প্রতিবাদী: বেকবাগানের একটি অতিথিশালায় বিলকিস ও তাঁর সঙ্গীরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
আগে কোনও দিন বিমানে চড়েননি তিনি। চোখে ভাল দেখেন না। রক্তচাপেরও সমস্যা রয়েছে। খাওয়া বলতে দিনে এক বার। তা-ও সামান্য। এ নিয়েই গত তিন দিনে শাহিন বাগের ‘দাদি’, বছর বিরাশির বিলকিস চষে ফেলেছেন পরপর তিনটি শহর! কেরল থেকে কলকাতার বিমানে ওঠার সময়ে সঙ্গীরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘অসুবিধা হবে না তো? এত ক্ষণ বসতে পারবেন?’’
মাথার ঘোমটা পরিপাটি করে টেনে নিয়ে ঝাঁঝিয়ে উঠে বৃদ্ধা বলেন, ‘‘গত ৭০ দিন ধরে তো শাহিন বাগেই বসে থাকলাম। বিমানে বসতে অসুবিধা কোথায়? ঠিক তো করেই নিয়েছিলাম, হয় মৃত্যুর পরে শাহিন বাগ থেকে উঠব, নয়তো দাবি পূরণ হওয়ার পরে।’’
স্বামী মারা গিয়েছেন ১১ বছর আগে। পাঁচ পুত্র ও পুত্রবধূ, ১৯ জন নাতি-নাতনির সংসার ছেড়ে গত আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে বিলকিসের ঘর শাহিন বাগ। এখন দেশের নানা প্রান্তে শুরু হওয়া সিএএ, এনআরসি, এনপিআর-বিরোধী আন্দোলনে উৎসাহ দিতে বেরিয়ে পড়েছেন তিনি। সঙ্গী কয়েক জন যুবক-যুবতী। বুধবার সেই সূত্রেই ‘দাদি’ পৌঁছেছেন কলকাতায়। আজ, শুক্রবার পার্ক সার্কাসের আন্দোলনস্থলে যাওয়ার কথা তাঁর। কমবয়সিদের সঙ্গে দৌড়ে পেরে উঠছেন? বৃদ্ধা বললেন, ‘‘চোখে একটু কম দেখি। তবে অসুবিধা হচ্ছে না। বরং স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, সরকারকে এই জনবিরোধী আইন পাল্টাতেই হচ্ছে। যেখানেই যাচ্ছি সকলকে বলছি, কখনও না কখনও সেই সকাল আসবে, যখন আমাদের দাবি পূর্ণ হবে। তত দিন সকলে এক হয়ে বসে থাকো।’’
এখন দিল্লির যা পরিস্থিতি, তাতে কি শাহিন বাগে বেশি দিন বসা যাবে?
বৃদ্ধার সঙ্গী, শাহিন বাগের আন্দোলনকারী সোনু ওয়ারসি, সৈয়দ জাওয়াদের দাবি, কিছু লোকের উস্কানিমূলক মন্তব্যে হিংসা ছড়াচ্ছে। তাঁরা কোন দলের, সকলেই জানেন। শাহিন বাগে প্রথম থেকেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছে। সোনুর কথায়, ‘‘সরকার চাইলে জোর করে শাহিন বাগ থেকে লোকজনকে সরিয়ে দিতেই পারে। কিন্তু সংবিধান মেনে সরানো কঠিন। বলা হচ্ছে, আমরা রাস্তায় বসে আছি। কিন্তু আমাদের তো পার্ক বা স্কুল নেই। তাই রাস্তাতেই বসেছি।’’
শোনা যাচ্ছিল, শাহিন বাগের আন্দোলনকারীরা নাকি সমঝোতা করতে চান...! কথা থামিয়ে বিলকিসের সঙ্গে আসা শামসাদ বিবি বললেন, ‘‘কত ভাবে যে আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা হয়েছে! তুমি ঘরে শুয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ করছ, আর আমরা ঠান্ডায় বসে আছি, রোদে পুড়ছি! আমাদের কি বসে থাকার শখ রয়েছে?’’ শামসাদকে চুপ করিয়ে ‘দাদি’র জবাব, ‘‘এত কথা কীসের! শাহিন বাগে গুলি চলেছে, ছেলেরা বোরখা পরে এসে ঝামেলা করেছে। কিন্তু আমরা কিছুরই পরোয়া করি না।’’
তিন দিনে তিনটে শহর চষে ফেলা বৃদ্ধার চোখে-মুখে ক্লান্তি নেই। তাঁর কথায় উৎসাহিত হয়ে সঙ্গী যুবকেরা দেখালেন বুকের টি-শার্ট। তাতে লেখা, ‘শহরে শহরে শাহিন বাগ!’ এক জন বললেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট ২৩ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছে। তত দিন প্রাণপণ আন্দোলন চলবে। তার পরে যা রায় দেবে, মেনে নেব। কিন্তু শাহিন বাগ তুলে দিলেও সারা দেশে এর প্রভাব থেকে যাবে। ৭০ দিনের আন্দোলন আগামী ৭০ বছর দেশের রাজনীতিতে দিশা দেখাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy