আল ফিরদাউস মিডিয়ায় প্রকাশ্যে এসেছে কাশ্মীরে জিহাদের ডাক। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
কাশ্মীর ‘আজাদ’ করতে বাংলা থেকে মুজাহিদদের যোগ দেওয়ার ডাক দিল আল কায়দা। শুক্রবার দুপুরে আল কায়দার নিজস্ব প্রচার মাধ্যম— আল ফিরদাউস মিডিয়ায় প্রকাশ্যে এসেছে কাশ্মীরে জিহাদের ডাক। ওই প্রচার সাইটে বলা হচ্ছে, ‘কাশ্মীরে চলছে মুক্তির লড়াই। সেই লড়াইয়ের বার্তা ছড়িয়ে দিন। এবং যোগ দিন সেই লড়াইয়ে।’
আল কায়দার এই প্রচার নজরে এসেছে গোয়েন্দাদেরও। তাঁরা বিষয়টি খুব হালকা ভাবে নিতে পারছেন না। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্তা বলেন, ‘‘আল কায়দা দীর্ঘ দিন ধরেই এ রাজ্যে এবং বাংলাদেশে জমি তৈরি করার চেষ্টা করছে। কাশ্মীরের সাম্প্রতিক অবস্থাকে সামনে রেখে তারা এখান থেকে সদস্য সংগ্রহ করে সংগঠন জোরদার করার চেষ্টা চালাচ্ছে।”
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারাও মনে করছেন, আল কায়দার এই প্রয়াস ঘিরে বাংলা-সহ গোটা দেশেই আশঙ্কার কারণ রয়েছে। কাশ্মীরের জিহাদি আন্দোলন দমনে যুক্ত এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আল কায়দার বর্তমান প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহারি গত মাসেই ‘আস সাহাব’ চ্যানেলের মাধ্যমে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে। সেই ভিডিয়োয় কাশ্মীরে ভারতীয় সেনা এবং আধাসেনার উপর বড়সড় হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে জাওয়াহিরি।” তাঁর মতে, এই প্রথম কাশ্মীর প্রসঙ্গে আল কায়দা প্রধানের কোনও মন্তব্য প্রকাশ্যে এল। সে কারণেই ভারতীয় গোয়েন্দাদের ধারণা, ভারত সরকার সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ এবং কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা খর্ব করার অনেক আগে থেকেই আল কায়দা কাশ্মীর নিয়ে ঘুঁটি সাজাচ্ছে। আর সেই পরিকল্পনা ভারত সরকারের কাশ্মীর নিয়ে সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের পর আরও গতি পেয়েছে।
আল কায়দার প্রচার মাধ্যমে এই ভাবেই কাশ্মীরে লড়াইয়ের ডাক দেওয়া হয়েছে — সংগৃহীত
শুক্রবার আল ফিরদাউস মিডিয়াতে ওই বার্তার সঙ্গেই কাশ্মীরে বিভিন্ন সময়ে চলা বিক্ষোভের ছবিও পোস্ট করা হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ওই ছবিগুলি সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দিতে। এক গোয়েন্দা কর্তার দাবি, ‘‘আল কায়দা কাশ্মীরের এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে এ রাজ্যে যুবকদের উস্কানি দিয়ে দলে টানতে চাইছে। এ রাজ্যে আল কায়দা এবং তাঁদের কয়েকটি শাখা সংগঠনের স্লিপার সেল সক্রিয়।” গোয়েন্দাদের দাবি, ভারত ও বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের আল কায়দাপন্থী শাখা জামাতুল মুজাহিদিন হিন্দ সক্রিয় ভাবে সহায়তা করছে আল কায়দাকে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পিছনে থাকা ওই সংগঠনের এ রাজ্যে এখনও বেশ কিছু মডিউল সক্রিয় ভাবে সদস্য সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, বাংলা ছাড়াও হিন্দি, ইংরেজি, ফারসি, উর্দু এবং আরবি ভাষাতেও কাশ্মীরে মুজাহিদদের লড়াই করার আহ্বান জানানো হয়েছে। অর্থাৎ বাংলার সঙ্গে সঙ্গে ভারত এবং ভারতের বাইরে থেকেও জিহাদিদের কাশ্মীরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে ওই জঙ্গি সংগঠন। তবে পশ্চিম এশিয়ার ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনগুলির কার্যকলাপের বিষয়ে ওয়াকিবহাল এক গোয়েন্দা কর্তা বলেন, ‘‘কাশ্মীর অনেকটাই উপলক্ষ। গোটা আফগানিস্তান জুড়ে আল কায়দার সঙ্গে আইএস-এর লড়াই চলছে। কয়েক সপ্তাহ আগেই কেরলের মল্লপুরমের বাসিন্দা মহসিন নামে এক যুবক আফগানিস্তানের খোরাসানে নিহত হয়েছে। সে আইএস-এ যোগ দিয়েছিল। যুদ্ধ করার জন্য আইএস এবং আল কায়দা দু’পক্ষেরই নতুন সদস্য দরকার।” তাই আল কায়দা নয়, একই ভাবে নতুন সদস্য জোগাড়ের চেষ্টা করছে আইএস-ও। কাশ্মীর আবেগ কাজে লাগিয়ে মুজাহিদ সংগ্রহে মরিয়া দুই কুখ্যাত আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন।
এ রাজ্যে জঙ্গি দমনের সঙ্গে যুক্ত কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এ ধরনের বার্তা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সাইবার টহলদারি বাহিনী নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়া এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলে নজরদারি করছে। একই সঙ্গে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের সব ক’টি শাখা সংগঠন যাতে সক্রিয় না হতে পারে তারও চেষ্টা চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুন: ফের বাসে বাসে রেষারেষি, গড়িয়াহাটে এ বার দু’কান ছিঁড়ল যাত্রীর, কাটল আঙুলও
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৪৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকতে পারে দক্ষিণ কলকাতার জীবনানন্দ সেতু
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy