Advertisement
E-Paper

Lightning Strike: ‘টাকা দিয়ে সব ক্ষতির পূরণ হয় না’

দগদগে সেই ঘা শুকোনোর ফুরসত মেলেনি। ঘটনার সময়ে অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন সঙ্গীতা। সময়টা ছিল জুলাইয়ের মাঝামাঝি।

সঙ্গীতা মণ্ডল।

সঙ্গীতা মণ্ডল।

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৪৮
Share
Save

দু’দিন পরে, বৃহস্পতিবার দুপুরেই পাড়ায় ফিরেছিল বিদ্যুৎ সংযোগ। টিভি খুলতেই শোনেন উত্তর শহরতলিতে ফের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই শিশুর মৃত্যুসংবাদ। এর পর থেকেই কেমন চুপ করে গিয়েছেন পাটুলির বাসিন্দা সঙ্গীতা মণ্ডল। পরিচিত কেউ সংবাদের চ্যানেল খুলে বসলেই বিরক্ত হচ্ছেন তিনি। একটু একা থাকতে চাওয়ার আর্তি জানাচ্ছেন সকলকে।

মাস দুয়েক আগের ঘটনা। পাটুলিতে একই ভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল সঙ্গীতার স্বামী সুজিত মণ্ডলের। দগদগে সেই ঘা শুকোনোর ফুরসত মেলেনি। ঘটনার সময়ে অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন সঙ্গীতা। সময়টা ছিল জুলাইয়ের মাঝামাঝি। পাড়ায় বৃষ্টির জমা জলে বিকেলে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন সুজিত। কিন্তু ওই জলে যে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে রয়েছে, তা দেখতে পাননি। জলে পা দিতেই মাটিতে পড়ে যান তিনি। মৃত্যু হয় সদ্য বিবাহিত যুবকের।

সুজিত-সঙ্গীতার ছেলের নাম সৌমিক। ২৩ দিনের সেই পুত্রসন্তানকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করতে করতেই বলে ওঠেন সঙ্গীতা, ‘‘ও তো বাবাকে পেলই না। বাড়ির সামনে জল জমলেই মনে হয়, আবার বিপদ আসবে না তো! বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর খবর শুনলে ভয়ঙ্কর দিনের স্মৃতি ফিরে আসে। এখনও তো লড়াই করে যাচ্ছি সেই স্মৃতি নিয়ে। তাই ও সব দেখি না।’’ একটু থেমে ফের বলতে থাকেন, ‘‘দমদমের ঘটনায় কার দায়, সেই বিচার করতে পারব না। কিন্তু দুটো শিশু তো মারা গেল! যাঁর যায়, তাঁর সর্বস্ব যায়।’’ স্বামীর মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণের টাকা পেলেও এ নিয়ে ভাবিত নন সদ্য স্বামীহারা বধূ। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘টাকা দিয়ে কী হবে বলুন তো? ওই টাকা দিয়ে কি ছোট্ট ছেলেটার ভবিষ্যৎ গড়তে পারব? যে শিশু দুটো মারা গেল, তারা ফিরে আসবে টাকা দিলে? টাকা দিয়ে সব ক্ষতির পূরণ
হয় না।’’

গত কয়েক দিনের লাগাতার বৃষ্টিতে এলাকায় জল হাঁটু ছুঁয়েছিল। জল এখনও পুরো নামেনি। তবে এ দিন কিছুটা কমেছে। জমা জলের আতঙ্ক গোটা পাড়ায়। প্রয়োজন ছাড়া কেউ জলে নামতে চান না। বাসিন্দা বাবুসোনা সামন্ত বলেন, ‘‘সুজিতের মৃত্যুর পর থেকেই এলাকায় জল জমলে সবাই ভয়ে থাকি। জল দেখলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে জল বাড়ির মিটার বক্স পর্যন্ত প্রায় উঠে এসেছিল!’’

শহর ও শহরতলির পর পর বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা যে শুধু দিন কয়েকের কাঁটাছেড়া, বুঝে গিয়েছেন সন্তানহারা মা সবিতা মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বর্ষায় শুনতে পাই এমন মৃত্যু। সে সব শুনতে শুনতেই তো চলে গেল আমার সুজিত। একটু কাঁটা-ছেড়া হয়, দু’দিন পরে সবাই ভুলে যাবেন! কিন্তু আমার জীবনটা ছেলে হারানোর যন্ত্রণা নিয়েই কাটাতে হবে।’’

Lightning Death Patuli

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}