Advertisement
০৮ জানুয়ারি ২০২৫
15th Finance Commission

টাকা খরচে পিছিয়ে বঙ্গের আট জেলা, মার্চের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে গুরুত্ব নবান্নের, তালিকায় কারা

গত ২ জানুয়ারি নবান্ন সভাঘরে প্রশাসনিক বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকেই তিনি বলেছিলেন, কোনও প্রকল্প ফেলে রাখা যাবে না। যে কাজগুলি চলছে, তা এই অর্থবর্ষেই শেষ করতে হবে।

WB State Government gave importance to the expenditure of money allocated by the 15th Finance Commission

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

শোভন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:৫৮
Share: Save:

পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ৫,১৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল রাজ্যের জন্য। জেলাওয়াড়ি তার থেকে ভাগ করে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু চলতি অর্থবর্ষ (২০২৪-’২৫) শেষ হতে যখন আর তিন মাসও বাকি নেই, তখন দেখা যাচ্ছে রাজ্যের ৮টি জেলা সেই টাকা খরচে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। ৩১ মার্চের মধ্যে যাতে সেই টাকা খরচ করা যায়, সে ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে নবান্ন। নবান্ন সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত দফতরের মাধ্যমেই জেলাগুলিকে নির্মীয়মাণ প্রকল্প দ্রুত শেষ করার বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। নবান্ন হিসেব করে দেখেছে, এখনও পর্যন্ত প্রায় ২,০০০ কোটি টাকা খরচ হয়নি। ওই অর্থ ৩১ মার্চ অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার আগেই করে ফেলতে চায় নবান্ন।

যে জেলাগুলি এখনও খরচে অনেকটা পিছিয়ে, সেই তালিকায় রয়েছে দার্জিলিং, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, পুরুলিয়া এবং দুই ২৪ পরগনা। রাজ্যের সমস্ত জেলার মধ্যে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনা। কিন্তু বরাদ্দ হওয়া ৫৩২ কোটি টাকার মধ্যে ২৫২ কোটি টাকা এখনও খরচ করতে পারেনি জেলা প্রশাসন। মুর্শিদাবাদ জেলা পেয়েছিল ৪৯৬ কোটি টাকা। সেখানেও ২৩৭ কোটি খরচ বাকি। তবে পাশাপাশিই কিছু জেলার কাজে ‘সন্তোষজনক’ রিপোর্টও পেয়েছে নবান্ন। তার মধ্যে অন্যতম কোচবিহার এবং নদিয়া। এই দুই জেলায় বরাদ্দকৃত অর্থের প্রায় ৮০ শতাংশই খরচ হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর।

নতুন বছরের শুরুতেই গত ২ জানুয়ারি নবান্ন সভাঘরে প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকেই তিনি বলেছিলেন, কোনও প্রকল্প ফেলে রাখা যাবে না। যে কাজগুলি চলছে, তা এই অর্থবর্ষেই শেষ করতে হবে। তার পরেই নবান্নের নির্দেশ গিয়েছে জেলায় জেলায়। নির্মীয়মাণ প্রকল্প তিন মাসের মধ্যে শেষ করার বিষয়ে ‘চাপ’ দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ান্তরে কাজের অগ্রগতির বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতরে রিপোর্টও পাঠাতে হবে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিকে।

WB State Government gave importance to the expenditure of money allocated by the 15th Finance Commission

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

উল্লেখ্য, ১০০ দিনের কাজ এবং আবাস যোজনা-সহ একাধিক প্রকল্পে বাংলাকে কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ রাজ্য সরকার তথা শাসকদল তৃণমূলের। লোকসভা ভোটের আগেই রাজ্য নিজস্ব তহবিল থেকে ১০০ দিনের কাজের মজুরদের বকেয়া মজুরি মিটিয়েছিল। প্রায় ৫২ লক্ষ নাগরিকের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল সেই অর্থ। আবার লোকসভা ভোটে মমতার প্রতিশ্রুতি ছিল, ভোট মিটলে আবাস যোজনার টাকা যদি কেন্দ্র না দেয়, তা হলে রাজ্যই সেই টাকা দেবে। সেই মতো গত ডিসেম্বরেই বাংলার ১২ লক্ষ মানুষের অ্যাকাউন্টে আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা করে পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। এই প্রেক্ষাপটে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা যদি রাজ্য সরকার খরচ না করতে পারে, তা হলে সেটি নবান্নের ‘ব্যর্থতা’ হিসাবেই দেখাতে চাইবে বিরোধী দল। এক মন্ত্রীর কথায়, ‘‘টাকা খরচ করতে না পারলে বিজেপি বলবে, টাকা দেওয়া হলেও তা খরচ করতে পারে না রাজ্য! ফলে এই অর্থবর্ষে টাকা খরচ করতেই হবে। তার আরও একটা সুবিধা আছে। নির্দিষ্ট সময়ে বরাদ্দ অর্থ খরচ করতে পারলে আগামী বরাদ্দে বাড়তি দাবি করার সুযোগ থাকবে।’’

ইতিমধ্যেই ষোড়শ অর্থ কমিশন তাদের কাজ শুরু করেছে। দেশের সব রাজ্যে গিয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের শাসক ও বিরোধী দলগুলির সঙ্গে বৈঠকও করছে তারা। গত ৩ ডিসেম্বর ষোড়শ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানগড়িয়ার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল নবান্ন সভাঘরে বাংলার সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে রাজ্য সরকারের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ছাড়াও ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা তথা প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। ছিলেন রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সিপিএমের তরফে ছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং দলের পলিটব্যুরোর সদস্য রামচন্দ্র ডোম। কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসাবে গিয়েছিলেন সুখবিলাস বর্মা। বিজেপির তরফে বৈঠকে হাজির ছিলেন দুই বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ এবং দীপক বর্মণ। সেই বৈঠকে রাজ্যের পাওনার দাবিতে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের পাওনা মেটানোর দাবি একযোগে জানিয়েছিল বাম-কংগ্রেসও। ষোড়শ অর্থ কমিশন বরাদ্দ ঘোষণা করার আগে রাজ্য চাইছে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের যে টাকা পড়ে রয়েছে, তা সঠিক ভাবে কাজে লাগানো হোক। তা হলে ষোড়শ অর্থ কমিশনের কাছে তারা বরাদ্দ বাড়িয়ে দেওয়ার দাবি আরও জোরালো ভাবে করতে পারবে।

অন্য বিষয়গুলি:

WB State Government Fifteenth finance commission Finance commission Expenditure
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy