শাড়ির সঙ্গে কোন ধরনের ব্লাউজ় মানানসই হতে পারে অভিনেত্রী রানি মুখোপাধ্যায়কে দেখেও ধারণা করতে পারেন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
মামাতো বোনের বিয়েতে নিজের বিয়ের বেনারসিটি পরবেন ঠিক করেছেন রাজন্যা। তবে শাড়ি বার করলেও, ব্লাউজ় গায়ে দিতে গিয়ে শুরু হল সমস্যা। ৪০ পেরোনো রাজন্যার শরীর কিঞ্চিৎ ভারী হয়েছে। ২৭ বছরে তৈরি করা ব্লাউজ় আর গায়ে আঁটে না।
অগত্যা মামাতো বোনের কথামতো কলকাতার নামী শাড়ির দোকানে ডিজ়াইনার ব্লাউজ় কিনতে ছুটলেন। আর সেই সব ব্লাউজ় দেখেই চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। মফস্সলে থাকা রাজন্যা যে একেবারে আধুনিক সাজসজ্জা করেন না, তা নয়। তবে, ছেলে হাই স্কুলে পড়ে। এই বয়সে এসে পিঠখোলা, প্যাড দেওয়া সোনালি ব্লাউজ় পরবেন?
রাজন্যা প্রতীকী মাত্র। ৪০ পার করা বহু মহিলার মনেই সাজসজ্জা নিয়ে নানা রকম দোলাচল তৈরি হয়। কেউ সপ্রতিভ ভাবে হালফ্যাশনের পোশাক পরতে পারেন। কারও আবার মনে হয়, বয়সটা বাড়ছে, চেহারাও ভারী হয়েছে, চোখে চালশে। এখন কি আর ৩০-এ যা মানাত, সেই সাজ মানাবে? মিহি বুনোটের শরীর ফুটে ওঠা জামদানি বা লখনউ চিকন পরার সাধ হলেও তাই সংবরণ করে নেওয়া ভাল।
তবে, সময় বদলেছে। বদলেছে ভাবনা। বদল এসেছে সাজপোশাকে, চিন্তন-মননে। আগেকার দিনে মা-ঠাকুরমারা চল্লিশে গাঢ় রং পরা ছেড়ে দিতেন। শাড়ির সঙ্গে যে কোনও একটা একরঙা ব্লাউজ় পরে নিতেন। তবে এখন দিব্যি আধুনিক শাড়ি, খোলামেলা ব্লাউজ়, পোশাকে নিজেদের মেলে ধরছেন চল্লিশ কেন পঞ্চাশোর্ধ্বরাও। কাজল, আইলাইনারে সেজে উঠছেন, গালে থাকছে গোলাপি ব্লাশের ছোঁয়া।
পোশাকশিল্পীরাও বলছেন সে কথাই। বয়স তো সংখ্যামাত্র। সঠিক ভাবে পরতে জানলে, যে কোনও বয়সেই যে কোনও পোশাক পরা যায়। গত কয়েক বছরে ফ্যাশনে বদল এসেছে অনেকটাই। শাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলেছে ব্লাউজ়ের ধরন-ধারণ। আসলে, এ-ও যেন এক শিল্প। মুকেশ অম্বানীর পত্নী নীতা অম্বানীর কথাই ধরা যাক না! ছোট ছেলে অনন্তের আশীর্বাদের অনুষ্ঠানে মুকেশ-ঘরনির নকশাদার ব্লাউজ় নিয়ে আজও কথা হয়। জারদৌসি কাজের জমকালো লেহঙ্গা পরেছিলেন নীতা। তবে নজর কেড়েছিল তাঁর ব্লাউজ়টিও। পদ্মফুল, হাতি ও মা লক্ষ্মীর পায়ের ছাপের নকশায় সুতো ও স্টোনের সূক্ষ্ম কারুকাজ। সেই মোটিফটি ঘিরে ছিল নীতার সব সন্তান ও নাতি-নাতনির নাম লেখা। ব্লাউজ়ের হাতায় আবার সংস্কৃত শ্লোক লেখা।
ঠিক তেমনটা না হোক, ১২ হাতের নিখুঁত সুতোর বুননের সঙ্গে হালফ্যাশনের অনেক ব্লাউজ়ই মুহূর্তে বদলে দিতে পারে সাজ। আর সেই পরিধানে বয়স কোনও বাধা নয় বলছেন পোশাকশিল্পীরা।
বিয়েবাড়ির ব্লাউজ়-ফ্যাশন
দৈনন্দিন অফিস হোক বা কর্পোরেট জগতের পার্টি, কিংবা বিয়েবাড়ি— যে কোনও অনুষ্ঠানে শাড়ি পরা চলে। তবে শুধু শাড়ি নয়, ভাবনার জায়গায় থাকুক ব্লাউজ়ও। পোশাকশিল্পী অনুশ্রী মলহোত্রা বলছেন, ‘‘ইদানীং চল্লিশোর্ধ্ব মহিলারাও ব্লাউজ় বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ সচেতন। কারণ, শাড়ি সাধারণ হলেও, ব্লাউজ়ের কারিকুরি, পিঠের নকশা সাজে অন্য মাত্রা এনে দেয়। বিয়েবাড়ির ক্ষেত্রে যেমন কাঞ্জিভরম বা বেনারসি শাড়ি পরলে তার সঙ্গে যদি কেউ বুক পর্যন্ত গভীর ভাবে কাটা গলার ব্লাউজ় পরেন, তা হলে তিনি গলায় চোকার পরুন বা ভারী হার, দেখতে ভাল লাগে। ভি গলা, ইউ গলার ব্লাউজ় বিয়েবাড়িতে বেশ মানানসই।’’
কলকাতার আর এক পোশাকশিল্পী অভিষেক দত্ত। তিনি বলছেন, ‘‘শীতের মরসুমে ফুল হাতা, কলার দেওয়া ব্লাউজ়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বিয়েবাড়িতে করসেটের উপর কলার দেওয়া সুদৃশ্য কারুকাজের জ্যাকেট বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। কেউ কেউ পিঠ খোলা গলাবন্ধ ব্লাউজ়ও পরতে চাইছেন। জমকালো শাড়ির সঙ্গে পাথরের কাজের এই ধরনের ব্লাউজ় বিয়েবাড়ির জন্য আদর্শ।’’
৪৫ পার করেছেন বলি নায়িকা রানি মুখোপাধ্যায়। বিভিন্ন সময়ে শাড়িতে ক্যামেরাবন্দি হয়েছেন রানি। তাঁকেও কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বুক পর্যন্ত কাটা ডিপ ভি, পানপাতার মতো নকশার ব্লাউজ়ে দেখা গিয়েছে। আবার চল্লিশোর্ধ্ব করিনা কপূরের গলাবন্ধ নকশাদার ব্লাউজ়ও নজর কেড়েছে বিভিন্ন সময়ে।
ব্লাউজ়ে বৈচিত্র
ব্লাউজ়ের পিঠের নকশাও এখন বেশ চর্চিত। কখনও শাড়িতে থাকা কোনও মোটিফের আদলে ব্লাউজ়ের পিঠে বা হাতে নকশা করা হয়, কখনও জরি বা সুতোর কাজ থাকে সেই নকশায়। যিনি খোলামেলা ব্লাউজ়ে স্বচ্ছন্দ নন, তিনি নকশাদার এয়ারহোস্টেস বা বোটনেকের ব্লাউজ়ও বেছে নিতে পারেন। ভারী কোনও শাড়ির ক্ষেত্রে সিল্কের নিউট্রাল রং বেছে নিয়ে তাতে নকশা করা হচ্ছে। বিয়েবাড়ির সাজপোশাকে তা বেশ মানানসই হয়। আবার একরঙা সুতি বা হ্যান্ডলুম শাড়ির সঙ্গে ঠাসা সুতোর কাজের বা প্রিন্টেড ব্লাউজ়ও বেশ ট্রেন্ডিং।
ফিরছে সাবেকিয়ানা!
এক সময়ে নকশা করা লেসের ব্লাউজ় পরার চল ছিল, ফিরছে সেই স্টাইলও। সুতোয় কুরুশের কাজ করে রকমারি লেস তৈরি করা হচ্ছে। সেগুলি জোড়া হচ্ছে কনুই পর্যন্ত হাতাওয়ালা ব্লাউজ়ে। তারই সঙ্গে ব্লাউজ়ের হাতা, পিঠে পার্শি, ক্রস স্টিচের কাজ।
জ্যাকেটের কারিকুরি
মরসুমের সঙ্গে ব্লাউজ়ের ধরনেও বদল এসেছে। পোশাকশিল্পী অভিষেক বলছেন, ‘‘শীতের মরসুমে ফুল হাতা, থ্রি কোয়ার্টার হাতার পাশাপাশি জ্যাকেট পরতে চাইছেন মহিলারা। চল্লিশোর্ধ্ব মহিলাদের তা বেশ মানাবে। লম্বা ঝুলের কারুকাজ করা জ্যাকেটের সঙ্গে শাড়ি টানটান করে প্লিট করে পরলে দেখতে ভাল লাগবে। আবার দিনের কোনও অনুষ্ঠানে লম্বা, খাটো স্রাগের ব্লাউজ়ের বদলে বেছে নিচ্ছেন অনেকেই।”
পোশাকশিল্পী অনুশ্রী এবং অভিষেক দু’জনেই গুরুত্ব দিচ্ছেন ব্লাউজ়ের মাপে। তাঁরা বার বার মনে করাচ্ছেন, ব্লাউজ যেন গায়ের মাপ মতো হয়। অনুশ্রীর কথায়, ‘‘অনেকের ধারণা, শরীরের মাপের চেয়ে ছোট ব্লাউজ় পরলে চেহারা ভারী দেখায় না। কেউ আবার গায়ের চেয়ে বড় মাপের ব্লাউজ় বেছে নেন। কিন্তু কোনওটি সঠিক নয়। চেহারা একটু ভারীর দিকে হলে ডিপ নেক বা গভীর গলার ব্লাউজ় বেশি মানাবে।’’ ফলে বয়স নিয়ে চিন্তায় পড়লে আগে ব্লাউজ়ের মাপে নজর দিতে হবে। বয়সের সঙ্গে ব্যক্তিত্বের ভার নিয়ে চলে সুন্দর দেখাতে হলে ব্লাউজ় বাছাই এ ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy