বাঁচাতে গেলে প্রহৃত হন ওই পড়ুয়ার বাবা-মা এবং দাদাও। প্রতীকী ছবি।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) না করলে কলেজে পড়া যাবে না। অভিযোগ, এমনই নিদান দেওয়া হয়েছিল সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজের এক পড়ুয়াকে। তা মানতে না চাওয়ায় প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়াকে মারধর এবং র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। যদিও ওই পড়ুয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ, তিনি কলেজের এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করছিলেন, তাই তাঁকে সাবধান করা হয়েছিল। পুলিশ এবং কলেজ কর্তৃপক্ষকে মারধর এবং র্যাগিংয়ের অভিযোগ জানিয়েছেন অভিযোগকারী পড়ুয়া। এর পরেই কলেজে ডেকে এনে তাঁকে মারধর করা হয় বলে দাবি। বাঁচাতে গেলে প্রহৃত হন তাঁর বাবা-মা এবং দাদাও।
বুধবার ঘটনার সময়ে ওই কলেজের অন্য ঘরে পরিচালন সমিতির বৈঠকে ছিলেন সমিতির সভাপতি তথা বজবজের তৃণমূল বিধায়ক অশোক দেব। অভিযোগ, তিনি কলেজ থেকে বেরিয়ে গেলে ফের রাস্তায় তাঁদের মারা হয়। জ্ঞান হারান ছাত্রের বাবা। তাঁকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কসবা থানায় এফআইআর দায়ের করে আক্রান্ত ছাত্রের পরিবার।
এই ঘটনা বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে আসায় অভিযুক্তদের তরফেও কসবা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। রাত পর্যন্ত পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করেনি। কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি অশোক দেব র্যাগিংয়ের কথা অস্বীকার করলেও বুধবার কলেজে যে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা মেনে নিয়েছেন। ঘটনাটি নিয়ে দায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়েছে সহ-অধ্যক্ষা নয়না চট্টোপাধ্যায় এবং পরিচালন সমিতির সভাপতির মধ্যে। অশোকের জন্য কাজ করতে পারছেন না, এমন অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন নয়না। টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। কলেজে প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’’
জানা গিয়েছে, আক্রান্ত ছাত্রের বাবা কলকাতা হাই কোর্টের কর্মী। তাঁর দাদা হাই কোর্টের আইনজীবী। বছর উনিশের ওই ছাত্র চলতি বছরেই সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজে ভর্তি হয়েছেন। ঘটনার সূত্রপাত গত শুক্রবার। ছাত্রের বাবার দাবি, ওই দিন তাঁর ছেলেকে কলেজের ছাত্র সংসদের ঘরে বর্তমান এবং প্রাক্তন কয়েক জন পড়ুয়া মারধর ও হেনস্থা করেন। পড়ুয়া তাঁর দাদার সঙ্গে কথা বলে কসবা থানায় জেনারেল ডায়েরি করেন। পড়ুয়ার বাবা জানান, পরদিন কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তাঁরা। একই অভিযোগপত্র কসবা থানা ও মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতেও জমা দেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এর পরেই কলেজ থেকে মেল পাঠিয়ে পরিচালন সমিতির বৈঠকে ডাকা হয়। বুধবার সেই বৈঠকে গিয়েই হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে।’’
অভিযোগকারী ছাত্রের দাবি, ‘‘কেন তাঁরা কলেজে ঢুকেছেন, এই বলে দেবলীনা দাস নামে এক তরুণী ও অন্যেরা চোটপাট শুরু করেন।’’ অভিযোগকারী ছাত্রকে কলেজের চাতালে টেনে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, বাধা দিলে আক্রান্ত হন ছাত্রের বাবা, দাদা এবং মা। কেড়ে নেওয়া হয় ওই ছাত্রের বাবা এবং দাদার মোবাইল ফোনও। ছাত্রের বাবা বলেন, ‘‘আতঙ্কিত হয়ে জোর করে পরিচালন সমিতির বৈঠকের ঘরে ঢুকে পড়ি। সমিতির সভাপতি অশোক দেব দেবলীনা নামে মেয়েটিকে ডেকে বলেন, এই ছাত্রকে যেন আর কিছু করা না হয়। কিন্তু তিনি বেরিয়ে যেতেই কলেজের বাইরে আমাদের ঘিরে মারধর করা হয়।’’
সহ-অধ্যক্ষা নয়না বললেন, ‘‘ওই ছাত্রের সমস্যা পরিচালন সমিতিতে বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সভাপতি অশোকবাবু তাঁর সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপিয়ে দেন। সমিতির বৈঠকে যদি সত্যি বলার জায়গা না দেওয়া হয়, তবে এই পদে থাকতে চাই না।’’ পরিচালন সমিতির সভাপতির দাবি, ‘‘দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে হাত মিলিয়ে দিয়েছিলাম, যাতে এমন না হয়। র্যাগিং হয়েছে বলে জানি না। বাইরে কে কী করেছেন, বলতে পারব না।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘ভাইস প্রিন্সিপাল একতরফা বলে গেলে তো হবে না! তিনি পদত্যাগ করতে চাইলে করবেন!’’
কলেজের টিএমসিপি ইউনিটের সভানেত্রী দেবলীনা দাস বলেন, ‘‘যে ছাত্র এত অভিযোগ করছেন, তিনিই এক সিনিয়র দিদিকে কয়েক দিন ধরে বিরক্ত করছেন। তাই তাঁকে সাবধান করা হয়েছিল।’’ দেবলীনার দাবি, তাঁরা কসবা থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার। কেন আগে লিখিত অভিযোগ জানাননি? সেই উত্তর মেলেনি। ছাত্রের বাবা, ছেলের বিরুদ্ধে তোলা এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy