অদ্রিজা মুদি। ফাইল চিত্র।
আদালতের নির্দেশের পরে বছর ঘুরেছে। অভিযোগ, সরকারি উদাসীনতায় এখনও চিকিৎসা পায়নি মামলার আবেদনকারী, বিরল রোগে আক্রান্ত পাঁচ রোগী। অথচ, সেই নির্দেশের পরে ‘ন্যাশনাল রেয়ার ডিজ়িজ় পলিসি ২০২১’-এর প্রেক্ষিতে চিকিৎসার জন্য কমিটি গঠন করে এসএসকেএম। কিন্তু গত এক বছর ধরে সেই কমিটির ভূমিকা কী ছিল, প্রশ্ন তোলে রোগীর পরিবার। এর পরেই আদালত অবমাননার মামলা করা হয়।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি সেই মামলার শুনানির দিন আদালত জানায়, আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির আগে সরকারকে বিনামূল্যে ওই রোগীদের চিকিৎসা শুরু করতে হবে। নচেৎ কঠোর পদক্ষেপ করা হবে। এর পরেই নড়ে বসে স্বাস্থ্য ভবন। ওষুধ নিতে আসার কথা বলে রোগীদের পরিবারের কাছে এসএসকেএম থেকে ফোন এবং চিঠি যায়। যা পেয়ে খানিকটা আশ্বস্ত, তবে পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণে এখনও স্বস্তি পাচ্ছেন না অভিভাবকেরা।
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের বেঞ্চ ২০২০-র ১৮ ডিসেম্বর মামলার রায়ে জানিয়েছিল, অবিলম্বে এবং বিনামূল্যে পাঁচ অসুস্থ শিশুর চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এর পরেই এসএসকেএমের কয়েক জন বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসককে নিয়ে ২০২১-এর ৫ জানুয়ারি কমিটি তৈরি হয়। অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, এসএসকেএমের তরফে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছিল, ওই রায়ের প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ডিরেক্টর অব মেডিক্যাল এডুকেশন, ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার এক নির্দেশ জারি করেছেন। যেখানে বলা হয়েছে, মামলার আবেদনকারীদের অন্তর্বর্তী চিকিৎসা বিনামূল্যে শুরু করতে হবে। আরও বলা হয়, ২০২১-এর ৮ ফেব্রুয়ারি রোগীদের এসএসকেএমে নিয়ে আসতে।
সূত্রের খবর, এসএসকেএমের অ্যাকাডেমিক ভবনের পাঁচতলায় সেই বৈঠকে রোগীদের দেখে অফিস সংক্রান্ত কিছু কাজ করেছিল কমিটি। ফের ১১ সেপ্টেম্বর কমিটির সামনে ওজন মাপা হয় শিশুদের। বিরল রোগের চিকিৎসায় যে এনজ়াইম থেরাপি দেওয়া হয়, তার জন্য ওজন মাপা জরুরি। তবে এর পরে কমিটি চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও পদক্ষেপ করেনি বলেই অভিযোগ দুই রোগীর বাবা ইমতিয়াজ় ঘোষি ও জয়ন্ত মুদির।
মূল মামলাকারী জয়ন্ত মুদি পশ্চিম বর্ধমানের নিয়ামতপুরের বাসিন্দা। ঘি-আচারের বিক্রেতা জয়ন্তের দুই মেয়ের মধ্যে ছোট অদ্রিজা। বছর সাতেকের মেয়েটি বিরল রোগ ‘গসার টাইপ ওয়ান’-এ আক্রান্ত। তিন বছর বয়সে একটানা জ্বরে ভোগা মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ধরা পড়ে এই রোগ। পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা ইমতিয়াজ় ভাগচাষি। তাঁর ছেলে ইমরান ‘এমপিএস টাইপ ওয়ান’-এ আক্রান্ত। ‘‘এঁরা প্রত্যেকেই অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের। বিচারের জন্য কলকাতায় আসার আর্থিক ও মানসিক সামর্থ্যটুকুও নেই পরিবারগুলির। অথচ, চিকিৎসার অনেকটা সময় নষ্ট হল। অদ্রিজার অবস্থা এখন সব থেকে খারাপ।’’— বলছিলেন তাঁদের আইনজীবী শ্রীময়ী মুখোপাধ্যায়।
অন্য আইনজীবী অপূর্বকুমার দত্ত বললেন, ‘‘কোর্টের নির্দেশ না মানায় আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়েছিল। শুনানিতে বলা হয়েছে, ১৭ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির আগে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। না করলে আদালত অবমাননার নোটিস জারি করা হবে।’’
গত অক্টোবর থেকে অদ্রিজার নাভির পাশ দিয়ে অগ্ন্যুৎপাতের মতো বেরিয়ে আসছিল রক্ত। চিকিৎসকেরা জানান, এই বিরল রোগে স্প্লিন, অর্থাৎ প্লীহা বড় হয়ে যায়। অদ্রিজার ১৫ কিলোগ্রাম ওজনের শরীরে প্লীহার দৈর্ঘ্য ২২ সেন্টিমিটার! অগত্যা আড়াই কেজির প্লীহা বাদ দিতে হয়েছে। কয়েক জনের আর্থিক সাহায্যে দিনকয়েক আগে ভেলোরে সেই অস্ত্রোপচার হয়।
স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলছেন, ‘‘এই মামলার কথা জানি। কোর্টকে বক্তব্য জানিয়েছিলাম। কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তাকে সম্মান দিয়ে পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy