আড়াল: ত্রিপলের ভরসায় প্রতিমার কাজ শেষ করছেন শিল্পীরা। বৃহস্পতিবার, কুমোরটুলিতে। নিজস্ব চিত্র
মাথায় গামছা। পরনে ময়লা কাপড়। নাগাড়ে বৃষ্টিতে সে সবই ভিজে গিয়েছে। কুমোরটুলির পুরনো দোতলা বাড়ির চাতালে হতাশ মুখে বসে ওঁরা। মৃৎশিল্পীদের স্টুডিয়ো থেকে পুজো উদ্যোক্তাদের বাড়ি অথবা মণ্ডপে প্রতিমা পৌঁছে দিতে প্রতিবছর মহালয়ার দিন দু’য়েক আগে কুমোরটুলি পাড়ায় ওঁদের আগমন ঘটে। বৃষ্টির জেরে এ বার নাকাল হতে হচ্ছে ওঁদের। ওঁরা মানে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, গোসাবা থেকে আসা মোটবাহকেরা। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত যাঁদের রোজগার শূন্য।
ঠাকুর বার হচ্ছে কি না, খোঁজ নিতে সারা কুমোরটুলি ঘুরে একটিরও খোঁজ পেলেন না ক্যানিংয়ের বাসিন্দা সমীর পাল, রমেশ পাল, রমেন সর্দার, বাবু সর্দারেরা। মাঝবয়সি সমীর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলছিলেন, ‘‘আমরা যে শিল্পীদের কাছে উঠেছি, তাঁদের স্টুডিয়ো থেকে প্রায় দশটি প্রতিমা বিভিন্ন মণ্ডপে ও বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। এখনও বউনি হল না। বৃষ্টিই যত গন্ডগোল করল।’’ শিল্পী মিন্টু পালের কথায়, ‘‘আমার স্টুডিয়ো থেকে তিনটি প্রতিমা যাওয়ার কথা ছিল। বৃষ্টির জন্য উদ্যোক্তারা তারিখ পিছিয়ে দিয়েছেন। এ ভাবে বৃষ্টি চললে কী হবে বুঝতে পারছি না।’’
একটানা বৃষ্টিতে মোটবাহক, কুমোরটুলির শিল্পী থেকে পুজো উদ্যোক্তা সবারই মাথায় হাত। এ দিন কুমোরটুলি পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, স্টুডিয়োর বাইরে থাকা সব প্রতিমা আধ ছেঁড়া, পুরনো প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রেখেছেন শিল্পীরা। কারণ কুমোরটুলি পাড়ায় শিল্পীদের স্টুডিয়োর পরিকাঠামো তেমন ভাল নয়। অধিকাংশ প্রতিমা তাই স্টুডিয়োর বাইরেই রাখা থাকে। এ দিকে বৃষ্টির কারণে প্রতিমা শুকোতে সমস্যা হচ্ছে। ফলে ল্যাম্পের তেল পুড়িয়ে প্রতিমা শুকোতে হচ্ছে। বৃষ্টিতে কয়েকটি প্রতিমার আঙুল গলেও গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু পাল। হাওয়া অফিস এখনও কুমোরটুলির শিল্পী তথা পুজো উদ্যোক্তাদের সুখবর দিতে পারেনি। ফলে আকাশ কবে থেকে মেঘমুক্ত হবে তা-ও অজানা শিল্পীদের। গত তিন দিন ধরে মেঘলা আকাশ ও বৃষ্টির জেরে ঠাকুর ‘ডেলিভারি’ দিতে যেমন সমস্যায় পড়েছেন কুমোরটুলির শিল্পীরা, তেমনই এ রকম আবহাওয়ায় পুজো কী ভাবে সামলাবেন তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় উদ্যোক্তারা। তবে এই মুহূর্তে সব থেকে সমস্যায় পড়েছেন মৃৎশিল্পীরাই।
বাবু পাল জানান, দিন কয়েক আগে সরকারি তরফে স্থানীয় বিধায়ক তথা মাননীয় মন্ত্রী শশী পাঁজা কুমোরটুলির শিল্পীদের প্লাস্টিক দিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘অর্ধেক শিল্পী প্লাস্টিকই পাননি। বেশিরভাগ শিল্পী প্লাস্টিক না পাওয়ায় বৃষ্টিতে সমস্যায় পড়ছেন। নিজের টাকায় প্লাস্টিক কিনতে হচ্ছে।’’ এ প্রসঙ্গে কুমোরটুলির শিল্পীদের অন্য একটি সংগঠন কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সমিতির সম্পাদক কার্তিক পাল বলেন, ‘‘মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতি প্লাস্টিকের জন্য আবেদন করেনি।’’ শ্যামপুকুরের বিধায়ক শশী পাঁজা বলেন, ‘‘ওঁরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সবাইকেই প্লাস্টিক দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy