয়ে উঠেছিল শিশুটির ঠিকানা। চিকিৎসকেরা শিশুটির শারীরিক পরীক্ষা করে দেখেন, ওই শিশুকন্যা মাল্টিপল ডিজেবিলিটির শিকার। অর্থাৎ তার হাত-পা অন্যান্য বাচ্চাদের মতো শক্ত নয়। পেশির জোর না থাকায় নিজের চেষ্টায় হাত-পা নাড়ানোর ক্ষমতা শিশুটির নেই। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের বিকাশ না হওয়ার ঝুঁকিও ছিল শিশুটির।

এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ জানান, শিশুটি হাসপাতালে দেড় মাসেরও বেশি ছিল। হাসপাতালের কর্মীরাই ওর নাম রেখেছিলেন বর্ষা। কিন্তু শারীরিক এবং মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুকে রাখার উপযুক্ত জায়গা হাসপাতাল চত্বরে নেই। তাই কর্তৃপক্ষ রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরে যোগাযোগ করেন। পুরো বিষয়টি জানার পরে দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা উদ্যোগী হয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হোমে বর্ষাকে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

আইনি জটিলতা কাটিয়ে ৪ মে বর্ষাকে ওই সংস্থার হোমে পাঠানো হয়েছে। সংস্থার তরফ থেকে শৈবাল গুহ বলেন, ‘‘শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। বর্ষাকেও নিয়মিত ফিজিওথেরাপি করানো হচ্ছে। আশা করছি ওর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হবে।’’

হাসপাতাল সূত্রে খবর, বর্ষা এসএসকেএমে সহকারী সুপার সেবন্তী মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে থাকত। তিনি বলেন, ‘‘একটি শিশু হাসপাতালে বড় হবে, সেটা তো হতে পারে না। বর্ষা একটা ঠিকানা পেয়েছে, সেটা জেনে খুবই ভাল লাগছে।’’ সুপার চিকিৎসক মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বর্ষা সুস্থ থাকুক। সেটাই আমরা চাই।’’

এ রাজ্যে অসংখ্য শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু অভিভাবকহীন হয়ে থাকে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত সরকারি ব্যবস্থা নেই কেন? ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তা নিয়ে। যদিও মন্ত্রী শশী পাঁজা বর্ষার ক্ষেত্রে এসএসকেএমের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ‘‘এ রাজ্যে স্পেশ্যাল চাইল্ডদের জন্য আলাদা হোম রয়েছে। জানি, সেটা পর্যাপ্ত নয়। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের সহযোগিতা দরকার। রাজ্য পরিকল্পনা করলেও কেন্দ্রের অনুমতি না হলে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মুশকিল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Girl Child Place Abandoned
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE