প্রতীকী ছবি।
ঝাঁ চকচকে, নতুন বিদেশি গাড়ি নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন শহরের এক ব্যবসায়ী। সেখানেই এক পরিচিত হঠাৎ প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি হঠাৎ সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি চড়ছেন?’’ প্রশ্ন শুনে খারাপ লাগলেও বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাননি নরেশ আগরওয়াল নামে ওই ব্যবসায়ী। তার পরেই এক দিন রাস্তায় ট্র্যাফিক সার্জেন্ট তাঁকে থামিয়ে জানান, গাড়ির অনেক টাকা জরিমানা বকেয়া আছে। একলপ্তে দিলে ছাড় মিলবে। নরেশবাবু জানান, তিনি নতুন গাড়ি কিনেছেন। কিন্তু ওই পুলিশকর্মী তাঁকে জানান, গাড়িটি অন্য এক ব্যক্তির নামে নথিভুক্ত করা ছিল।
এর পরেই নরেশবাবু খোঁজখবর করে জানতে পারেন, পার্ক সার্কাস কানেক্টরের কাছে একটি গাড়ির শো-রুম থেকে নতুন গাড়ির দাম নিয়ে তাঁকে ব্যবহৃত গাড়ি গছিয়ে দেওয়া হয়েছে। নানা জলঘোলার পরে নরেশবাবু পুরুলিয়ার আদালতে মামলা করেন। পুরুলিয়ায় তাঁর কারখানা ও অন্যান্য ব্যবসা রয়েছে। কলকাতার পাশপাশি সেখানেও থাকেন নরেশবাবু। আদালতের নির্দেশে পুলিশ বিচারকের কাছে প্রাথমিক তদন্তের যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে তাতেও বলা হয়েছে, নরেশবাবুর আগে গাড়িটি অন্য এক জনের নামে নথিভুক্ত ছিল। এর ভিত্তিতে আদালত প্রতারণার মামলা শুরু করেছে।
নরেশবাবু জানান, তাঁর একটি বিদেশি গাড়ি ছিল। তিনি সংস্থার নামে আরও একটি গাড়ি কিনবেন ঠিক করেন। সেই মতো ২০১৭ সালের মে মাসে গাড়ির ডিলারের কর্মীরা গিয়ে তাঁকে গাড়ির ছবি দেখান। প্রায় ৩ লক্ষ টাকা জমা দেওয়ার পাশাপাশি ২৯ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে গাড়ির মোট দাম ওই বছরের জুন মাসে জমা দেন নরেশবাবু। কিন্তু গাড়িটি হাতে পান ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। নরেশবাবু সে সময়ে রাজ্যের বাইরে ছিলেন। ফিরে এসে গাড়ি ব্যবহার করা শুরু করতেই জানতে পারেন, গাড়িটি আসলে পুরনো। নরেশবাবুর সংস্থার এক আধিকারিক গাড়ি কেনার বিষয়টি দেখছিলেন। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট ডিলার ও গাড়ি নির্মাতা সংস্থার ভারতীয় অফিসে ঘটনাটি জানানো হয়। প্রথমে নানা টালবাহানা করলেও পরে দোষ স্বীকার করে পুরো টাকা ফেরত দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে স্বীকৃত হন ডিলার। কিন্তু কথা রাখেননি ওই ডিলার। বারবার এমন হওয়ার পরে শেষমেশ আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নরেশবাবু।
এই ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে নাম রয়েছে পাঁচ জনের। গত ১০ জানুয়ারি তিন অভিযুক্ত আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন। বাকি দু’জন এখনও আদালতে হাজির হননি। নরেশবাবুর কৌঁসুলিরা জানান, আগামী শুনানির দিন ওই দু’জন আদালতে হাজির না হলে তাঁরা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আর্জি জানাবেন।
পুরুলিয়া পুলিশ আদালতে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, গাড়িটি ২০১৭ সালের মে মাসে বালিগঞ্জ এলাকার এক বাসিন্দার নামে নথিভুক্ত করানো হয়েছিল। সেটি নরেশবাবুর নামে নথিভুক্ত করা হয়েছে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। অর্থাৎ, নরেশবাবু গাড়ি হাতে পাওয়ার প্রায় দু’মাস পরে নথিতে বদল করা হয়েছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, ওই গাড়ির বিক্রি সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি বেলতলার পরিবহণ দফতর ‘খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না’ বলে জানিয়েছে। সরকারি দফতর থেকে সাম্প্রতিক নথি কী ভাবে ‘উধাও’ হয়ে গেল তা নিয়েও অভিযোগ করেছে নরেশবাবুর সংস্থা। তাদের দাবি, গাড়ি হস্তান্তরের সময়ে যে নথি দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি ভুয়ো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy