Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
অনাদি কেবিন

লকডাউন কাটিয়ে ফের চালু অকৃত্রিম অনাদি কেবিন

এই খাবার ঘরটি তৈরির পিছনে যাঁর হাতযশ, তিনি বলরাম জানা। তাঁর দুই সন্তান—অনাদি এবং আদি।

ঐতিহ্য: এ শহরে তাঁদের সেই আদি প্রতিষ্ঠান। পশ্চিম মেদিনীপুরের ধুইপাড়ায় বলরাম জানার তৈরি স্কুল। এর পাশেই হয়েছে নতুন ভবন। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য এবং নিজস্ব চিত্র

ঐতিহ্য: এ শহরে তাঁদের সেই আদি প্রতিষ্ঠান। পশ্চিম মেদিনীপুরের ধুইপাড়ায় বলরাম জানার তৈরি স্কুল। এর পাশেই হয়েছে নতুন ভবন। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য এবং নিজস্ব চিত্র

বিশ্বসিন্ধু দে
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ ০০:৫৮
Share: Save:

কলকাতার মোগলাই-ভক্তেরা তাঁর নাম জানেন না। তবে তাঁর প্রতিষ্ঠিত খাবার ঘরের নাম লোকের মুখে মুখে। সেই নাম হল ‘অনাদি কেবিন’। মোগলাই পরোটা-কষা মাংসের জন্য ধর্মতলা অঞ্চলের বিখ্যাত রেস্তরাঁ। করোনা-কালে লকডাউনের সময়ে চার মাস বন্ধ থাকার পরে ফের খুলেছে মোগলাই-ভক্তদের প্রিয় এই ঠেক।

এই খাবার ঘরটি তৈরির পিছনে যাঁর হাতযশ, তিনি বলরাম জানা। তাঁর দুই সন্তান—অনাদি এবং আদি। টাইফয়েডে অকালমৃত্যু হয়েছিল বড় ছেলে অনাদির। তাঁরই নামে এই রেস্তরাঁ।

ছেলেবেলার গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর মহকুমার মোহনপুরের ধুইপাড়ায় এই বলরামেরই আবার পরিচয় শিক্ষাব্রতী হিসেবে। এলাকায় তিনি স্মরণীয় স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য। ধুইপাড়া থেকেই তৎকালীন রাজধানী-শহর কলকাতায় যাত্রা করেছিলেন।

তথ্য বলছে, বাইনচরণ ও বিমলাসুন্দরীর সন্তান ছিলেন বলরাম। আর্থিক অনটনের কারণে বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি। এক সময়ে বেরিয়ে পড়েন ভাগ্যান্বেষণে। বলরামের ভাইপো, ৮০ বছরের অতুলচন্দ্র জানা বলছেন, ‘‘গ্রামে থাকতে কাকা মাঠে গরুও চরিয়েছেন। সেই সময়েই পাশের গ্রামের এক জনের সঙ্গে কলকাতায় চলে আসেন। তখন কাকার বয়স ১৫-১৬।’’

অতুলচন্দ্র আরও জানাচ্ছেন, হাওড়ায় এক জনের বাড়িতে প্রথম দিকে থাকতেন বলরাম। পরে একটি দোকানে থাকতেন। তার পরে নিজেই খাবারের দোকান করেন। প্রথমে ধর্মতলা অঞ্চলে একটু ভিতরের দিকে ঢাকাই পরোটার দোকান করেছিলেন বলরাম। পরে বর্তমান অনাদি কেবিনের জায়গায় উঠে আসে দোকানটি। যদিও এই দোকান তৈরি নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ বলেন, বলরাম প্রথম জীবনে ফুটপাতে বসে পোস্ত ইত্যাদি বিক্রি করতেন। কোনও ভাবে তাঁর সঙ্গে ব্রিটিশদের যোগাযোগ হয়। কারও মতে আবার, তিনি পরে লোহার ব্যবসায় মন দিয়েছিলেন। যদিও এ সবের তেমন প্রমাণ নেই।

ধীরে ধীরে নাম হতে শুরু করে দোকানের। কিন্তু গ্রামকে ভোলেননি বলরাম। নিজে বেশি দূর পড়াশোনা করতে না পারার যন্ত্রণা থেকেই গ্রামে স্কুল তৈরিতে উদ্যোগী হন। ‘অনাদি কেবিনের’ আয় থেকেই ১৯৪৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন মায়ের নামে স্কুল। সেখানেই পড়েছেন অতুলচন্দ্র। তিনি জানান, ধুইপাড়া গ্রামটি ওড়িশা সীমানায়। পড়াশোনার জন্য যেতে হত ওড়িশায়। তাই স্কুল হওয়ায় গ্রামের ছেলেমেয়েদের সুবিধাই হল। জানা পরিবারের আর এক সদস্য, গণেশ জানা এখন শিক্ষকতা করেন ধুইপাড়া স্কুলে।

এখনও বিদ্যালয়ের পুরনো ভবনটি রয়েছে। প্রধান শিক্ষক সাধনকুমার মিশ্র বলছেন, ‘‘বলরাম জানার তৈরি বাড়িটির পাশেই তৈরি হয়েছে স্কুলের নতুন ভবন। বর্তমানে চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন চলে। প্রথম থেকেই চালু ছিল হস্টেল। এক সময়ে এখানে চতুর্থ শ্রেণির সেন্টার পরীক্ষাও হত।’’

বলরামের ছোট ছেলে আদির দুই পুত্র, আশুতোষ ও ভবতোষ। এখন ‘অনাদি কেবিনের’ দায়িত্ব ভবতোষের কাঁধে। আশুতোষ চক্ষু চিকিৎসক। ভবতোষ বলেন, ‘‘দোকানটি ভাই চালায়। আমি যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে, তখন দাদু মারা যান। তাঁর সম্পর্কে বেশি কিছু জানি না। তবে শুনেছি, তিনি নিজের উদ্যমে এত কিছু করেছেন।’’

বলরাম জানার জন্ম সাল জানা যায় না। পরিবার সূত্রের দাবি, তাঁর মৃত্যু ১৯৬১ সালে। তবে সংশয় থাকার কারণে বিদ্যালয়ে বসানো তাঁর মূর্তিতে জন্ম ও মৃত্যু সাল লিখতে পারেননি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অন্য বিষয়গুলি:

অনাদি কেবিন Moghlai Paratha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy