Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Death

ছেলের মৃত্যুতে খুশির ইদ বদলেছে বিষাদে

গত ৪ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তপসিয়া রোডের বাড়ি থেকে কাজে যাওয়ার নাম করে বেরিয়েছিলেন বছর বাইশের আলতামাস ইরফান। বিকেলে পরিবারের সদস্যেরা তাঁর গঙ্গায় ডুবে যাওয়ার খবর পান।

death

—প্রতীকী ছবি।

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৫১
Share: Save:

গোটা পাড়ায় খুশির ইদ। তবে, তার রেশ এসে পৌঁছয়নি তপসিয়া রোডের তেতলার ছোট্ট ঘরটায়। এলাকার আর পাঁচটা বাড়ির মতো সেখানে ইদের পরিচিত ব্যস্ততা নেই। বরং, ভিতর থেকে মাঝেমধ্যেই ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের দু’-এক জন করে সেই ঘরের সামনে ভিড় জমাচ্ছেন। ইদের মাত্র কয়েক দিন আগে ওই বাড়ির ছেলের অকস্মাৎ মৃত্যু কোনও ভাবেই মানতে পারছেন না কেউ। মৃত যুবকের বাবা মহম্মদ ইরফান বলছেন, ‘‘বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়েও হাসি হাসি মুখে বলে গেল, বিকেলে ফিরবে। ইদের কেনাকাটাও করতে যাবে। কিন্তু তার পরে তো সব হিসাব উল্টেপাল্টে গেল।’’

গত ৪ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তপসিয়া রোডের বাড়ি থেকে কাজে যাওয়ার নাম করে বেরিয়েছিলেন বছর বাইশের আলতামাস ইরফান। বিকেলে পরিবারের সদস্যেরা তাঁর গঙ্গায় ডুবে যাওয়ার খবর পান। আলতামাসের বাবা বলেন, ‘‘ফোনে এক জন খবর দেন, ছেলে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়েছিলাম মিলেনিয়াম পার্কের কাছে গঙ্গার ঘাটে। কিন্তু সে দিন কোনও খোঁজই পাইনি।’’ যদিও কাজের জায়গা থেকে আলতামাস কেন গঙ্গার ধারে গেলেন, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও নেই তাঁর পরিবারের কাছে। ইরফান বলেন, ‘‘স্থানীয় লোকজন বলেছিলেন, এক তরুণীর সঙ্গে তর্কাতর্কি করার সময়ে আচমকা ছেলে জলে ঝাঁপ দেয়। কিন্তু ওই তরুণী কে, তা আমি জানি না।’’

ভাটার টানে গঙ্গায় ঝাঁপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে গিয়েছিলেন ওই যুবক। উত্তর বন্দর থানা, কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী তল্লাশি চালিয়েও প্রথমে তাঁর কোনও সন্ধান পায়নি। শেষে তিন দিন পরে বজবজ থেকে আলতামাসের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন ময়না তদন্তের পরে দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে।

তপসিয়া রোডে বাবা-মা, ভাই-বোনের সঙ্গে থাকতেন ওই যুবক। অন্দরসজ্জার কাজ করতেন। বাবা ইরফান কর্মসূত্রে থাকেন সৌদি আরবে। মাস তিনেক আগে তিনি ফিরেছেন। ইদের ছুটির কাটিয়ে আবার আরবে ফেরার কথা ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘ইদের দিকে সারা বছর তাকিয়ে থাকি। এই দিনটা একসঙ্গে সবাই কাটাব বলে এ বার এত দিন থেকে যাওয়া। ছেলে কত পরিকল্পনা করেছিল! ইদের আগেই সব শেষ।’’

বৃহস্পতিবার পড়শিদের সঙ্গে ইদের নমাজে অংশ নিয়েছিলেন ইরফান। ছিলেন আলতামাসের ভাই-দাদারাও। তবে বাড়িতে ইদ উপলক্ষে বিশেষ কোনও আয়োজন হয়নি। হয়নি কেনাকাটাও। ছেলের দেহ উদ্ধারের দিন চারেক পরেও এখনও অঝোরে কেঁদে চলেছেন মা ফারজানা খাতুন। ইদের সকালে আত্মীয়স্বজনেরা বাড়ির সামনে ভিড় জমালে সন্তানহারা মায়ের কান্নার বেগ বেড়েছে। মাঝেমধ্যে জ্ঞান হারাচ্ছেন। ওই বাড়ির নীচে ভিড় করা স্থানীয়দের এক জন আরসাদুর রহমান বললেন, ‘‘কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল! এই শোক কি দু’-এক দিনে সামলে ওঠা যায়?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death Tapsia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE