নোট বাতিলের জেরে নগদে টান। বিয়েবাড়ির গয়না কিনতে তাই ভরসা ই-লেনদেন। ৮ নভেম্বরের পর থেকে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেক দোকানদারেরই। কিন্তু সেই অজুহাতে যে জালিয়াতিও সম্ভব, তা ভাবতে পারেননি বৌবাজারের সোনার দোকানের মালিক কিংবা মুচিপাড়া থানার দুঁদে অফিসারেরা!
অথচ এমন কায়দাতেই মঙ্গলবার বৌবাজারের একটি দোকান থেকে প্রায় ৪৯ গ্রাম সোনার গয়না হাতিয়ে নিয়েছে এক তরুণী। তা নিয়ে মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন দোকানের মালিক অভিজিৎ সরকার। এ দিকে পুলিশ জানায়, শুক্রবার ফের ওই তরুণীকে বৌবাজার এলাকাতেই ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয় তাকে। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম মধুরিমা দাস। বাড়ি ঢাকুরিয়ায়। পুলিশের সন্দেহ, শুধু অভিজিৎবাবু নন, আরও কয়েক জন ব্যবসায়ী ওই তরুণীর জালিয়াতির শিকার হয়েছেন।
লালবাজারের খবর, মঙ্গলবার অভিজিৎবাবুর দোকানে আসে ওই তরুণী। জানায়, নোট বাতিলের জেরে সপ্তাহে ২৪ হাজারের বেশি তোলা যাচ্ছে না। এ দিকে বিয়েবাড়িতে কেটারার, ডেকরেটর, আলোর টাকা মেটাতে হবে। তাই সোনার গয়নার দাম নেট ব্যাঙ্কিংয়ে মেটাবেন তিনি। অভিজিৎবাবু পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, তিনি নেটব্যাঙ্কিংয়ে সড়গড় নন। তাই ব্যাঙ্কের কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে বিষয়টি জেনে নেন এবং ওই তরুণীকে নিজের ব্যাঙ্কের নাম, শাখা, কারেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর, আইএফএসসি কোড দেন। প্রায় ১ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকার গয়না কেনার পরে তরুণী তাঁকে জানান, নেটব্যাঙ্কিং মারফত তিনি টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন এবং ব্যাঙ্কের একটি এসএমএসও পাঠান।
অভিজিৎবাবু পুলিশকে জানান, নেট ব্যাঙ্কিংয়ে টাকা পেতে কিছু সময় লাগে বলে জানিয়েছিল তরুণী। তাই সঙ্গে সঙ্গে টাকা না এলেও তিনি তাকে গয়না দেন। কিন্তু তার পরে বহুক্ষণ কেটে গেলেও টাকা মেলেনি। অভিজিৎবাবু যোগাযোগ করলে টাকা মিলবে বলে আশ্বাস দেয় তরুণী। সে জানায়, একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের বিবাদী বাগ শাখায় তার অ্যাকাউন্ট রয়েছে। বুধবার সে ফোন করে ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সঙ্গে অভিজিৎবাবুর কথা বলায়।
অভিজিৎবাবু পুলিশকে জানিয়েছেন, এক মহিলা ফোন ধরে নিজেকে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বলে পরিচয় দেন এবং টাকা মিলবে বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু বুধবার সারা দিন টাকা না মেলায় বৃহস্পতিবার অভিজিৎবাবু নিজে বিবাদী বাগে ওই ব্যাঙ্কে যান। সেখানে জানতে পারেন, ওই তরুণী এবং তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর ভুয়ো। এর পরেই মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই সোনা ব্যবসায়ী।
তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, বৌবাজার এলাকায় দোকান মালিকেরা নেটব্যাঙ্কিং সম্পর্কে বিশেষ অবহিত নন। তাই সেই মতোই ফাঁদ পাতে মধুরিমা। সাইবার বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, লেনদেনের পরে ব্যাঙ্ক থেকে যে ভাবে এসএমএস আসে, সে ভাবেই নিজে হয়তো মেসেজ লিখে অভিজিৎবাবুকে পাঠিয়েছিল তরুণী। কিংবা হয়তো এই চক্রে এমন কেউ রয়েছে যে দূরে বসে অনলাইন মেসেজ সাইট থেকে ব্যাঙ্কের নাম করে ভুয়ো মেসেজ পাঠিয়েছিল। লালবাজারের এক কর্তা জানান, ধৃত মহিলাকে বিশদে জেরা করা হচ্ছে। এই চক্রে বাকি কেউ জড়িত কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy