মুদিয়ালির বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে রিমঝিম দাশগুপ্ত। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
লালবাজারে ডেকে নিয়ে গিয়ে পুলিশের উপর আস্থা রাখতে অনুরোধ করেছেন কমিশনার নিজে। চেয়ে নিয়েছেন কিছুটা সময়ও। পুলিশে আস্থা রেখে সেই সময় দিতে রাজি হলেও সানি পার্কে মৃত কিশোর আবেশের মা রিমঝিম দাশগুপ্তের প্রশ্ন, ‘‘সময় তো অনেকটা ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তথ্যপ্রমাণগুলো ঘেঁটে দেখা হয়নি এখনও। শুনেছি রক্তও ধুয়ে দেওয়া হয়েছে। তদন্তের কি দেরি হয়ে গেল না?’’
আবেশের মৃত্যুর দু’দিন পরেও তদন্তে তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই তাই অনেক প্রশ্ন উঠছে। সোমবার কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড বিভাগের তরফে লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয় রিমঝিমদেবীকে। পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার এবং গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গের সঙ্গে কথার পরে রিমঝিমদেবী বলেন, ‘‘আবেশের মৃত্যু ঘিরে এখনও অনেক ধোঁয়াশা। অথচ এই প্রযুক্তির যুগে সে সব জট কাটাতে এত সময় লাগার কথা নয়।’’
রিমঝিমদেবী জানান, সে দিনের ঘটনাস্থলে থাকা ১৭ জনের মধ্যে তাঁর ছেলে আর অন্য এক জনের ছাড়া কারও মোবাইল পুলিশ এখনও নেয়নি। কারও অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে দেখেনি, কললিস্ট চেক করেনি। তাঁর ছেলের ফোন এখনও খোলাই হয়নি।’’
রিমঝিমদেবীর আশঙ্কা, যত সময় যাবে, এই তথ্যগুলো লোপাট হওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়বে। এমন আশঙ্কার কারণ কী? আবেশের মা বলছেন, ‘‘ওই দিন (শনিবার) সানি পার্কের পার্টিতে উপস্থিত সবাইকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি বলে জেনেছি। ওঁদের কারও বয়ান আমাদের জানানো হয়নি। অথচ সে দিনের পার্টির সব ছেলেমেয়ে কলকাতাতেই আছে, প্রকাশ্যে ঘুরে বাড়াচ্ছে।’’ তাঁর আক্ষেপ, ওই ছেলেমেয়েদের অনেকে প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান। সব বাবা-মা তাঁদের সন্তানকে বাঁচাতে চাইবেন এটা স্বাভাবিক। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমার ছেলেটা কি তা হলে সুবিচার পাবে না!’’
পুলিশ কমিশনারকে কী বলেছেন তিনি? লালবাজার থেকে বেরিয়ে রিমঝিমদেবী বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে।’’ তবে কার উপরে সন্দেহ, তার নাম বলেননি তিনি। তবে আবেশের এক ছোটবেলার বন্ধুর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনাই যদি হবে, তা হলে ওই বন্ধু চলে গেল কেন ঘটনাস্থল ছেড়ে?’’ ওই বন্ধুর নাম কেন বলছেন না? রিমঝিমদেবী বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে লালবাজার থেকে কারও নাম বলতে বারণ করা হয়েছে আমাদের।’’ যে বন্ধুর দিকে আঙুল উঠেছে, তার বাবার পাল্টা দাবি, ঘটনার পর থেকে তাঁর ছেলেকে ডেকে বেশ কয়েক বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। পুলিশকে সব রকম সহযোগিতা করছে তাঁর ছেলে।’’
পুলিশের কয়েকটি মহল আবেশ-মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলে দাবি করলেও তা মানছেন না আত্মীয়েরা। রিমঝিমদেবীর মা কৃষ্ণা পাল এ দিন বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলে পৌঁছে শনিবার আমরা দেখেছি দেওয়ালের ওপর পর্যন্ত ছিটকে লেগেছে রক্ত। দুর্ঘটনাবশত আবেশ যদি পড়েই গিয়ে থাকে বোতল নিয়ে, তা হলে অত দূর রক্ত ছিটকে গিয়েছে কী করে? কী করেই বা গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ভেঙে গিয়েছে বোতলটা?’’ লালবাজার অবশ্য এর উত্তর দেয়নি আবেশের পরিবারকে।
সোমবারই আবেশের মায়ের সঙ্গে দেখা করেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করতে বলেছেন সিপি-কে। এ দিন সেই বার্তাই তিনি দিতে গিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy