ছবি রয়টার্স।
কিছু দিন আগে একই অ্যাম্বুল্যান্সে ঠাসাঠাসি করে ২২ জন করোনা রোগীর মৃতদেহ বহনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় তা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছিল। বিতর্কের পাশাপাশি মহারাষ্ট্রের ওই ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও সামনে এনেছিল। তা হল, যে পদ্ধতিতে কোভিডে মৃতদের সৎকারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তাতে কোথাও মৃতের মর্যাদাহানি হচ্ছে না তো? এমনিতেই কোভিডে মৃত্যু হলে বিধি অনুযায়ী পরিবার-পরিজনেরা অন্ত্যেষ্টিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। ফলে সেখানে এই প্রশ্নটি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
মহারাষ্ট্রের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি পশ্চিমবঙ্গে যাতে না ঘটে, তার জন্য কোভিডে মৃতদের সৎকারে সম্প্রতি নির্দিষ্ট নিয়মবিধি (অ্যাডভাইজ়রি) জারি করেছে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। ওই নিয়মবিধির মূল নির্যাসই হল— সৎকার পদ্ধতির আয়োজন এমন ভাবে করতে হবে, যাতে কোভিডে মৃতেরা তাঁদের প্রাপ্য সম্মানটুকু পান। কোভিডে মৃতদের সৎকারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভাবে বলা হয়েছে—‘ইন অর্ডার টু মেন্টেন ডিগনিটি, গ্রেস, রেসপেক্ট...’। এ-ও বলা হয়েছে, কোভিডে মৃতদের সৎকার যাতে সম্মানজনক ভাবে হয় (এনসিয়োর অল স্মুথনেস অ্যান্ড ডিগনিটি), তা নিশ্চিত করতে হবে প্রতিটি পুরসভা ও পুর নিগমকে। যা সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
কিন্তু সরকারি তরফে যতই কোভিডে মৃত্যুর সম্মান বা ‘ডিগনিটি’-র কথা বলা হোক না কেন, বাস্তবের সঙ্গে তার অনেক ফারাক রয়েছে বলেই জানাচ্ছেন অনেকে। যেমন, বাগবাজারের বাসিন্দা পারমিতা গুহ কিছু দিন আগে তাঁর মাকে হারিয়েছেন। তাঁর মা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তার পরে যা যা অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে পারমিতার বক্তব্য, ‘‘এই ঘটনা যেন অন্য কারও সঙ্গে না ঘটে। কারণ যাঁদের সঙ্গে এমন ঘটছে, একমাত্র তাঁরাই বুঝতে পারছেন, কীসের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে!’’
ঠিক কী হয়েছিল?
পারমিতা জানাচ্ছেন, মৃত্যুর ৩০ ঘণ্টা পরে তাঁর মায়ের শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করা গিয়েছিল। অথচ সরকারের নিয়মবিধি বলছে, তিন ঘণ্টার মধ্যে সৎকার-প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। শুধু তা-ই নয়, যেখানে অন্ত্যেষ্টি হচ্ছে, সেই শ্মশান বা কবরস্থানে ‘অন স্পট’ মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়ার কথা বলা হলেও মায়ের মৃত্যুর পাঁচ দিন পরেও সেই শংসাপত্র হাতে পাননি পারমিতা। শুধু তিনিই নন, এ রকম ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে আরও অনেককেই।
অথচ ‘অ্যাডভাইজ়রি’-তে শবদাহ বা কবর দেওয়ার সময়ে মৃতের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পুরোহিত, ইমাম বা যাজকের (প্রিস্ট) ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। এই কাজের জন্য পুরোহিত, মৌলানা এবং যাজকের একটি তথ্যভাণ্ডারও তৈরি করতে হবে সংশ্লিষ্ট পুরসভা, পুর নিগমকে। মৃতের পরিবারকে তাদের পছন্দ মতো শ্মশান বা কবরস্থান বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। তবে একই সঙ্গে পরিবারকে যাতে হয়রানির সম্মুখীন হতে না হয়, সে কারণে সংশ্লিষ্ট শ্মশান বা কবরস্থানে কত ক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে, তা-ও বিস্তারিত ভাবে জানানোর কথা বলা হয়েছে।
পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে, করোনায় মৃত্যু হলে পরিবারের লোকজন শোক করার সময়টুকু পর্যন্ত পান না। কারণ কী ভাবে সৎকার হবে, তা নিয়েই তাঁদের তখন ভাবতে হয়। ওই কর্তার কথায়, ‘‘কিন্তু প্রিয়জনকে হারানোর শোকের অধিকার যেমন পরিবারের রয়েছে, তেমনই মৃত ব্যক্তিরও সম্মান প্রাপ্য। নিয়মবিধি জারি করে সেটুকুই নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ যদিও পারমিতা এবং আরও অনেকের বক্তব্য, এত নিয়মবিধি থাকলেও মৃতের সৎকার কী ভাবে করা যাবে, তা নিয়ে অনন্ত অপেক্ষায় বসে থাকতে হচ্ছে পরিবার-পরিজনেদের। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা বলছেন, ‘‘এই প্রক্রিয়াটা সবে শুরু হয়েছে। পদ্ধতিতে যে যে ফাঁকগুলো রয়েছে, তা দ্রুত পূরণের চেষ্টা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy