মোহন ভাগবত। —ফাইল চিত্র।
নিশানায় কে?
গত সপ্তাহে পুণেয় মোহন ভাগবত মন্তব্য করেছিলেন, রামমন্দির নির্মাণ করলেই কেউ হিন্দু নেতা হয়ে যান না। সঙ্ঘপ্রধানের ওই বক্তব্যের পরেই প্রশ্ন উঠেছে, ভাগবত ওই কথা বলে আদতে কাকে নিশানা করতে চেয়েছেন? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী না যোগী আদিত্যনাথ? গেরুয়া শিবিরের মতে, যে ভাবে সম্ভল কাণ্ড নিয়ে বিতর্কের জল গড়িয়েছে, তাতে ওই মন্তব্য করে আসলে যোগী আদিত্যনাথের রাশ টানতে চেয়েছেন মোহন ভাগবত। যদিও আরএসএস সূত্রের বক্তব্য, একটি নির্দিষ্ট বাক্যের ভিত্তিতে নয়, সামগ্রিক প্রেক্ষিতে সঙ্ঘপ্রধানের বিবৃতির ব্যাখ্যা হওয়া উচিত। তিনি সে দিন নিজের বার্তায় আরএসএসকে প্রগতিশীল ও সকলকে নিয়ে চলতে পারে এমন এক সংগঠন হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছেন।
তবে সে দিনের ভাগবতের বক্তব্যে রামমন্দিরের কথা উঠে আসায় বেশ অস্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্ব। কেন না রামমন্দিরের আইনি ফয়সালা থেকে নির্মাণ এবং শেষে রামলালার মূর্তি প্রতিষ্ঠা— গোটাটির সঙ্গে যাঁর নাম জুড়ে রয়েছে তিনি হলেন নরেন্দ্র মোদী। ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, পুণের অনুষ্ঠানে ওই মন্তব্য করে আসলে কি মোদীকেই বার্তা দিলেন ভাগবত? রাজনীতিকদের একাংশের মতে, তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়া মোদীর নতুন করে প্রমাণ করার কিছু নেই। বরং সেই তাগিদ রয়েছে যোগী আদিত্যনাথের। তাঁর লক্ষ্য তৃতীয় বার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ২০২৯ সালে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়া। সেই লক্ষ্যেই তিনি নিজের কট্টর ভাবমূর্তিকে সামনে রেখে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে একত্রিত করতে তলে তলে তৎপর রয়েছেন।
বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, বর্তমানে কাশী-মথুরা ছাড়াও শুধু উত্তরপ্রদেশেই পঞ্চাশটি বিবাদিত স্থান নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। ব্যক্তি বিশেষ বা হিন্দু মহসভার মতো সংগঠন এ সব মামলার পিছনে থাকলেও পিছন থেকে যোগী এঁদের মদত দিচ্ছেন বলেই মনে করছেন দলের একাংশ। যোগীর মূল লক্ষ্যই হল, ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। যাতে ২০২৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দাবিকে আরএসএস কিংবা বিজেপি নেতৃত্ব উপেক্ষা করতে না পারেন। সূত্রের মতে, সেই কারণে পিছনে থেকে মদত দিয়ে মন্দির-মসজিদ বিতর্ক জিইয়ে রাখার কৌশল নিয়েছেন যোগী।
রামমন্দিরের পরে বিজেপির নীতিগত অবস্থান হল, দল আর কোনও মন্দির-মসজিদ বিতর্কে সরাসরি অংশ নেবে না। কোনও বিবাদিত কাঠামো নিয়ে আমজনতা যদি আন্দোলন করে, তা হলে জনতার তা করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু দল তাতে মাথা গলাবে না। কিন্তু বিজেপি সূত্র বলছে, কাশী-মুথরা, সম্ভলের মতো আন্দোলনকে পরোক্ষ ভাবে মদত দিয়ে চলেছেন যোগী। হিন্দু ভোট যাতে যোগীর পিছনে একজোট হয়, সেই লক্ষ্যে বিতর্ক জিইয়ে রাখার কৌশল নেওয়া হচ্ছে। যোগীর এই আগ্রাসী হিন্দু নীতি আদৌ পছন্দ নয় সঙ্ঘপ্রধানের। সঙ্ঘ যে নতুন করে মন্দির-মসজিদ বিতর্ক চায় না, তা ২০২২ সালে নাগপুরে আরএসএস কর্মীদের প্রশিক্ষণ শিবিরে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন ভাগবত। তিনি বলেছিলেন, ‘‘সব মসজিদে শিবলিঙ্গ খুঁজতে যাওয়ার কী প্রয়োজন রয়েছে?...রামমন্দির আন্দোলন শেষ। নতুন কোনও আন্দোলনকে নেতৃত্ব দেবে না আরএসএস।’’ দল যে কট্টর পথে চলা থেকে সরে আসতে চাইছে, সেই বার্তা দিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের শীর্ষ পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া
হয় প্রবীণ তোগড়িয়ার মতো হিন্দুত্ববাদী নেতাকে।
আগামী বছর আরএসএসের একশো বছর পূর্তি হতে চলেছে। রাজনীতিকদের একাংশের মতে, কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলের তকমা মুছে আরএসএসকে প্রগতিশীল তথা সকলকে নিয়ে চলতে সক্ষম এমন একটি দল হিসেবে প্রচার করতে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় ভাগবত। সেই কারণে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উপরে তিনি যেমন জোর দিয়েছেন, প্রগতিশীল মুসলিম নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন, তেমনই মহিলাদের আরও বেশি করে সমাজজীবনে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন ভাগবত। আরএসএস সূত্রের বক্তব্য, ধারাবাহিক ভাবে কট্টর হিন্দুত্বের চেয়ে আন্তঃধর্ম সমন্বয়ের উপরে জোর দিতে দেখা গিয়েছে ভাগবতকে। প্রয়োজনে যে কারণে তাঁর পূর্বসূরিদের নীতি থেকে সরে এসে নতুন পথে চলতে দেখা গিয়েছে সরসঙ্ঘচালককে। বিজেপির একাংশ মনে করছেন, ভাগবত জানেন, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ধর্মকে সামনে রেখে উন্নত দেশ গড়া সম্ভব নয়। সেই কারণেই যাঁরা মন্দির-মসজিদ করে হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী হতে চান, এমন নেতাদের নিজের বক্তব্যে বার্তা দিতে চেয়েছেন ভাগবত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy