আনন্দ: ছুটির দুপুরে পথে। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
প্রত্যাশামতোই প্রাক্ বড়দিনের ভিড়কে ছাপিয়ে গেল বড়দিন। মঙ্গলবার রাতে যে লম্বা লাইন দেখা গিয়েছিল সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের বাইরে, বুধবার তা থিকথিকে ভিড়ের আকার নিল। যা আরও এক বার দেখিয়ে দিল, এ শহরের জীবনীশক্তি কোনও ব্যক্তিগত পরিচয়ে আটকে থাকে না। এখানে সব উৎসবে মানুষ মেতে ওঠেন ভালবেসে।
প্রতি বছরের মতো বুধবার বড়দিনের সকাল থেকেই লাল রঙের সান্তা টুপি, রকমারি ব্যান্ড মাথায় বাঁধা উৎসাহী জনতার ভিড় বাড়তে শুরু করে সেই সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল চত্বরে। এ দিন অবশ্য আর লাইন নয়। যত দূর চোখ যায় শুধুই থিকথিকে ভিড়। সেখান থেকেই একদল পাড়ি দিলেন আলিপুর চিড়িয়াখানার উদ্দেশে, অন্য দল ভিক্টোরিয়া অথবা গড়ের মাঠের দিকে। তারই মাঝে জায়গা ফাঁকা পেলেই বসে পড়ছিলেন ক্লান্ত মানুষ। সন্ধ্যার শুরুতে এসপ্লানেড, নিউ মার্কেট চত্বরে থেকে ভিড়টা ধীরে ধীরে পাতলা হতে থাকে। রাত যত বেড়েছে, ভিড় তত সরে গিয়েছিল পার্ক স্ট্রিটের দিকে। দু’মুখী জনতার চাপ সামলাতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ একাধিক বার সাময়িক সময়ের জন্য গেট বন্ধ করে রেখেছিলেন। যাত্রীদের রাশ ঠেকাতে এক সময়ে কিছু ক্ষণের জন্য ময়দান মেট্রো স্টেশনেও টিকিট বিক্রি ও প্রবেশপথের শাটার নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
উৎসব-নগরীর কেন্দ্রবিন্দু পার্ক স্ট্রিট নজর কেড়েছিল মঙ্গলবার থেকেই। রাত তখন সাড়ে ১২টা। আলোর ধারা নেমে আসছিল সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের গা বেয়ে। ভিতরে তত ক্ষণে ক্যারল শুরু হয়ে গিয়েছে। বাইরে হাজার দেড়েক মানুষের লম্বা লাইন। তাতেও উৎসাহে কোনও ভাটা পড়েনি সাধারণ মানুষের। সেই লাইন এড়িয়ে অসমের যোরহাটের বাসিন্দা নন্দিনী গোঁহাই ক্যাথিড্রালকে পিছনে রেখে নিজস্বী তুলতে তখন ব্যস্ত। বড়দিনের ছুটিতে কলকাতায় আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে এসেছেন তিনি। নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় তাঁর রাজ্য কিছু দিন আগে প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে। প্রতিবাদে মুখর হয়েছে এ শহরও। আপাতত সেই মুহূর্তগুলি পাশে রেখেই উৎসবের আমেজে মুগ্ধ তিনি।
আনন্দের মাঝেও অবশ্য ইতিউতি শোনা যাচ্ছিল নতুন নাগরিকত্ব আইন প্রসঙ্গ। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়া সাগ্নিক, অয়নাভ, কৌস্তুভদের ভিড়টা মুহূর্তগুলো মুঠোফোনে বন্দি করতে ব্যস্ত ছিল তখন। নয়া আইনের বিরোধিতা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি তাঁদের কথায় উঠে এল এ শহরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়টিও। আলোচনায় মশগুল সেই ছাত্রেরা হয়তো খেয়াল করলেন না ক্যাথিড্রালে বাইরেই তখন মোমবাতি বিক্রি করছিলেন যে দুই যুবক, তাঁদের নাম মহম্মদ সাগির এবং শেখ ইসমাইল। গির্জামুখী ভিড় কিন্তু জানতে চায়নি তাঁদের ধর্মীয় পরিচয়। মোমের আলোয় তখন একাকার সব ভেদাভেদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy