Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

ষাঁড় পুষে পাড়ার রোষে দর্জিপাড়ার অরিজিৎ

আশপাশের সকলের আপত্তিকে তোয়াক্কা না করেই বাড়ির বাইরে বেঁধে রেখেছিলেন মাস ছয়েকের ষাঁড়টিকে। একটি আবাসনের সিঁড়ির পাশে খালি জায়গায় রাতে তার থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন ঘণ্টা।

 স্নেহ: ঘণ্টার সঙ্গে অরিজিৎ দাস। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

স্নেহ: ঘণ্টার সঙ্গে অরিজিৎ দাস। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০১:১৯
Share: Save:

ইনি গোমাতা নন। ইনি নন্দীকেশ্বর। আর সেই নন্দীকেশ্বরকে নিয়েই আপাতত মাথায় হাত পড়েছে দর্জিপাড়ার বাসিন্দা অরিজিৎ দাসের! কারণ তাঁর পড়শিরা চান না, শিবের এই বাহন পাড়ার মধ্যে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াক। তাতে নাকি এলাকা নোংরা হচ্ছে!

আর পড়শিদের এ হেন চাপের মুখে পড়েই আপাতত নিজের পোষা ষাঁড়ের বাচ্চাটিকে বন দফতরের হাতে তুলে দিতে চাইছেন অরিজিৎ। তিনি জানান, বছর দেড়েক আগে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ লাগোয়া দর্জিপাড়ার রাস্তায় বসে ধুঁকছিল ছোট্ট ষাঁড়টি। রুগ্ণ চেহারা। হাঁটতে তো পারছিলই না। বসেও কেমন নেতিয়ে পড়েছিল। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে ষাঁড়টিকে দেখে কষ্ট হয়েছিল অরিজিতের। পাছে বড় রাস্তায় চলে গিয়ে কোনও গাড়ির ধাক্কায় মারা পড়ে, তাই ষাঁড়টিকে বাড়ির সামনে এনে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু পরের দিন সকাল হতেই শুরু হল এলাকার লোকজন, এমনকি খোদ বাড়ির লোকজনের আপত্তি। তাঁদের বক্তব্য, পাড়ায় ষাঁড়ের বাচ্চা এনে রাখলে এলাকা নোংরা হবে। কেউ ষাঁড়টিকে রাস্তায় ছেড়ে আসার কথা বললেন। কেউ পরামর্শ দিলেন, সেটিকে কোনও খাটালে রেখে আসা হোক।

কিন্তু রুগ্ণ প্রাণীটিকে কোনও মতেই ছাড়তে চাননি ওই যুবক। আশপাশের সকলের আপত্তিকে তোয়াক্কা না করেই বাড়ির বাইরে বেঁধে রেখেছিলেন মাস ছয়েকের ষাঁড়টিকে। একটি আবাসনের সিঁড়ির পাশে খালি জায়গায় রাতে তার থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন ঘণ্টা। এর পরে আদরের পোষ্যটিকে খাওয়ানো থেকে শুরু করে সাবান মাখিয়ে স্নান করানো— কাজকর্মের ফাঁকে সবই করতে শুরু করেন তিনি। এমনকি, অরিজিতের সঙ্গে থাকতে থাকতে ঘণ্টাও তাঁর পছন্দের খাওয়াদাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। চকলেট, চিপস, সন্দেশ, কোল্ড ড্রিঙ্ক— কিছুই বাদ দেয় না সে! খড়-ভুসির পাশাপাশি এ সবও দেদার খায়।

অরিজিতের জেদের কাছে হার মেনে এক সময়ে তাঁর বাড়ির লোকজনও ঘণ্টাকে পছন্দ করতে শুরু করেন। তাঁদের সেই ভালবাসা ফিরিয়ে দিয়েছে ঘণ্টাও। অরিজিৎ বলেন, ‘‘ঠাকুরমাকে খুব ভালবাসত। কয়েক মাস আগে ঠাকুরমা মারা যেতে ঘণ্টা কেমন করে যেন বুঝে গিয়েছিল। পাঁচ দিন খায়নি!’’

এর পরে কেটে গিয়েছে কয়েক মাস। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আকারে বেড়েছে ঘণ্টা। সকাল হলে তাকে আবাসনের বাইরে বেঁধে রাখেন অরিজিৎ। সন্ধ্যার পরে সিঁড়ির নীচের ছোট্ট জায়গায় তুলে দেওয়া হয় তাকে। ঘণ্টার মল-মূত্রে কারও যাতে অসুবিধা না হয়, তার জন্য দু’বেলা নিজের হাতে সাফাই করেন অরিজিৎ। কিন্তু শহরের আবাসনে পোষ্য হিসেবে ঘণ্টা বেমানান। তাই চেহারায় বড় হতেই অরিজিৎ বুঝে গিয়েছেন, ঘণ্টাকে আর রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু বিক্রিও করবেন না। এমন কাউকেও দেবেন না, যিনি পরে ঘণ্টাকে বিক্রি করে দিতে পারেন অন্য উদ্দেশ্যে। অরিজিৎ তাই চান, বন দফতর ঘণ্টাকে নিয়ে যাক।

অন্য বিষয়গুলি:

Bull Forest Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy